একসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮৫ কর্মকর্তার বদলি
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার গণ বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এরপর ড. মোহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আর এই সরকার গঠনের পর থেকেই বিভিন্ন সেক্টরে রিফর্ম শুরু হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক তিন বছরের বেশি সময় একই বিভাগে দায়িত্বে থাকা ২২ জন অতিরিক্ত পরিচালক (সাবেক উপমহাব্যবস্থাপক) পর্যায়ের কর্মকর্তাকে বদলি করেছে। একই সঙ্গে আরও ৬৩ জন যুগ্ম পরিচালকের দপ্তর পরিবর্তন করে দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে ৮৫ কর্মকর্তাকে একসঙ্গে বদলি করা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিউম্যান রিসোর্সেস ডিপার্টমেন্ট-১ পৃথক দুটি অভ্যন্তরীণ চিঠিতে এসব কর্মকর্তাদের বিভিন্ন বিভাগ ও অফিসে বদলি করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, এতদিন বদলি নীতিমালা মানা হয়নি। বছরের পর বছর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা একই বিভাগে বহাল থাকছেন। একই সঙ্গে দুটি বিভাগেও দায়িত্ব পালন করছেন কোনো কোনো কর্মকর্তা। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মধ্যে এক ধরনের শিথিলতা তৈরি হয়েছে।
তবে নতুন গভর্নর এসেই তিন বছরের বেশি সময় ধরে যারা একই বিভাগে দায়িত্বে রয়েছেন, তাদের বদলি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পর্যায়ক্রমে বাকিদেরও বদলি করা হবে।
জানা যায়, ফিন্যান্সিয়াল সেক্টর সাপোর্ট অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যানিং ডিপার্টমেন্টের ফিরোজ মাহমুদ ইসলামকে হিউম্যান রিসোর্সেস ডিপার্টমেন্ট-১-এ বদলি করা হয়। ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের (ডিভিশন-২) রাশিদা খানমকে ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্টে (ডিভিশন-১), ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্টের (ডিভিশন-১) কাজী শৈবাল সিদ্দিকীকে ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ (ডিভিশন-২), অ্যাকাউন্ট অ্যান্ড বাজেটিং ডিপার্টমেন্টের (ডিভিশন-১) মোহাম্মদ আবদুল হাইকে ব্যাংকিং পরিদর্শন বিভাগ-২, ডেট ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্টের আনেয়ার হোসেনকে ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্টে (ডিভিশন-১) বদলি করা হয়।
বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) সৈয়দ কামরুল ইসলাম, জোবায়দা আফরোজ এবং মো. মাসুদ রানাকে যথাক্রমে ডেট ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্ট, সাসটেইনেবল ফিন্যান্স ডিপার্টমেন্ট এবং বাংলাদেশ ব্যাংক ট্রেনিং একাডেমিতে বদলি করা হয়।
এ ছাড়া ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগ-২-এর মোহাম্মদ আরফান আলীকে অ্যাকাউন্ট অ্যান্ড বাজেটিং ডিপার্টমেন্টে (ডিভিশন-১), কমন সার্ভিসেস ডিপার্টমেন্ট-১-এর মো. তারিকুল ইসলামকে ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগ-৭, বাংলাদেশ ব্যাংক ট্রেনিং একাডেমির আমাতুর রাব ও তাহমিদা জামানকে যথাক্রমে ফিন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি ডিপার্টমেন্ট ও ডেট ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্টে, হিউম্যান রিসোর্সেস ডিপার্টমেন্ট-২-এর হাসনে আরা বেগমকে সচিব বিভাগ, পেমেন্ট সিস্টেমস ডিপার্টমেন্টের (ডিভিশন-১) শাহ জিয়া-উল-হককে ফিন্যান্সিয়াল সেক্টর সাপোর্ট অ্যান্ড স্ট্রাটেজিক প্ল্যানিং ডিপার্টমেন্টে, সাসটেইনেবল ফিন্যান্স ডিপার্টমেন্টের রাবেয়া খন্দকারকে পেমেন্ট সিস্টেমস ডিপার্টমেন্টে (ডিভিশন-১)।
সচিব বিভাগের মো. কামরুজ্জামান কল্লোলকে হিউম্যান রিসোর্সেস ডিপার্টমেন্ট-২, হিউম্যান রিসোর্সেস ডিপার্টমেন্ট-২-এর শেখ আহমেদ জামীকে হিউম্যান রিসোর্সেস ডিপার্টমেন্ট-১, হিউম্যান রিসোর্সেস ডিপার্টমেন্ট-২ এর আঞ্জুমান আরা বেগমকে কমন সার্ভিসেস ডিপার্টমেন্ট-১, ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগ-৭-এর মোহাম্মদ উল্ল্যাহকে সদরঘাট অফিস, ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্টের (ডিভিশন-১) সৈয়দ গোলাম শাহাজারুল ও ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগ-৭-এর মো. রায়হানুল ইসলামকে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটে বদলি করা হয়।
এ ছাড়া মতিঝিল অফিসের রেজিয়া খাতুনকে ডিপোজিট ইন্স্যুরেন্স ডিপার্টমেন্টে বদলি করা হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, ২০০০ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ২১২তম সভায় বদলি নীতিমালা পর্যালোচনা ও অনুমোদিত হয়। সভায় আন্তঃবিভাগীয় বদলির ক্ষেত্রে পরিদর্শন বিভাগে পাঁচ বছর ও অন্যান্য বিভাগে তিন বছর বদলি রাখার নীতিমালা অনুমোদিত হয়।