বাজেট ঘোষণা: দাম কমবে যেসব পণ্যের

নিজস্ব প্রতিবেদক
জার্নাল ডেস্ক জার্নাল ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৬ জুন ২০২৪, ০৫:০৩ PM

জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। আজ বৃহস্পতিবার (০৬ জুন) বিকেল তিনটায় জাতীয় সংসদ ভবনে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বাজেট অধিবেশন শুরু হয়। এরপর বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী।

জাতীয় সংসদে উপস্থাপিত প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশের ৫৩তম বাজেটের মূল স্লোগান সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অঙ্গীকার।

যেসব পণ্যের দাম কমতে পারে
স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ-পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ও দেশে উৎপাদনের স্বার্থে বেশকিছু পণ্যে শুল্ক কমানো হচ্ছে। যার ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বাজারে। অর্থাৎ এর ফলে কমবে নিত্যপণ্যের দাম।

নিত্যপ্রয়োজনীয় বাজার স্থিতিশীল রাখা ও উচ্চ মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে অন্তত ২৭ প্রয়োজনীয় পণ্য ও খাদ্যশস্য সরবরাহের ওপর উৎসে কর কমানো হচ্ছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এসব পণ্যে উৎসে কর ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করা হচ্ছে। পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে- পেঁয়াজ, রসুন, মটর, ছোলা, চাল, গম, আলু, মসুর, ভোজ্যতেল, চিনি, আদা, হলুদ, শুকনা মরিচ, ডাল, ভুট্টা, ময়দা, আটা, লবণ, গোলমরিচ, এলাচ, দারচিনি, লবঙ্গ, খেজুর, তেজপাতা, পাট, তুলা, সুতা এবং সব ধরনের ফলসহ ৩০ পণ্য। 

প্যাকেটজাত গুঁড়াদুধ
প্যাকেটজাত গুঁড়াদুধ আমদানিতে করহার কমানো হচ্ছে। আড়াই কেজি ওজন পর্যন্ত গুড়া দুধের ওপর করহার ৮৯.৩২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫৮.৬০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমানে গুঁড়াদুধের বাল্ক আমদানিকারকদের জন্য মোট করহার ৩৭ শতাংশ।

বিদেশি চকোলেট
প্রস্তাবিত বাজেটে চকোলেট আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক ৪৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হচ্ছে। এ কারণে সব বয়সিদের পছন্দের চকোলেটের দাম কমতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

কম্পিউটার
কম্পিউটার ও কম্পিউটার সামগ্রী আমদানির জন্য আমদানিকারক কোনো শর্ত ছাড়াই শুধুমাত্র ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক প্রদান করে সব ধরনের কম্পিউটার ও প্রিন্টারের যন্ত্রাংশ ইত্যাদি আমদানি করতে পারে। যা প্রকৃত কম্পিউটার সামগ্রী উৎপাদকদের জন্য অসুবিধাজনক। প্রস্তাবিত বাজেটে ওই শুল্ক প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়েছে।

ল্যাপটপ
প্রস্তাবিত বাজেটে ল্যাপটপ আমদানিতে মোট কর কমানো হচ্ছে। যার প্রভাবে কমতে পারে পণ্যটির দামে। আমদানিকারকদের বর্তমানে ল্যাপটপ আমদানিতে ৫ শতাংশ শুল্কসহ মোট ৩১ শতাংশ শুল্ক-কর দিতে হচ্ছে। তবে প্রস্তাবিত বাজেটে শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ এবং ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। সবমিলিয়ে শুল্ক-কর ৩১ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০.৫০ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, সরকার আগে স্থানীয় প্রস্তুতকারকদের সুরক্ষা দিতে ল্যাপটপ আমদানিতে কর বাড়িয়েছিল। তবে এমন পদক্ষেপে শেষ পর্যন্ত গ্রাহকদের খরচ বেড়েছে। কারণ স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ল্যাপটপের মান ও দাম নিয়ে ক্রেতারা সন্তুষ্ট নয়।

নির্মাণ সামগ্রী
আবাসনসহ বিভিন্ন নির্মাণ খাতে ব্যবহৃত রড, বার ও এঙ্গেল তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ম্যাংগানিজ ব্যবহৃত হয়। বাজেটে ওই সব পণ্য আমদানিতে শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হচ্ছে। ফলে লোহাজাতীয় পণ্যের দাম কমতে পারে।

ইলেকট্রিক মোটর
ইলেকট্রিক মোটর উৎপাদনে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশ আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। এ কারণে ইলেকট্রিক মোটরের দাম কমতে পারে।

সুইচ-সকেট
বাসাবাড়িতে ব্যবহৃত সুইচ-সকেটের দাম কমতে পারে। কারণ, দেশে উৎপাদিত সুইচ-সকেট, হোল্ডার উৎপাদনে ব্যবহৃত কাঁচামালের আমদানি শুল্ক কমানো হচ্ছে।

কার্পেট
কার্পেট তৈরির প্রধান কাঁচামাল পলিপ্রেপাইলিন ইয়ার্ন আমদানির শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। এতে দেশে তৈরি কার্পেটের দাম কমতে পারে।

উড়োজাহাজ রক্ষণাবেক্ষণে খরচ
এভিয়েশনখাতের উত্তরণকল্পে ইঞ্জিন-প্রপেলার আমদানি পর্যায়ে মূসক কমতে পারে। এর ফলে উড়োজাহাজ রক্ষণাবেক্ষণে খরচ কমতে পারে।

মোটরসাইকেল
দেশে তৈরি মোটরসাইকেলের সিকেডি ইঞ্জিনের পার্টস আমদানির শুল্ক কমানো হচ্ছে। এ কারণে দেশে তৈরি মোটরসাইকেলের দাম কমতে পারে।

কিডনি ডায়ালাইসিসের ফিল্টার
কিডনি ডায়ালাইসিসে ব্যবহৃত ফিল্টার ও সার্কিট আমদানির শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে এক শতাংশ করা হচ্ছে। এ কারণে ডায়ালাইসিস খরচ কমতে পারে।

ডেঙ্গু কিট
ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় কিট আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। যদিও ডেঙ্গু রোগীদের এনএস-১ অ্যান্টিজেন পরীক্ষার খরচ সরকারি হাসপাতালের জন্য ১০০ টাকা এবং বেসরকারি হাসপাতালের জন্য ৩০০ টাকা নির্ধারণ করা আছে। বাজার নিয়ন্ত্রণের আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা দেওয়া হবে।

ক্যান্সার চিকিৎসা খরচ
ক্যান্সার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধার আওতায় নতুন কিছু কাঁচামাল যোগ হচ্ছে। ফলে আশা করা যাচ্ছে ক্যান্সারের চিকিৎসা খরচ কমে আসবে।

এর আগে, দুপুরে মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপনের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।