ঈদের আগেই বেড়েছে মুরগি ও গরুর মাংসের দাম
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১০ অথবা ১১ তারিখে হতে পারে পবিত্র ঈদুল ফিতর। আর ঈদকে সামনে রেখে আগেভাগেই বাড়তে শুরু করেছে মুরগি ও গরুর মাংসের দাম। ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম কেজিতে ৩০-৪০ টাকা এবং গরুর মাংসের দাম কেজিতে ৩০-৫০ টাকা করে বেড়েছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, রোজার ঈদের আগে গরু ও মুরগির মাংসের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় বাড়তি চাপ তৈরি হয় বাজারে। এ কারণেই দাম বেড়েছে। যদিও কেউ কেউ বলছেন, এই চাহিদা মেটানোর মত প্রস্তুতি থাকলেও ব্যবসায়ীরা ইচ্ছা করেই মাংসের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন।
খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্যমতে, ২০২২ সালের মার্চে বিশ্ববাজারে খাদ্যের দাম সর্বোচ্চ রেকর্ডে হিট করার পর আস্তে আস্তে কমতে শুরু করে। তবে বিশ্ববাজারে কমলেও দাম কমেনি বাংলাদেশের বাজারে। উল্টো এখনও পর্যন্ত অস্থিতিশীলই রয়েছে দেশের নিত্যপণ্যের বাজার।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি ২৫০-২৮০ টাকা পর্যন্ত দাম চাওয়া হচ্ছে। তবে এখনও ২৪০ টাকায় বিক্রি করছেন অনেকে। যদিও ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদের আগ মুহূর্তে এই দাম আরও বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। অথচ এক সপ্তাহ আগেও ব্রয়লার মুরগির দাম ছিল ২১০-২১৫ টাকা কেজি।
একইভাবে, বেড়েছে সোনালি মুরগির দাম। ৩৩০ টাকা থেকে বেড়ে সোনালি মুরগি এখন বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকা কেজি দরে।
রাজধানী জিনজিরার বাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন, সব জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। এ কারণে মুরগির দামও বেড়ে গেছে।
কারওয়ানবাজারের এক মুরগি বলেন, "ঈদের আগে মুরগির চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়, সে অনুযায়ী সরবরাহ কম থাকে। এ কারণে দামটা বাড়ে। তবে সরবরাহকারীরা এবারে আগেভাগেই দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন, এটা কিছুটা অযৌক্তিক মনে হচ্ছে।"
এদিকে খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন বলছে, দীর্ঘদিন ধরে ফিড ও বাচ্চার দাম নিয়ে যে অরাজকতা তৈরি হয়েছে, সেটির প্রভাবই এখন স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। কারণ এক কেজি মুরগির উৎপাদন খরচ এখন ১৮৬ টাকা। ফলে দাম বাড়ছে।
বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. সুমন হাওলাদার বলেন, "একদিকে বাচ্চার দাম বাড়ছে, অন্যদিকে ফিডের দাম। এ কারণে মুরগির দাম বেড়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক।"
"এরমধ্যে আবার কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে ধীরে ধীরে পুরো বাজারের নিয়ন্ত্রণ চলে যাচ্ছে, তারা যেভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে চান, সেভাবেই হচ্ছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থাও তাদেরকে সেভাবেই সাপোর্ট দিচ্ছে," যোগ করেন তিনি।
এদিকে শুধু মুরগির নয়, রোজার মাসজুড়ে গরুর মাংস নিয়ে চলা নানান নাটকীয়তার পর আবারও দাম বাড়তে শুরু করেছে এই ভোগ্যপণ্যের।
ভোক্তা অধিপ্তরের পরামর্শে কিছু ব্যবসায়ী ২০ রোজা পর্যন্ত পুরানা ঢাকা, উত্তর শাহজাহানপুর, মালিবাগ ও মিরপুরে ৬০০-৬৫০ টাকা কেজি দরে গরুর মাংস বিক্রি করে আলোচনায় ছিলেন। যখন কম দামের মাংস বিক্রি বন্ধ হয়ে যায় এর পর থেকেই বাজারে সাধারণ বিক্রেতারা দাম বাড়ানো শুরু করেন।
এক সপ্তাহ আগেও ঢাকার বেশিরভাগ দোকানে গরুর মাংসের দাম ছিল ৭৫০ টাকা কেজি, যা এখন বিক্রি হচ্ছে ৭৮০ টাকা দরে। কোথাও কোথাও ৮০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, ঈদের আগে গরুর দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন মাংসের দাম বাড়ছে।
জিনজিরার এক মাংস বিক্রেতা বলেন, সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় গরুর মাংসের দাম বেড়ে গেছে।
রামপুরার এক মাংস বিক্রেতা বলেন, "গ্রামে গ্রামে এখন নতুন ট্রেন্ড তৈরি হয়েছে। ঈদের আগে কয়েকজন মিলে গরু কিনে ভাগাভাগি করে নেন। এ কারণে সেখানেও একটা বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়। সরবরাহকারীরা এই সুযোগটায় দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে।"
ব্যবসায়ীরা সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঈদের আগে আর গরু ও মুরগির মাংসের দাম কমার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।