এক হয়ে গেলো পদ্মা ও এক্সিম ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক
জার্নাল ডেস্ক জার্নাল ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৮ মার্চ ২০২৪, ১২:৫৩ PM

দেশে প্রথমবারের মতো স্বেচ্ছায় একীভূত হলো বেসরকারি খাতের এক্সিম ব্যাংক ও পদ্মা ব্যাংক। এর ফলে, পদ্মা ব্যাংকের যেকোনো ব্যক্তিগত আমানতকারী দ্রুতই এক্সিম ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে পারবেন বলে জানিয়েছেন এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান।

এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে এক হতে চুক্তি সই করেছে পদ্মা ব্যাংক। আজ সোমবার (১৮ মার্চ) বাংলাদেশ ব্যাংকে এই চুক্তি সই হয়েছে। ব্যাংকটির শীর্ষ কর্তারা এই চুক্তিতে সই করেছেন।

চুক্তি সই অনুষ্ঠানে এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, পদ্মা ব্যাংকের সব দায় নেওয়া হবে। ব্যাংকটি একীভূত হলেও এর কোনো কর্মী চাকরি হারাবে না।

এই একীভূতির ফলে, পরিচালনা পর্ষদে সব ধরনের সিদ্ধান্ত নেবেন এক্সিম ব্যাংকের পরিচালকেরা। তবে দুই ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগের বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এ বিষয়ে প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। 

এছাড়া, পদ্মা ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তা চাকরি হারাবেন না বলেও আশ্বস্ত করেছেন এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান এবং অ্যাসোসিয়েশন অফ ব্যাংকার্স বাংলাদেশের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে দুই ব্যাংকের চুক্তি স্বাক্ষর শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।

নজরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, "পদ্মায় জাল ফেলেছে এক্সিম ব্যাংক। এখন ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরার পালা।" 

"এক বছরের মধ্যে পদ্মা ব্যাংকের পরিস্থিতি ভালো হয়ে যাবে। চাইলে পদ্মা ব্যাংকের যেকোনো ব্যক্তিগত আমানতকারী তার টাকা এক্সিম ব্যাংক থেকেই তুলে নিতে পারবেন। আর ব্যাংকের সকল দায়ভার এখন থেকে এক্সিম ব্যাংক গ্রহণ করল," যোগ করেন তিনি।

এদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক জানান, "মার্জার প্রক্রিয়ায় এখনো শেষ হয়নি। শেষ হলে বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষণা করবে। এরপর থেকে তারা একত্রে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে। এই প্রক্রিয়ার পরেই পদ্মা ব্যাংকের আমানতকারীরা এক্সিম ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে পারবেন।"

এর আগে, গত ১৪ মার্চ সকালে ব্যাংকের পর্ষদ সভায় পদ্মা ব্যাংক লিমিটেডকে অধিগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেয় এক্সিম ব্যাংক।

দ্য ফারমার্স ব্যাংক নামে ২০১৩ সালে পদ্মা ব্যাংক যাত্রা শুরু করে। এরপর ২০১৭ সালে ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেন চৌধুরী নাফিজ সরাফাত। কিন্তু শুরু থেকেই ব্যাপক অনিয়মের কারণে ২০১৮ সালের প্রথম দিকে সরকারের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন হয়। ব্যাংকটিকে বাঁচাতে রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী ব্যাংক এবং ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশান অব বাংলাদেশ (আইসিবি) ৭১৫ কোটি টাকা মূলধন জোগান দেয়।

সার্ব-অডিনেট বন্ড  জারি ও স্থায়ী আমানত রাখার মতো অন্যান্য সহায়তার আকারেও প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা পদ্মা ব্যাংকে বিনিয়োগ করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো।

কিন্তু পদ্মা ব্যাংক খেলাপি ঋণ আদায় করতে না পারায় সহায়তা দিয়েও ব্যাংকটির মূলধন ক্ষয় ঠেকানো যায়নি। 

বিপুল খেলাপি ঋণ, গ্রাহকের আমানত ফেরত দিতে না পারা এবং বড় লোকসান দিতে থাকায় ২০২১ সালের জুলাইয়ে পদ্মা ব্যাংকের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক এহসান খসরু পদ্মা ব্যাংককে যেকোনো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূতকরণ (মার্জার) বা অধিগ্রহণ (অ্যাকুইজিশন) করতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রস্তাব দেন। কিন্তু মার্জার অ্যান্ড অ্যাকুইজিশন আর হয়নি। 

এরপর ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পদ্মা ব্যাংক জানায়, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিনিয়োগ ব্যাংক ডেল মরগান অ্যান্ড কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেছে ব্যাংকটি। বলা হয়, ব্যাংকটিতে ৭০ কোটি ডলার বিনিয়োগ আনতে ডেল মরগান মধ্যস্থতা করবে। কিন্তু সেই অর্থও কখনো আসেনি।

এদিকে বিনিয়োগ করে পাঁচ বছর পরেও কোনো রিটার্ন না পাওয়ায় ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে পদ্মা ব্যাংক থেকে তাদের বিনিয়োগ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয় আইসিবি। রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ সংস্থাটি এখন তাদের পদ্মা ব্যাংকের শেয়ার বিক্রির জন্য দেশি-বিদেশি কৌশলগত বিনিয়োগকারীর সন্ধান করছে।  

২০২৩ সালের শেষে ব্যাংকটির ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণই ৩ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা। ফলে ঋণ থেকে যে আয় হচ্ছে, তা দিয়ে আমানতের সুদ পরিশোধ করা যাচ্ছে না।