রমজানে ৬০০ টাকায় গরুর মাংস বিক্রি করবে সরকার
অনেকেই ভ্রু কুঁচকে বলতে পারেন, বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৮০০ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হচ্ছে, কাজেই ৬০০ টাকায় গরুর মাংস বিক্রি সম্ভব নয়। তবে এই অসম্ভব কাজটিই করে দেখাচ্ছে সরকার।
বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিডিএফএ) ও সারা দেশের গবাদিপশু খামারিদের সহযোগিতার মাধ্যমে রমজানে ৬০০ টাকায় গরুর মাংস বিক্রির পরিকল্পনা করেছে সরকার।
সারা দেশ থেকেই খামারিরা প্রয়োজন ও সামর্থ্য অনুযায়ী গরু সরবরাহ করছেন। এসব গরুর মাংস সরকারের ব্যবস্থাপনায় ঢাকার বিভিন্ন স্পটে বিক্রি হবে বলে জানিয়েছেন বিডিএফএ-সংশ্লিষ্টরা।
রমজানজুড়ে রাজধানীর ২৫টি নির্দিষ্ট স্থানে খাসি, মুরগি ও দুগ্ধজাত পণ্যের সঙ্গে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৬০০ টাকায় বিক্রির তদারকি করবে সরকার। এছাড়া আরও পাঁচটি স্পটে গরুর মাংস পাওয়া যাবে ৬৫০ টাকা কেজিতে।
সরকার যখন প্রতি কেজি গরুর মাংস ৬০০ টাকায় বিক্রি করার ঘোষণা দিয়েছে, তখন ঢাকার বাজারে এ পণ্য বিক্রি হচ্ছে ৭৫০–৮০০ টাকায়। মাংসবিক্রেতারা প্রতি বছরের মতো এবারো রমজানের আগে আরও এক দফা দাম বাড়ানোর সুযোগ খুঁজছেন বলেও জানা গেছে।
বিডিএফএ সভাপতি মো. ইমরান হোসেন বলেন, বাজারে যে দামে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে, তা হওয়ার কথা নয়। কারণ খামারি পর্যায়ে গরুর দাম স্বাভাবিক রয়েছে। যেমনটা ছিল ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে, যখন ৬৫০ টাকায় গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে। কিন্তু এখনকার দামটা কোনোভাবেই যৌক্তিক নয় বলে উল্লেখ করেন তিনি।
ইমরান বলেন, খামারিরা সামান্য কম দামে গরু বিক্রি করে সহায়তা করতে আগ্রহী। 'খামারিরা কসাইয়ের কাছে যে গরুটা ১ লাখ ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি করতেন, সেটা এখানে তিনি বিক্রি করছেন হয়তো ১ লাখ ৫৫ হাজার টাকায়। এটাকে লোকসান নয়, জনগণকে ন্যায্যমূল্যে মাংস দেওয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতা বলা যেতে পারে।'
বিক্রয়ের সুবিধার্থে ৩০টি ডেজিগনেটেড স্পটে দুটি বিতরণ পদ্ধতি ব্যবহার করা হবে। পঁচিশটি মোবাইল ভ্যান গরুর মাংস, মুরগি, খাসি, দুধ ও ডিম বিক্রি করবে। এর বাইরে পাঁচটি ডেজিগনেটেড বাজারে শুধু গরুর মাংস বিক্রি হবে।
বিক্রয়কাজ সহজ করার জন্য দৈনিক পরিচালন খরচ বহন করবে সরকার। চালকের মজুরিসহ প্রতিটি ভ্যানের পেছনে দৈনিক প্রায় ১০ হাজার টাকা খরচ হবে।
আর খামারিরা সরবরাহ করবেন সবগুলো পণ্য। ওই পণ্য বিক্রি হওয়ার পর খামারিরা তাদের পণ্যের টাকা বুঝে নেবেন। প্রতিটি ভ্যানে যে দুজন মানুষ বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করবেন, তাদের দৈনিক ১ হাজার ৫০০ টাকা খামারিদের পক্ষ থেকে দেওয়া হবে।
সরকার ১০ মার্চ থেকে পণ্যগুলো বিক্রি শুরু করবে। ৫টি স্পটে শুধু গরুর মাংস বিক্রি করা হবে প্রথম রোজা থেকে। এখানে প্রতিটি স্পটে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করবেন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
প্রতিদিন একেকটি ভ্যানে ১০০ কেজি গরুর মাংস, ৫০ কেজি ড্রেসড ব্রয়লার মুরগি, ১০ কেজি খাসি, ৪ হাজার ডিম ও ২০০ লিটার দুধ বিক্রি করা হবে।
৬০০ টাকার গরুর মাংসের পাশাপাশি ২৫০ টাকায় মুরগির মাংস, ১১০ টাকা ডজন ডিম, ৯০০ টাকা কেজি দরে খাসির মাংস এবং ৮০ টাকা লিটার হিসেবে বিক্রি হবে দুধ। শুরুতে মুরগির মাংস ২৮০ টাকায় বিক্রির ঘোষণা দেওয়া হলেও পরে সেটি কমিয়ে ২৫০ টাকা করা হয়েছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় প্রথমে ১০টি স্পটের কথা বললেও ৫টি স্পটে ৬৫০টাকা কেজি দরে শুধু গরুর মাংস বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিডিএফএ। স্পটগুলো হবে ঢাকার বিভিন্ন বাজারে। তবে এই স্পটগুলো নির্ধারণ করতে গিয়েই বিপাকে পড়তে হচ্ছে খামারিদের সংগঠনটিকে।
সংগঠনের নেতারা জানান, মেয়র অতিকুল ইসলাম ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন বাজারগুলোতে ৩টি স্পট দিতে চেয়েছেন গরুর মাংস বিক্রির জন্য। সে অনুযায়ী উত্তর সিটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা প্রদান করে তিনি দেশের বাইরে চলে যান। সংকটের শুরু এর পর।
বিডিএফএর সভাপতি ইমরান হোসেন বলেন, 'যেসব কর্মকর্তা সিটি কর্পোরেশনের বাজারগুলোতে এই তিনটি স্পট বিনামূল্যে বুঝিয়ে দেওয়ার নির্দেশনা পেয়েছেন, তারা বাকি দুটি স্পটের জন্য আমাদের কাছে টাকা চাচ্ছেন। এ কারণে রোজা চলে এলেও আমরা এখনও স্পটগুলো নির্ধারণ করতে পারছি না।'
ঢাকা দক্ষিণেও এখনও পর্যন্ত স্থান খুঁজে পাওয়া যায়নি। ইমরান বলেন, 'মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যোগাযোগ করেও দক্ষিণ সিটির মেয়রের কাছ থেকে স্পটের বিষয়ে এখনো কোনো নির্দেশনাই পাইনি।'
দুই সিটিতে যখন এই অবস্থা, তখন বিকল্প পন্থায় হাঁটছেন বিডিএফএ নেতারা। তারা এখন বিভিন্ন এলাকার কাউন্সিলরদের ফোন করে তাদের এলাকায় স্থান চাইছেন। যদিও এখনো সবগুলো স্পট নির্ধারণ করা যায়নি।
তথ্যসূত্র: টিবিএস