মরদেহ আটকে সুদের টাকা আদায়
যত দিন যাচ্ছে ততই যেন মানুষ অমানবিক হয়ে উঠছে। তারই এক জলজ্যান্ত প্রমাণ পাওয়া গেল চুয়াডাঙ্গায়। জেলার দামুড়হুদা উপজেলার চিৎলা গ্রামে মরদেহ আটকে রেখে সুদের টাকা আদায়ের ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি নিয়ে শুধু স্থানীয়দের মধ্যেই নয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিন্দার ঝড় উঠেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চিৎলা গ্রামের নতুনপাড়ার নিয়ামত আলীর ছেলে রাজমিস্ত্রী হারুন (৪৫) গতকাল শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) মেয়ের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে হঠাৎ স্ট্রোক করে মারা যান। রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) ভোরে মরদেহ নিজ গ্রামে আনা হলে স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে পরিবেশ। আসরের নামাজের পর তার দাফনের প্রস্তুতি চলছিল। তার জীবনের সব দায়-দায়িত্ব শেষ হয়ে গেছে— এমনটিই ভাবছিলেন স্বজনরা। কিন্তু ঠিক সেই মুহূর্তে ঘটে এক অকল্পনীয় অমানবিকতা।
স্থানীয়রা জানান, মরদেহ গোসলের সময় প্রতিবেশী মর্জিনা খাতুন দাবি করেন— হারুনের কাছে সুদের ১৫ হাজার টাকা পাবেন তিনি। তিনি সরাসরি জানিয়ে দেন— ওই টাকা পরিশোধ না করলে মরদেহ দাফন করতে দেওয়া হবে না। শোকাহত পরিবার মরদেহ পাশে রেখে টাকার জন্য তর্ক-বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে। আশপাশের মানুষ স্তম্ভিত হয়ে পড়ে এমন ঘটনায়। অবশেষে প্রায় এক ঘণ্টা পর পরিবার বাধ্য হয়ে টাকা মিটিয়ে দেয়। টাকা হাতে পেয়ে মর্জিনা স্থানীয়দের ক্ষোভ ও জনরোষের মুখে সটকে পড়েন। এরই মধ্যে পুরো ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশ করেন নেটিজেনরা। পরে জানাজা শেষে হারুনের মরদেহ গ্রামের কবরস্থানে দাফন করা হয়।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আতিয়ার রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মূল টাকা হারুন জীবিত থাকতেই পরিশোধ করেছিলেন। মৃত্যুর পর তার মরদেহ আটকে রেখে সুদের টাকা আদায় করা সমাজের চোখে ন্যাক্কারজনক, ঘৃণিত ও লজ্জাজনক কাজ।
গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা জীবনে অনেক কিছু দেখেছি, কিন্তু মরদেহ আটকে সুদের টাকা আদায়ের মতো ঘটনা এই প্রথম দেখলাম। মৃত মানুষের মরদেহ আটকে রেখে টাকা আদায় করা কেবল লোভ নয়, এটা সমাজের জন্য চরম লজ্জার বিষয়।
হারুনের চাচাতো ভাই মতিনুর ইসলাম মানিক বলেন, আমার ভাই গত দেড় মাস আগে মর্জিনা খাতুনের নিকট থেকে ৮ হাজার টাকা ধার নেন। সেই টাকা তিনি ব্যবসার কাজে লাগিয়েছিলেন। রোববার সকালে মরদেহ গোসলের সময় মর্জিনা দাবি করেন ২২ হাজার টাকা সুদের টাকা পাবে। দাফন শেষে এ বিষয়টি মিটমাট করা হবে জানালে তিনি বলেন, টাকা না পেলে মাটি দিতে দেব না।
তিনি আরও বলেন, এমনকি আমার গরুটি তার বাড়িতে রেখে আসতে চেয়েছি। পরে নগদ টাকা দিয়ে গরুটা নিয়ে আসব। তিনি তাও শোনেননি। পরে ২২ হাজার টাকার থেকে কমিয়ে ১৫ হাজার টাকা দাবি করেন মর্জিনা খাতুন। এরপরই পরিবারের সদস্যরা খুব কষ্টে ১৫ হাজার টাকা সংগ্রহ করে খাটিয়ার ওপর রাখেন। পরে সেই টাকা মর্জিনা খাতুন নিয়ে যায়।
মানিক বলেন, তিনি একজন বড় সুদের কারবারি। গ্রামের মানুষকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। প্রতিবাদ করলেই তার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন মামলা দেয়। তাই কেউ তার বিরুদ্ধে কথা বলতে পারে না।
এ বিষয়ে জানতে দামুড়হুদা মডেল থানা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) হুমায়ুন কবীর বলেন, এমন ঘটনা আমার জানা নেই। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।