সাগরে ইলিশের জোয়ার

নিজস্ব প্রতিবেদক
জার্নাল ডেস্ক জার্নাল ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭ আগস্ট ২০২৫, ০৮:৩৭ AM

বঙ্গোপসাগরে জেলেদের জালে উঠছে ঝাঁকে ঝাঁকে রুপালি ইলিশ। ফলে দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান মৎস্যবন্দর কুয়াকাটা, আলীপুর ও মহিপুর এখন ইলিশে ভরপুর। গত দুদিনে এসব বন্দরে হাজার হাজার মণ ইলিশ বিক্রি হয়েছে। এতে খুশি ট্রলার মালিক, আড়ৎদার ও জেলেরা। উপকূলীয় এলাকার মৎস্য বন্দরে ফিরে এসেছে কর্মচাঞ্চল্য। দীর্ঘদিনের হতাশা কাটিয়ে জেলে পরিবারগুলোয় ফিরেছে স্বস্তি—জেলে পাড়ায় বইছে ঈদের মতো আনন্দ।

দেশের বৃহৎ মাছের মোকাম কুয়াকাটা-আলীপুর-মহিপুর মৎস্য পল্লীতে প্রচুর পরিমাণে ইলিশ উঠেছে। সাগর থেকে ইলিশভর্তি সারি সারি ট্রলার ঘাটে ভিড়েছে। ওইসব ট্রলার থেকে ইলিশ নামানো হচ্ছে। পাইকারদের নিকট মাছ বিক্রয় করছেন আড়ৎদাররা। কেউ কেউ মাছের সাইজ আলাদা করছেন। কেউ ইলিশ মাছের ঝুড়ি টানছেন, কেউ প্যাকেট করছেন, আবার কেউ সেই ডোল (প্যাকেট) দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠাতে তুলে দিচ্ছেন ট্রাকে। অন্যদিকে খুচরা মাছবাজার ঘুরে দেখা গেছে পর্যাপ্ত ইলিশের সরবরাহ। গত কয়েকদিন যাবত গড়ে এ মোকাম থেকে ৪৫-৫০ টন ইলিশ দেশের বিভিন্ন মোকামে যাচ্ছে। ইলিশের পাশাপাশি অন্যান্য মাছও শিকার করছে জেলেরা। তবে বড় সাইজের ইলিশের পরিমাণ কিছুটা কম। ছোট সাইজের ইলিশ প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ৩০ হাজার টাকা দরে। 

ইলিশ নিয়ে ঘাটে ফিরে আসা জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাগরে প্রচুর পরিমাণে ইলিশ আছে। জাল ফেললেই ধরা পরছে ইলিশ। তবে বড় সাইজের ইলিশ ধরা পরছে কম। দীর্ঘদিন পর ইলিশের দেখা পেয়ে তারা অনেক খুশি। এদিকে সামনে পূর্ণিমার জোয়ার থাকায় জেলেরা ঘাটে ফিরতে শুরু করেছে। 

বুধবার (৬ আগস্ট) সন্ধ্যায় সাগরে ফিশিং শেষে আলীপুর-মহিপুর ঘাটে ফিরে এসেছি ২০-২৫ টি ট্রলার। প্রত্যেকটি ট্রলারই কম বেশি মাছ পেয়েছে। এরমধ্যে এফবি তামান্না ট্রলারে প্রায় ১০ মণ মাছ পেয়েছে। প্রতি মণ ৭৪ হাজার টাকা দরে ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা বিক্রয় করেছেন। এফবি আব্দুল্লাহ নামের ট্রলারটি ৯ লাখ ৭৫ হাজার টাকার মাছ বিক্রয় করেছেন। এফবি মায়ের দোয়া নামের একটি ১৩ লাখ ৫১ হাজার টাকার মাছ পেয়েছে। এফবি জামাল নামের একটি ৮০ মণের বেশি মাছ পেয়ে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিক্রয়  হয়নি। তবে ট্রলারের জেলেরা ধারনা করেছেন ২৪-২৫ লাখ টাকা হতে পারে। 

এক জেলে বলেন, সাগরে প্রচুর ইলিশ আছে। কিন্তু সমুদ্রে স্রোত বেড়ে যাওয়ায় জাল ফেলা যাচ্ছে না। স্রোতের তোড়ে জাল প্যাচিয়ে ছিঁড়ে যাচ্ছে। তাই ঘাটে ফিরে এসেছি। পূর্ণিমার জোয়ারের প্রভাব কমলেই মাছ শিকার করতে সমুদ্রে যাবো। মাছ পেয়ে আমরা খুশি।  

এক মৎস্য ব্যবসায়ী বলেন, গত কয়েকদিন ধরে জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পরছে। প্রতিদিন গড়ে শুধুমাত্র আলীপুর বন্দরে ২০-২৫ টন ইলিশ উঠে। মাছের সরবরাহ বেশি থাকায় দাম কিছুটা কমছে। এক কেজি ওজনের প্রতি মণ ইলিশের পাইকারি দাম ৬৫ থেকে ৭০ হাজার টাকা, ৭০০-৮০০ গ্রাম সাইজের দাম ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা, ৪০০-৬০০ গ্রাম সাইজের ইলিশের দাম ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা, ছোট সাইজের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। জাটকা বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকায়। 
 
এক ট্রলারের মাঝি বলেন, বর্তমানে প্রচুর পরিমাণে ছোট সাইজের ইলিশ ধরা পরছে। বড় সাইজের ইলিশ ধরা পরছে তুলনামূলক অনেক কম। ট্রলিং ট্রলার বন্ধ করলে মাছ বাড়বে। আমরা ৪ দিন আগে ১৮ জন জেলে সাগরে গেছিলাম। দুইদিন ফিশিং করার পর আজকে (বুধবার) সন্ধ্যায় ঘাটে ফিরে এসেছি। ছোট সাইজের ১০ হাজার ইলিশ পেয়েছি। এখন পর্যন্ত সব মাছ মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে তোলা হয়নি। অুনমান করছি ৮০ থেকে ৮৫ মণ হতে পারে। আশা করছি ২৪-২৫ লাখ টাকা হবে।  

কলাপাড়া সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, সাগরে বেশ কিছুদিন ইলিশের খরা চলছিলো। বর্তমানে জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পরছে। বৃষ্টি থাকলে আরও বেশি ইলিশ ধরা পরবে। বন্দরে ইলিশ সংশ্লিষ্ট সকলে লাভবান হবে।