তিনটি ধাপে মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়িত হবে
কাঙ্ক্ষিত সময়ে মানসম্মত সেবা প্রদান করা একটি বড় চ্যালেঞ্জের বিষয়
ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ২৯তম উপাচার্য হিসেবে দায়িত্বভারগ্রহণ করেছেন। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আগামীর পরিকল্পনা, অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ নানা চ্যালেঞ্জিং বিষয়ে জানিয়েছেন। চলুন পড়ে নিই :
প্রশ্ন: বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন বিষয়গুলো আপনার গুরুত্বের তালিকায় থাকবে বলে মনে করেন?
উত্তর: প্রথমত এ বিশ্ববিদ্যালয়কে এখনো সম্পূর্ণভাবে অটোমেশনের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি, ই-নথি বাস্তবায়িত হয়নি। এখনো শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রার ভবনে, হল ও বিভাগে দৌড়াদৌড়ি করতে হয়, ফাইলগুলো আটকা থাকে। সে জায়গায় পরিবর্তন আনব। সে জন্য পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে দৈনন্দিন কাজের গতি ও সামগ্রিক স্বচ্ছতা এখনো নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি।
দ্বিতীয়ত বিভাগ, ইনস্টিটিউট, সেন্টার এবং আবাসিক হলগুলোর সমন্বয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে বড় কলেবর, তার ব্যবস্থাপনার জন্য প্রশাসনিক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যে কারিগরি দক্ষতা প্রয়োজন, তাতে অনেক ঘাটতি রয়েছে। এ কারণে কাঙ্ক্ষিত সময়ে মানসম্মত সেবা প্রদান করা একটি বড় চ্যালেঞ্জের বিষয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে যে পরিমাণ রিসোর্স আছে, তাতে আমাদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মেধার মাধ্যমে মর্যাদাপূর্ণ র্যাঙ্কিংয়ে অবস্থান করা সম্ভব বলে আমি মনে করি। সে জন্য মানসম্মত গবেষণার প্রতি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করতে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এক্সট্রা কো-কারিকুলাম মানসম্মত, প্রয়োজননির্ভর ও গবেষণাধর্মী করে তৈরি করা এবং তা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় ভৌত একাডেমিক অবকাঠামো গড়ে তুলতে যেমন আর্থিক চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তেমনি মনস্তাত্ত্বিক চ্যালেঞ্জও আছে।
তৃতীয়ত, সুস্থ দেহ ও মনের জন্য খেলাধুলার প্রয়োজন রয়েছে। এক্সট্রা কো-কারিকুলার (সহশিক্ষা) কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের সংযুক্ত করার বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আমাদের একাধিক খেলাধুলার মাঠ রয়েছে, কিন্তু সেখানে শিক্ষার্থীরা ভালোভাবে খেলাধুলা করতে পারে না। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধকরণ এবং খেলার মাঠ ও ক্রীড়াসামগ্রী আধুনিকায়নের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
নিও-লিবারেল বিশ্বায়নের এ যুগে টিকে থাকতে হলে জ্ঞান ব্যবস্থাপনা ও জ্ঞান সৃজনে আমাদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। আমাদের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অত্যন্ত মেধাবী ও পরিশ্রমী। আমাদের যে রিসোর্স রয়েছে, তার সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে শিক্ষার মান আরও বাড়ানো যাবে। ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়ার সম্পর্কোন্নয়ন ও যথোপযুক্ত সরকারি সহযোগিতা পেলে শিক্ষার মান আমরা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিতে পারব, এটি আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
প্রশ্ন: আপনার সময়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে এক্সট্রা কো-কারিকুলার অ্যাকটিভিটিস বেশি গুরুত্ব পাবে, নাকি একাডেমিক ফলাফল?
উত্তর: শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে বোর্ডে পাঁচজন সদস্য থাকেন। তাঁরা সার্বিক বিষয় দেখেন। একাডেমিক ফলাফলের বিষয়টিতে যেমন গুরুত্ব দেওয়া দরকার, তেমনি একাডেমিক ফলাফলের পাশাপাশি কো-কারিকুলার কার্যক্রমের দিকেও নজর রাখা হয়। কোনোটিকে বাদ দিয়ে কোনোটি নয়।
প্রশ্ন: পূর্বাচলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনোভেশন অ্যান্ড রিসার্চ ক্যাম্পাস করার পরিকল্পনার অগ্রগতি কত দূর?
উত্তর: পূর্বাচলে ৫২ একর জমিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনোভেশন ও গবেষণানির্ভর ক্যাম্পাস গড়ে তোলার পরিকল্পনা বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে। পূর্বাচলে আমরা এখনো জমি বুঝে পাইনি। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের বিষয় শেষ করা হয়নি। আর্থিক লেনদেনের বিষয় শেষ করতে পারলে আশা করি আমরা কাজ শুরু করতে পারব। এ ক্ষেত্রে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আমাদের বিনীত আবেদন থাকবে, তিনি যেন এ বিষয়ে সদয় দৃষ্টি রাখেন।
প্রশ্ন: বিশ্ববিদ্যালয় উন্নয়নের মহাপরিকল্পনা রয়েছে। সেটা প্রধানমন্ত্রীর সদয় অনুমোদনের প্রক্রিয়ায় ছিল। সেটির বর্তমান কী অবস্থা?
উত্তর: মাস্টারপ্ল্যান ইতিপূর্বে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেখানো হয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিশ্ববিদ্যালয়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশ্ববিদ্যালয়। যে কারণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখনই বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছেন কিংবা যখনই আমরা দেখা করেছি, তিনি সব সময় বলেছেন, ‘আমার বিশ্ববিদ্যালয়’। আমিও সম্প্রতি যখন দেখা করি, তখনো তিনি তাঁর পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। তিনি চান এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ধরনের রূপান্তর, যাতে এ জাতিকে আরও বেশি সেবা দিতে পারে। যে সেবা সময়োপযোগী হবে, বৈশ্বিক ও সমসাময়িক প্রেক্ষাপটে। মাস্টারপ্ল্যান তিনি দেখেছেন, কিছু সাজেশন দিয়েছেন। সেই অনুযায়ী ইমপ্রুভমেন্ট করা হয়েছে। সে অনুযায়ী প্রথম ফেজের প্রকল্পও সরকারের কাছে দেওয়া হয়েছে। তিনটি ধাপে মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়িত হবে।
প্রথম ধাপে বাস্তবায়নের জন্য প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রণয়ন করা হয়েছে। গবেষণা ও ল্যাবরেটরির জন্য প্রায় ৫০০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কেনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগ ও ইনস্টিটিউট মিলে ৯৬টি এনটিটি রয়েছে। ৫৬টি গবেষণা সেন্টার রয়েছে। মেডিকেল সেন্টারসহ অনেক সেবা প্রদানকারী অবকাঠামো আছে।
এ প্রতিষ্ঠানগুলো সেবা দেওয়ার জন্য এখন সেভাবে উপযুক্ত নয়। প্রথম ধাপে শিক্ষার্থীদের জন্য দুটি হল করার পরিকল্পনা রয়েছে, আবাসনসংকট সমাধানের জন্য। জরাজীর্ণ ভবনগুলোর সংস্কার করা হবে। পাশাপাশি আধুনিক মানসম্পন্ন ক্লাসরুম ও হলরুম, আধুনিক লাইব্রেরির পরিকল্পনা তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। যেসব অভ্যন্তরীণ রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে, সেগুলো খোলা হবে। ফলে গ্রিন স্পেসও আমাদের বাড়বে। একাডেমিক ও অবকাঠামোগত মাস্টারপ্ল্যান সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলে পঠন-পাঠন, জ্ঞানচর্চা, জ্ঞান সৃজনে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ ও মনোযোগ বাড়বে।
সূত্র : আজকের পত্রিকা//