বাজারমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাজধানীর ৬ স্থানে বসবে 'জনতার বাজার'
ঢাকা জেলা প্রশাসন নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের বাজারমূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং জনজীবনে স্বস্তি আনার লক্ষ্যে রাজধানীর ৬টি স্থানে ‘জনতার বাজার’ প্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছে। আজ শনিবার (১৮ জানুয়ারি) কামরাঙ্গীরচর কুড়ারঘাট মেডিকেল মোড়ে এক মতবিনিময় সভায় এই তথ্য জানান ঢাকার জেলা প্রশাসক তানভীর আহমেদ।
এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, এটি বিশেষভাবে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য বড় সহায়ক হবে। তবে পণ্যের সরবরাহ, বাজারের নিরাপত্তা এবং পণ্যের পরিমাণ যথেষ্ট হওয়া নিশ্চিত করতে মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।
সভায় তানভীর আহমেদ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ক্রেতারা অভিযোগ করে আসছেন যে কৃষকের কাছ থেকে ভোক্তা পর্যায়ে আসতে পণ্যগুলোর দাম অনেক বেড়ে যায়, কারণ বিভিন্ন মধ্যস্বত্বভোগী কয়েকটি পর্যায়ে দাম বাড়িয়ে দেয়। এই উদ্যোগের মাধ্যমে সরাসরি কৃষক এবং ভোক্তার সংযোগ স্থাপন করা হবে, যার মাধ্যমে পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। কৃষি বিভাগ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এই উদ্যোগে সহায়তা করবে।
এ সময় আরও জানানো হয়, বর্তমানে নিত্যপণ্যের বাজারমূল্য অত্যন্ত বেড়ে গেছে, যা ক্রেতাদের জন্য এক বড় চাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিছু অসৎ ব্যবসায়ী দাম বাড়িয়ে বিপুল টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে, ফলে জনঅসন্তোষ সৃষ্টি হচ্ছে। সরাসরি উৎপাদক এবং আমদানিকারকের কাছ থেকে পণ্য এনে বিক্রি করা হলে এই দৌরাত্ম্য কমানো সম্ভব হবে। বিভিন্ন জেলায় ইতোমধ্যে এই ধরনের বাজার বসানো হয়েছে, যা জনমনে ইতিবাচক সাড়া ফেলেছে এবং ঢাকাতেও এই উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
‘জনতার বাজার’-এ মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, সবজি এবং অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সাশ্রয়ী দামে বিক্রি হবে। প্রাথমিকভাবে কামরাঙ্গীরচরসহ ঢাকার ছয়টি স্থানে এই বাজার বসানো হলেও পর্যায়ক্রমে এর পরিসর বাড়ানো হবে। বাজার পরিচালনায় সরকারি জায়গায় অবকাঠামো তৈরি করে স্থানীয় উদ্যোক্তা, শিক্ষার্থী এবং বেকার যুবকদের সম্পৃক্ত করা হবে। পণ্য কেনার জন্য নির্ধারিত মূল্য তালিকা অনুসরণ করা হবে, এবং ক্রেতারা ডিজিটাল পদ্ধতিতে টাকা পরিশোধ করে একটি কোড পাবেন, যা দেখিয়ে তারা পণ্য সংগ্রহ করবেন।
বাজারের বিশেষত্ব হল, এটি জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তর-সংস্থার সহযোগিতায় পরিচালিত হবে। যেখানে যে পণ্যের দাম তুলনামূলক কম থাকবে, সেখান থেকে সরাসরি তা সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করা হবে। বেচাকেনা এবং পরিবহন ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় উদ্যোক্তা ও ছাত্র-জনতাকে দায়িত্ব দেয়া হবে। প্রতিটি পণ্য জেলা প্রশাসন বা সংশ্লিষ্ট কমিটির মাধ্যমে নির্ধারিত দামে বিক্রি করা হবে।
ছয়টি স্থানে বাজার বসবে—ঢাকার কামরাঙ্গীরচর, মোহাম্মদপুর, গুলশান, মিরপুর, বাড্ডা এবং ডেমরা। ধীরে ধীরে বাজারের সংখ্যা বাড়ানো হবে এবং রমজানে বিশেষ সুবিধা প্রদান করা হবে।
এ সভায় উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপ-পরিচালক মো. ইকবাল হোসেন চৌধুরী, ঢাকার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. শামীম হোসাইন, সিনিয়র সহকারী কমিশনার তানজিল পারভেজ, লালবাগ জোনের সহকারী কমিশনার শরীফুল ইসলাম, এবং অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তা ও স্থানীয় প্রতিনিধিরা।