রাজউকে 'জলবায়ু সহিষ্ণু সবুজ কর্মপরিকল্পনা' শীর্শক কর্মশালা অনুষ্ঠিত
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও Deutsche Gesellschaft fur International Zusammenarbeit (GIZ) কর্তৃপক্ষ প্রস্তুতকৃত এবং City Climate Finance Gap Fund এর সহায়তায় হাজারীবাগ ও লালবাগ এলাকায় সমীক্ষার মাধ্যমে প্রণয়নকৃত Climate Resilient & Green Action Plan for Hazaribagh & Lalbagh এর পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়েছে।
এ পরিকল্পনা উপস্থাপনে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও অংশীজনের সমন্বয়ে বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) দিনব্যাপী কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। বিষেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিব মোঃ নবীরুল ইসলাম।
এছাড়াও অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন GIZ এর বাংলাদেহসের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর মিস মার্টিনা বারকার্ড।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রাজউকের চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মোঃ ছিদ্দিকুর রহমান সরকার।
অনুষ্ঠানে নগর পরিকল্পনাবিদ মোঃ আশরাফুল ইসলাম হাজারীবাগ এবং লালবাগকে জলবায়ু সহিষ্ণু এবং পরিবেশবান্ধব একালায় রূপান্তর করার জন্য উক্ত পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে জানান।
কর্মশালায় উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয়ের মধ্যে ছিলো- ঢাকাকে আরও বাসযোগ্য এবং টেকসই শহরে পরিণত করা, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সুবিধা সৃষ্টি, ঝুঁকি প্রতিরোধ, সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন, জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধি করা ইত্যাদি।
এ সময় GIZ এর বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর মিস মার্টনা বারকার্ড ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের একটি উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার আকাঙ্ক্ষার ওপর জোর দেন। তিনি উল্লেখ করেন যে, আগামী বছরগুলোতে ঢাকা ও চট্টগ্রামের মতো শহরগুলোকে টরেন্টো, আমস্টারডাম এবং ফ্রাঙ্কফুর্টের মতো শহরের সঙ্গে তুলনা করা হবে।
এ সময় তিনি আর্থ-সামাজিক চ্যালেঞ্জ, যানযট, দূষণ এবং অপর্যাপ্ত পরিষেবাগুলি ব্যাপকভাবে মোকাবেলার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, "জলবায়ু স্থিতিস্থাপক এবং সবুজ কর্ম পরিকল্পনা একটি কৌশলগত উদ্যোগ যা ভবিষ্যত সবুজ এবং জলবায়ু স্থিতিস্থাপক উন্নয়নকে গাইড করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।"
রাজউকের চেয়ারম্যান মোঃ সিদ্দিকুর রহমান এ সময় হাজারীবাগ ও লালবাগে সবুজ ও পরিবেশবান্ধব অবকাঠামো উন্নয়নের গুরুত্ব পুনর্ব্যাক্ত করেন। তিনি বলেন, "আমরা একটি সবুজ, পরিচ্ছন্ন এবং টেকসই এলাকা তৈরি করতে স্থানীয় জনগণের সাথে একত্রে কাজ করতে চাই, যা আমাদের সবার জন্য একটি উন্নত মনের জীবন নিশ্চিত করবে। আমরা বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে একটি সবুজ, সুন্দর এবং জলবায়ু-সহনশীল পরিবেশ তৈরি করবো, নান্দনিক পার্ক এবং খেলার মাঠ স্থাপন এবং পরিবেশবান্ধব ভবন নির্মাণ করবো।"
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিব মোঃ নবীরুল ইসলাম তার বক্তব্যে ঢাকা শহরের দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, যেমন, অবকাঠামো, মৌলিক সেবা, ভূমি, আবসন এবং পরিবেশের উপর চাপ ইত্যাদি তুলে ধরেছেন এবং এসকল সমস্যা সমাধানের জন্য প্রকল্পটির গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এই এলাকাকে পুনঃউন্নয়নের মাধ্যমে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, আয় বৃদ্ধি এবং জীবিকার মান উন্নয়ন করা সম্ভব।
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী প্রকল্পে উল্লেখিত হাজারীবাগের পুরাতন ট্যানারি এলাকা এবং লালবাগ এলাকার জন্য যে অঞ্চলভিত্তিক সমাধান প্রণয়ন করা হয়েছে, তা টেকসই উন্নয়নে সমাধানের জন্য সহায়ক হবে বলে মনে করেছেন। তিনি বলেন, হাজারীবাগ ও লালবাগ পুনর্জাগরণ পরিকল্পনাটি জলবায়ু পরিবর্তন, স্থানীয় জনগণের প্রয়োজন, পরিবেশগত ঝুঁকি এবং ঐতিহ্যের উপর গুরুত্ব দিয়ে তৈরি করা হয়েছে।
মন্ত্রী আরও বলেন, টেকসই নগর ও জীবনযাপন নিশ্চিত করার জন্য সরকার সূর্যের আলো, নির্মল বায়ু, বিশুদ্ধ পানি, উন্নত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং সবুজায়নের মাধ্যমে জীবন ও পরিবেশের মান উন্নত করার বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। পরিকল্পনা সফল হলে এসডিজি অভীষ্ট-১১ (বাসযোগ্য ও টেকসই শহর ও গ্রাম তৈরি করা) এবং অভীষ্ট-১৩ (জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই করা) অর্জন সম্ভব হবে, যার ফলে নগরবাসী দুর্যোগ সহনশীল ও পরিবেশবান্ধব শহরে বসবাস করতে পারবে।
উক্ত আলোচনা প্রাণবন্ত ও সফল করার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বিশেষজ্ঞদের প্রশ্নোত্তর পর্ব ও আলোচনার ব্যবস্থা ছিলো।
ঢাকা আরবান রজেনারেশন প্রকল্পের সার সংক্ষেপ:
ষাটের দশকে স্থাপিত হাজারীবাগ ট্যানারি এলাকা ছিল বাংলাদেশের একমাত্র চামড়া শিল্প ট্যানারি। ট্যানারি থেকে অপরিশোধিত রাসায়নিক বর্জ্য বুড়িগঙ্গা নদীতে ফেলা হতো, যা নদী ও আশেপাশের পরিবেশের জন্য বিপর্যয়কর ছিল। পরিবেশ দূষণের কারণে ট্যানারিগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শিল্পটি ২০১৭ সালে সাভারে স্থানান্তরিত করা হয়। এই এলাকাটি ১১৩ একরজুড়ে বিস্তৃত।