কী হচ্ছে রাবিতে?
-1200927.jpg?v=1.1)
ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি)। পোষ্য কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে ৫ ঘণ্টা ধরে জুবেরী ভবনে উপ-উপাচার্য (প্রোভিসি) অধ্যাপক মাঈন উদ্দীনসহ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে রেখেছেন শিক্ষার্থীরা। বিকেল ৪টার দিকে তাদের অবরুদ্ধ করা হয়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত (রাত ৯টা) জুবেরী ভবনে উপ-উপাচার্য, রেজিস্ট্রার, প্রক্টর ও জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসকসহ কয়েকজন শিক্ষক অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছেন।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব তার নিজ বাসভবনে শিক্ষকদের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসেছেন বলে জানা গেছে।
এর আগে দুপুরে উপ-উপাচার্যদ্বয়ের বাসভবনে শিক্ষার্থীরা তালা দিলে বাসভবনের ভেতরে ঢুকতে না পেরে ফিরে আসেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মাঈন উদ্দীন খান, প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান। একপর্যায়ে তারা জুবেরি ভবনের দিকে আসতে থাকলে শিক্ষার্থীরাও স্লোগান দিতে দিতে তাদের পেছনে আসের। এ সময় জুবেরী ভবনের বারান্দায় আসলে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক এবং ছাপাখানার এক কর্মকর্তা শিক্ষার্থীদের আটকানোর চেষ্টা করেন।
একপর্যায়ে হাতাহাতি শুরু হয়। এ সময় উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মাঈন উদ্দীন খানকে চারপাশ থেকে আটকে দেন শিক্ষার্থীরা। পরে হাতাহাতির একপর্যায়ে উপ-উপাচার্য জুবেরী ভবনের দ্বিতীয় তলায় চলে গেলে শিক্ষার্থীরা তাকে ভবনের দ্বিতীয় তলার বারান্দায় অবরুদ্ধ করে রাখেন। এরই মধ্যে সেখানে ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক কামাল উদ্দিন, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ, জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক আক্তার হোসেন মজুমদারসহ কয়েকজন শিক্ষক উপস্থিত হন। তাদেরকেও অবরুদ্ধ করা হয়।
এদিকে এই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন ছাত্রশিবির-ছাত্রদলসহ বাম সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
রাবি ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি মুজাহিদ ফয়সাল বলেন, আর মাত্র চার দিন পর রাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি, একটি মীমাংসিত ইস্যু—পোষ্য কোটাকে সামনে এনে নির্বাচন বানচালের অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় আজ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মধ্যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটে গেছে।
তিনি আরও বলেন, আজ এখানে দলমত নির্বিশেষে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমে এসেছে। আমাদের একটাই উদ্দেশ্য— এই অযৌক্তিক পোষ্য কোটাকে আর ফিরতে দেওয়া যাবে না।
রাবি ছাত্র অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আল শাহরিয়ার (শুভ) বলেন, প্রশাসনের কাছে আমাদের দাবি ছিল ন্যায়সঙ্গত। কিন্তু আজ আমাদের ওপর পরিকল্পিতভাবে যে হামলা চালানো হয়েছে, তা অত্যন্ত নিন্দনীয় ও অগ্রহণযোগ্য। আমরা ঘোষণা করছি যে, পোষ্য কোটা বাতিল না হওয়া পর্যন্ত ও আমাদের ন্যায্য অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত আমরা এই ভবন ছাড়ব না। পাশাপাশি আমাদের ওপর যে সহিংসতা হয়েছে তার সুষ্ঠু বিচার হওয়া প্রয়োজন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান বলেন, পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীরা উপ-উপাচার্য স্যারকে অবরুদ্ধ করে তার বাসায় তালা ঝুলিয়ে দেয়। পরে আমরা জুবেরি ভবনের লাউঞ্জে বসি। সেখানে শিক্ষার্থীরা আবারও আমাদের বাধা দেয়। আমরা ফিরে গিয়ে পুনরায় আসার পর ভবনে ঢোকার চেষ্টা করলে তারা আবারও বাধা দেয়। এ সময় ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। ধাক্কাধাক্কির মধ্যেই আমার হাতের ঘড়ি ও সঙ্গে থাকা ১০ হাজার টাকা হারিয়ে যায়। ধাক্কাধাক্কি হতে পারে, কিন্তু আমার হাতের ঘড়ি ও ১০ হাজার টাকা হারিয়ে যাওয়া কোনোভাবেই স্বাভাবিক নয়।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) ভর্তি কমিটির সভায় শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য শর্তসাপেক্ষে প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধায় (পোষ্য কোটা) ভর্তির সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এরপর থেকেই বিক্ষোভ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীরা। পোষ্য কোটা পুনর্বহালের ঘোষণার পরপরই উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেন তারা। পরে রাত ১২টা পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলমান ছিল। এতে নতুন বিক্ষোভের ঘোষণা দিয়ে আন্দোলন স্থগিত করেন শিক্ষার্থীরা।
ঘোষণা অনুযায়ী গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে জোহা চত্বরে এক সমাবেশ করেন তারা। এক ঘণ্টার বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে তাদের কর্মসূচি স্থগিত করেন। এরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষার্থী আসাদুল ইসলাম কাফনের কাপড় পরে এককভাবে আমরণ অনশনে বসেন। পরে আরও আটজন শিক্ষার্থী একাত্মতা প্রকাশ করে অনশনে যোগ দেন। বর্তমানে অনশন চলমান রয়েছে। দুইজন শিক্ষার্থী অসুস্থ হওয়ায় তাদের হাসপাতালে নেওয়া হয়।