আমাদের মরিচের বাজার যেভাবে বেড়ে ওঠছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ৩১ মার্চ ২০২৪, ০৩:৩৩ PM

এইতো ১৫-২০ বছর আগেও ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকায় চরাঞ্চলে বলার মতো তেমন ফসল হতো না। এখন সেই ধুধু বালুচর পরিণতি হয়েছে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মতে, বর্তমানে বাংলাদেশের চরাঞ্চলে প্রায় ২৫-৩২ রকমের ফসলের আবাদ হচ্ছে। প্রধান অর্থকরী ফসলের মধ্যে আছে মরিচ, ভুট্টা ও মিষ্টি কুমড়া।

এগুলোর মধ্যে মরিচ দীর্ঘদিন ধরে কৃষককে ভালো পরিমাণে অর্থ দিচ্ছে বলে চরে এর চাষের পরিমাণ বাড়ছে।

বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার নয়াপাড়া চরের কৃষক আব্দুর রাজ্জাকের বয়স এখন ৬৫ বছর। তিনি ছোটবেলা থেকে হাটশেরপুর চরাঞ্চলে বাস করছেন। আব্দুর রাজ্জাক এ বছর প্রায় আড়াই বিঘা জমিতে হাইব্রিড মরিচের চাষ করেছেন। প্রতি বিঘায় এই পর্যন্ত তিনি ফলন পেয়েছেন ১২০-১৩০ মণ। বিঘাপ্রতি খরচ হয়েছে ৪০-৪৫ হাজার টাকা। খরচ বাদ দিয়ে তিনি প্রতি বিঘায় লাভ করেছেন প্রায় এক লাখ টাকা।

আব্দুর রাজ্জাক বলেন, 'এই ২০ বছর আগেও সেচের ব্যবস্থা ছিল না। চরে কোনো অর্থকরী ফসল হতো না। শুধুমাত্র কাউন, চিনা বাদাম ও ডাল চাষ হতো। এতে করে চরের মানুষের মুখে দুই বেলা খাবার জুটতো না। এখন দিন একেবারেই বদলে গেছে। এখন চরে সেচের ব্যবস্থা হয়েছে। নানান রকমের ফসল হচ্ছে। এই সব ফসলের মধ্যে মরিচ চাষ করে ভালো পয়সা পাওয়া যাচ্ছে।'

মরিচ
মৌসুমি ব্যবসায়ীরা কৃষকের কাছ থেকে পাকা মরিচ কিনে চাতালে শুকিয়ে বিক্রি করছেন।


গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার বাজে ফুলছড়ি গ্রামের কৃষক মতিউর রহমান (৬০) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মাত্র ১৫ বছর আগেও মরিচ থেকে ভালো পয়সা পাওয়া যেত না। কারণ দেশি মরিচের ফলন বেশি ভালো হয় না। হাইব্রিড মরিচ আসার পর এখন বিঘায় ১০০ থেকে ১৩০ মণ মরিচ হচ্ছে। এক লাখ থেকে দেড় লাখ টাকা বেশি লাভ হচ্ছে।'

সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুসারে, এই উপজেলার পাঁচ ইউনিয়ন পুরোপুরি যমুনা নদীর চর। এখানে প্রায় ১৪ হাজার হেক্টর ফসলি জমির মধ্যে এ বছর মরিচের আবাদ হয়েছে তিন হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে। ফলন হয়েছে আট হাজার ৭১০ টন শুকনো (লাল মরিচ) মরিচ। এর বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ২৮২ কোটি ২১ লাখ টাকা।

বগুড়ার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, জেলায় এ বছর কাঁচা মরিচ চাষ হয়েছে সাত হাজার ২৩৮ হেক্টর জমিতে। এর ৮০ শতাংশ চাষ হয়েছে সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা উপজেলার চরাঞ্চলে। গত বছর বগুড়ায় মরিচ আবাদ হয়েছিল সাত হাজার ৮২০ হেক্টর জমিতে। ফলন হয়েছিল দুই হাজার ২৬৩ টন। এর বাজারমূল্য ছিল প্রায় এক হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এ বছর শুকনো মরিচের দাম কম হলেও প্রায় এক হাজার কোটি টাকার মরিচ উৎপাদন হয়েছে।

কৃষি অফিসের দেওয়া তথ্যে জানা গেছে, দেশের মোট পাঁচ শতাংশ মরিচের চাষ হয় বগুড়ায়। এর মধ্যে ৫০ শতাংশ হয় সারিয়াকান্দি উপজেলায়।

সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল হালিম বলেন, 'সারা দেশে বগুড়ার লাল মরিচের সুনাম আছে। বগুড়ার মধ্যে সবচেয়ে ভালো মরিচ হয় সারিকান্দি উপজেলার চরাঞ্চলে। কারণ এই অঞ্চলটি এগ্রি ইকোলজিক্যাল জোনে পড়েছে। এটি মরিচ চাষের জন্য খুবই উপযোগী।'

বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর দেওয়া তথ্য অনুসারে, ১৯৯০ দশকে বগুড়ায় হাইব্রিড মরিচের চাষ শুরু হয় তবে তা খুব সামান্য পরিমাণে। ২০০৪ সালে সরকার এই অঞ্চলের চরের মানুষের দরিদ্রতা দূর করতে 'চর লাইভলিহুড প্রোগ্রাম (সিএলপি)' বাস্তবায়ন করে। তখন থেকে উন্নতমানের ফসলের বীজ চরের কৃষকের মধ্যে বিতরণ করা হয়। সেই থেকে চরে মরিচ চাষ করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন।'