পৌষের আগেই উত্তরাঞ্চলে তীব্র শীতের দাপট; জনজীবন বিপণ্ণ
এখনো পৌষ মাস শুরু হতে ৪ দিন বাকি। এর মাঝেই দেশের সর্ব-উত্তরের জেলাগুলোতে জেঁকে বসেছে শৈত্যপ্রবাহ। উত্তরের হিমেল বাতাসে রাতে বাড়ছে শীতের শিরশিরে অনুভূতি। ঘন কুয়াশার কারণে সকালে সড়কে যানবাহনগুলোকে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে হয়েছে। ঘন কুয়াশার কারণে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ও আরিচা-কাজীরহাট নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকছে এক বেলা। মাঝনদীতে আটকা পড়ছে ছোট-বড় ফেরি। উত্তরের জেলা পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রামে তীব্র শীতের দাপটে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, সোমবার (১১ ডিসেম্বর) সারা দেশে তাপমাত্রা কমতে পারে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। এছাড়া সকালে রাজধানীসহ প্রায় সারাদেশ ঘন কুয়াশায় ঢেকে যাওয়ার আভাসও দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও আমেরিকান আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল বিশ্লেষণ করে বলেন, ঘূর্ণিঝড় মিগজাউমের প্রভাবে বৃষ্টি শেষ হয়ে গেলেও ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বাতাসে যে পরিমাণ জলীয় বাষ্প ছড়িয়ে পড়েছে ও বৃষ্টির কারণে ভূপৃষ্ঠে মাটির আর্দ্রতা বৃদ্ধি ও ভারতের হিমালয় পর্বতের পাদদেশ থেকে আগত শীতল বাতাসের কারণে গত শুক্রবার সন্ধ্যার পর থেকে রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের বেশির ভাগ জেলা ঘন কুয়াশার চাদরে ঢেকে দিয়েছিল যা পরদিন শনিবার দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।
গতকাল রবিবার সকাল ৬টার সময় কুয়াশার চাদরে ঢাকা ছিল সারা দেশ। একাধিক জেলায় দুপুর ১২টা পর্যন্ত সূর্যের আলো দেখা যায়নি। গতকাল রাতে সবচেয়ে ঘন কুয়াশা বিরাজ করেছে ঢাকা, খুলনা, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোর ওপরে। আজ সোমবার সকালে ঢাকা শহরে কুয়াশা থাকার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। রাতে মহাসড়কগুলোতে দৃষ্টিসীমা ১০০ থেকে ৩০০ মিটারের নিচে নেমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে আজ রাতেও যোগাযোগে দুর্ঘটনার প্রচণ্ড ঝুঁকি রয়েছে।
আবহাওয়া বিশ্লেষকরা বলছেন, সারা দেশে শীতের আমেজ শুরু হয়েছে পুরোদমে। দুই-এক দিনের মধ্যেই আরও হ্রাস পেতে পারে রাতের তাপমাত্রাও। রাজধানীতেও ধীরে ধীরে তাপমাত্রা কমে শীত বাড়তে পারে। মেঘ পুরোপুরি কেটে যাওয়ার পর বেড়েছে শীতের তীব্রতা। এ ছাড়া ডিসেম্বরের মাঝামাঝিতে দেশের তাপমাত্রা সর্বনিম্ন ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসতে পারে।
আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ জানিয়েছেন, উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ বিহার ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছে। আজ সোমবার মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের উত্তরাঞ্চলে ও নদী অববাহিকায় মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং দেশের অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা ১-৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। ঢাকায় পশ্চিম-উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ থাকবে ৮-১২ কিলোমিটার।
হঠাৎ এমন আবহাওয়া পরিবর্তনে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। দেখা দিচ্ছে ঠাণ্ডাজনিত বিভিন্ন রোগবালাই। হাসাপাতালগুলোতে বাড়ছে রোগির সংখ্যা। যাদের মধ্যে বেশিরভাগই শিশু ও বয়স্করা।
এছাড়াও উত্তরাঞ্চলের এসব এলাকায়, সূর্যাস্তের সাথে সাথে কমতে থাকে তাপমাত্রা। শীতবস্ত্রের অভাবে নিদারুন কষ্টে দিন কাটছে হতদরিদ্র মানুষের। তবে জেলা প্রশাসন বলছে, শীতার্তদের সহায়তায় প্রস্তুতি আছে তাদের।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক সাইদুল আরীফ বলেন, আমাদের কাছে পর্যাপ্ত খাবার মজুদ আছে। আমরা সর্বাত্মকভাবে শীতার্ত মানুষের পাছে আছি। সরকারের সবরকম প্রস্তুতি নেয়া আছে।
এদিকে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকেই উত্তরাঞ্চলে শৈতপ্রবাহের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। দুই-এক দিনের মধ্যেই আরও হ্রাস পেতে পারে রাতের তাপমাত্রাও।