এআই সক্ষমতা বাড়াতে যে উদ্যোগ নিল চীন
-1150849.jpg?v=1.1)
সম্প্রতি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তিতে সক্ষমতা বাড়াচ্ছে চীন। এবার এআই বিষয়ে চীনের শীর্ষ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতক পর্যায়ে ভর্তি সংখ্যা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে। ‘জাতীয় কৌশলগত চাহিদা’-কে প্রাধান্য দিয়ে এআই’র মতো বিষয়ে আরও দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে এমন পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। নিজেদের এআই সক্ষমতা বাড়াতে চীন সরকারের গৃহীত জাতীয় পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই দেশটির শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এআই প্রযুক্তিকে প্রাধান্য দিতে শুরু করেছে।
উল্লেখ্য, গত মাসেই (ফেব্রুয়ারিতে) চীনের এআই স্টার্টআপ ডিপসিকের উপর ভিত্তি করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই-বিষয়ক কোর্স চালু করেছে চীনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। গত জানুয়ারি’তে ডিপসিক তাঁদের এআই অ্যাসিসট্যান্ট টুল ও আর১ (আর ওয়ান) রিজনিং এআই মডেল এনে বিশ্বব্যাপী আলোড়ন তৈরি করে। ডিপসিকের ভি৩ (ভি থ্রি) ও আর১ (আর ওয়ান) মডেলগুলো সক্ষমতার দিক থেকে ওপেনএআই ও গুগলের এআই মডেলগুলোর প্রায় সমকক্ষ। অথচ আমেরিকান প্রতিষ্ঠানগুলোর তুলনায় ডিপসিক তাঁদের এআই মডেলগুলো তৈরি করেছে ভগ্নাংশ পরিমাণ খরচে।
ডিপসিকের আগমনকে অনেকেই ‘স্পুটনিক মুহুর্ত’ বলে আখ্যা দিয়েছে। ইতোমধ্যেই প্রযুক্তি বিশ্বের শীর্ষ অনেক প্রতিষ্ঠান ডিপসিকের তৈরি এআই প্রযুক্তিকে গ্রহণ করেছে এবং এগুলো নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের গবেষণা চালাচ্ছে। ডিপসিকের সাফল্যকে শুধুমাত্র একটি স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানের সাফল্য হিসেবে দেখছে না প্রযুক্তি বিশ্ব, বরং আমেরিকান প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বীতায় চীনের উল্লেখযোগ্য সাফল্য হিসেবেই প্রতীয়মান হচ্ছে ডিপসিকের এআই অ্যাসিস্ট্যান্ট ও এর কেন্দ্রে থাকা মডেলগুলো।
চীনের পেকিং বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রতি (৮ মার্চ) জানিয়েছে যে, ২০২৫ সালে তাঁরা স্নাতক পর্যায়ে ১৫০ জন শিক্ষার্থী অতিরিক্ত ভর্তি করবে। জাতীয় কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সহ মৌলিক ও উদীয়মান প্রযুক্তি সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়কে প্রাধান্য দিয়েই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে চীনের এই শীর্ষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। মূলত বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি, ইঞ্জিনিয়ারিং ও ক্লিনিক্যাল মেডিসিন বিষয়গুলোকেই আরও বেশি করে ফোকাস করতে চায় তাঁরা।
রেনমিন বিশ্ববিদ্যালয়ও জানিয়েছে যে, উদ্ভাবনী প্রযুক্তির উন্নয়নে তাঁরা ১০০ জন শিক্ষার্থীকে এআই প্রযুক্তি নিয়ে উচ্চতর পড়াশোনার সুযোগ করে দিবে। নিজেদের এই সিদ্ধান্তের পেছনে কারণ হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে যে, চীনকে শিক্ষাখাতে শক্তিশালী দেশ হিসেবে গড়ে তোলার বিশাল পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তাঁরা এমনটা করতে চলেছে।
শাংহাই জিয়াও তং বিশ্ববিদ্যালয় ১৫০ জন শিক্ষার্থীকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট, বায়োমেডিসিন, স্বাস্থ্যসেবা এবং নতুন এনার্জির মতো বিষয়গুলোতে উচ্চতর শিক্ষা অর্জনের সুযোগ করে দিবে। তাঁদেরও উদ্দেশ্য হচ্ছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি এবং অত্যন্ত জরুরী উদীয়মান শিল্পের বিকাশ ঘটাতে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করা।
উল্লেখ্য, চীনের লক্ষ্য হচ্ছে ২০৩৫ সালের মধ্যে একটি শক্তিশালী শিক্ষা ব্যবস্থার দেশ হিসেবে নিজেদেরকে গড়ে তোলা। এই লক্ষ্যে দেশটি প্রথমবারে মতো একটি জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করেছে গত জানুয়ারিতে। উক্ত কর্মপরিকল্পনার অধীনে শিক্ষা ব্যবস্থা ও উদ্ভাবনী দক্ষতার উন্নয়ন কার্যক্রম সমন্বয় করতে চায় চীন।
গত ডিসেম্বরে দেশটির শিক্ষা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে, তাঁরা শিক্ষার্থীদের মাঝে সৃজনশীলতা ও বিজ্ঞান নিয়ে আগ্রহ তৈরিসহ ডিজিটাল দক্ষতা বিকাশের লক্ষ্যে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করবে।
উল্লেখ্য, চীনের ডিপসিকের সাফল্যের পেছনেও আছে দেশটির শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারী একদল তরুণ, উদীয়মান গবেষক। চীনের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ভিসা প্রদানে আমেরিকা সরকারের সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রেক্ষাপটে চীন সরকার বড় অংকের অর্থ বিনিয়োগ করেছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে বিশাল আকারের দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে। এই লক্ষ্যে তাঁরা যে সঠিক পথেই এগোচ্ছে ডিপসিক এআই সে কথাই বলছে।
সূত্র: রয়টার্স