বাজারে এলো আইফোন সিক্সটিন; চলুন জেনে নেওয়া যাক এর ফিচারসমূহ

নিজস্ব প্রতিবেদক
আন্তর্জাতিক জার্নাল আন্তর্জাতিক জার্নাল
প্রকাশিত: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:১৫ AM

বিশ্বব্যাপী আইফোন ব্যবহারকারীদের জন্য সুখবর। অ্যাপলের বহুল প্রতীক্ষিত আইফোন ১৬ সিরিজের ফোনগুলো উন্মোচিত হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই আইফোনপ্রেমীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্ধুতে এখন আইফোন ১৬ এবং এর সম্ভাব্য নতুন ফিচারসমূহ।

সোমবার (৯ আগস্ট) উল্লেখ্য আইফোনের নতুন সিরিজ ছাড়াও আজকের ‘গ্লোটাইম’ ইভেন্টে উন্মোচিত হয়েছে অ্যাপলের নতুন সিরিজের এয়ারপড ও অ্যাপল ওয়াচ। চলুন তাহলে অ্যাপলের বহুল প্রতীক্ষিত এই ‘গ্লোটাইম’ ইভেন্ট সম্পর্কিত কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক:

আইওএস ১৮ ও আইওএস ১৮.১ অপারেটিং সিস্টেম

আইফোন ১৬ বাজারে আসার সাথেই সাথেই এর ব্যবহারকারীরা অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স-এর ফিচারগুলো অ্যাক্সেস করতে পারবেন না। এজন্য তাদেরকে অপেক্ষা করতে হবে আইওএস ১৮.১ এর পূর্ণাঙ্গ ভার্সনটির জন্য- যেটি অক্টোবরেই চলে আসার কথা। তবে এরই মধ্যে আইওএস ১৮.১ এর তিনটি ডেভেলপার বেটা ভার্সন রিলিজ করেছে আইফোন। আর এই বেটা ভার্সনগুলোই জানান দিচ্ছে আইফোন ১৬ এর দারুন সব এআই ফিচারের কথা। উল্লেখ্য, এই ডেভেলপার বেটা ভার্সনগুলো ব্যবহার করে ইতোমধ্যেই আইফোন ১৫ প্রো এবং প্রো ম্যাক্স ব্যবহারকারীরা অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স প্ল্যাটফর্মের বিভিন্ন ফিচার অ্যাক্সেস করতে পারছেন।

আইওএস ১৮.১ এর পূর্ণাঙ্গ ভার্সন যেহেতু অক্টোবরের আগে আসছে না তাই প্রাথমিকভাবে আইফোন ১৬ ব্যবহারকারীদেরকে আইওএস ১৮ ব্যবহার করতে হবে। তবে এরই মধ্যে আইওএস ১৮ এর ৬টি আপডেট রিলিজ করেছে অ্যাপল- যার সর্বশেষটি এসেছে গত ২৯ আগস্ট। এখন অপেক্ষা আইওএস ১৮ এর ফাইনাল ভার্সনের। সাধারণত সেপ্টেম্বরে নতুন সিরিজের আইফোন উন্মোচনের এক সপ্তাহের মধ্যেই আইওএস-এর নতুন ভার্সন উন্মুক্ত করে অ্যাপল।

উল্লেখ্য, সোমবার আইফোন ১৬ উন্মোচিত হলেও বিক্রির জন্য অ্যাপলের আউটলেটগুলোতে পাওয়া যাবে ৭ থেকে ১০ দিন পর।

এ১৮ এবং এ১৮ প্রো চিপসেট

প্রসেসর হলো যেকোনো ডিভাইসের প্রাণ। সেদিক থেকে দেখলে নতুন আইফোন কিন্তু যথেষ্ট প্রাণশক্তিতে ভরপুর হতে যাচ্ছে এমনটা বলাই যায়। আইফোন ১৬ সিরিজে প্রসেসর হিসেবে থাকছে অ্যাপলের এ১৮ চিপসেট- যেগুলোর এআই সক্ষমতা এর পূর্ববর্তী প্রজন্মের (এ১৭) এর চেয়ে অনেক বেশি।

এছাড়া বাজারে প্রচলিত গুজব সত্য প্রমাণিত হলে, এ১৮ প্রো চিপসেটও দেখা যেতে পারে আইফোন ১৬ প্রো এবং প্রো ম্যাক্স মডেল দুটিতে। ৬টি কোর সমৃদ্ধ এ১৮ প্রো প্রসেসরটি ৩-ন্যানোমিটার প্রসেস প্রযুক্তিতে তৈরি করা হয়েছে। অনেকের মতে, এ১৭ প্রো এর তুলনায় এ১৮ প্রো ১০ শতাংশ দ্রুত গতিতে কাজ করতে সক্ষম।

নিঃসন্দেহে আইফোনের এযাবৎকালের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রসেসর এ১৮। শক্তিশালী নিউরাল প্রসেসিং ইউনিট সমৃদ্ধ এই চিপসেটটি উন্নত এআই ফিচারের কথা মাথায় রেখেই তৈরি। সার্বিকভাবে এ১৮ প্রসেসরগুলো আগের প্রজন্মের প্রসেসরের চেয়ে আরও জটিল কাজ দ্রুত গতিতে করতে সক্ষম।

ডিসপ্লে সাইজ

অ্যাপল সম্পর্কিত পণ্যের বিশ্বস্ত সূত্র ‘অ্যাপল হাব’ সম্প্রতি আইফোন ১৬ সিরিজ সম্পর্কিত বেশ কিছু তথ্য সামনে এনেছে (ফাঁস করেছে তাঁদের এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে)। সেখানে দেখা যাচ্ছে যে আইফোন ১৫ সিরিজের তুলনায় আইফোন ১৬ সিরিজের প্রো এবং প্রো ম্যাক্স মডেলে ২-ইঞ্চি বড় ডিসপ্লে পাবেন ব্যবহারকারীরা। অর্থাৎ প্রো মডেলে ৬.৩-ইঞ্চি এবং প্রো ম্যাক্স মডেলে ৬.৯-ইঞ্চি ডিসপ্লে থাকবে। অ্যাপল হাবের এই তথ্য সঠিক হলে প্রো ম্যাক্স মডেলের ৬.৯-ইঞ্চি হবে আইফোনের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ডিসপ্লে। এছাড়া ৬.৯-ইঞ্চি ওলেড প্যানেলের কল্যাণে আইফোনের সবচেয়ে উজ্জ্বল ডিসপ্লেও হবে আইফোন প্রো ম্যাক্স।

আইফোন ১৬ এর কালার

আইফোন ১৬ এর মডেলগুলোতে সাদা, কালো, নীল, সবুজ, গোলাপীর মতো রেগুলার কালারের পাশাপাশি একেবারে নতুন একটি কালার দেখা যেতে পারে। সবগুলো মডেলে না হলেও একটি বা দুটি মডেলে অপশন হিসেবে থাকতে পারে নতুন এই কালার। আর নতুন এই কালারটি হতে পারে ডেজার্ট টাইটানিয়াম বা রোজ গোল্ড টাইটানিয়াম।

অ্যাকশন ও ক্যাপচার বাটন

নতুন আইফোন সিরিজের ফোনগুলোর সাইড প্যানেলে যুক্ত হতে যাচ্ছে অ্যাকশন ও ক্যাপচার বাটন। সেলফি তোলার কাজটিকে সহজ করে তুলবে ক্যাপচার বাটন। অন্যদিকে অ্যাকশন বাটনের কল্যাণে ব্যবহারকারীরা আরও সহজে আইফোনের বিভিন্ন ফাংশন অ্যাক্সেস ও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।

আইফোন ১৬ এর ক্যামেরা ফিচার

আইফোন ১৬ এর ডিজাইন সম্পর্কিত পরিবর্তনগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে এর ক্যামেরা অ্যালাইনমেন্ট। এর ব্যাক ক্যামেরাগুলো ভার্টিক্যাল বা লম্বালম্বি অবস্থায় দেখা যাবে (আগেরগুলোতে ত্রিভুজ ও আড়াআড়ি ছিলো)। পাশাপাশি আইফোন ১৬-এর প্রো এবং প্রো ম্যাক্স মডেলে টেট্রাপ্রিজম ৫এক্স অপটিক্যাল জুম দেখা যেতে পারে। তবে বেইজ ও প্লাস মডেল দুটিতে টুএক্স অপটিক্যাল জুম দেখার সম্ভাবনাই বেশি।

বেজ ও প্লাস মডেলে ১২ মেগাপিক্সেল আলট্রাওয়াইড ক্যামেরা থাকতে পারে। অন্যদিকে প্রো ও প্রো ম্যাক্সে দেখা যাবে ৪৮ মেগাপিক্সেল আলট্রাওয়াইড ক্যামেরা।

রিফ্রেস রেট

যারা উচ্চ রিফ্রেশ রেটে গেম খেলতে ভালোবাসেন তাদের জন্য সুখবর হলো নতুন আইফোনে আইফোন ১৫-এর চেয়ে বেশি রিফ্রেশ রেট পাওয়া যাবে। বেজ ও প্লাস মডেলে আগের মডেলগুলোর মতোই ৬০ হার্জ রিফ্রেশ রেট পাওয়া গেলেও প্রো ও প্রো ম্যাক্স মডেলে এবার ১২০ হার্জ রিফ্রেশ রেট উপভোগ করতে যাচ্ছেন আইফোনপ্রেমীরা।

ওয়াই-ফাই ৬ই এবং ওয়াই-ফাই ৭

বলা হচ্ছে প্রো এবং প্রো ম্যাক্স মডেল দু’টিতে ওয়াই-ফাই ৭ যুক্ত হতে পারে। তবে বেইজ ও প্লাস মডেলে যথারীতি দেখা যাবে ওয়াই-ফাই ৬ই।

ব্যাটারি

আইফোন ১৬ প্রো ম্যাক্সে সবচেয়ে শক্তিশালী ৪৬৭৬ মিলিঅ্যাম্পিয়ারের ব্যাটারি থাকতে পারে। তবে প্রো মডেলে দেখা যেতে পারে ৩৩৫৫ মিলিঅ্যাম্পিয়ারের ব্যাটারি। দুটি প্রো মডেলের ব্যাটারি ব্যাকআপ-এ এতোটা তফাৎ যদি সত্যিই থাকে তবে আইফোনপ্রেমীদের অনেকেই অবাক হবেন এটা নিশ্চিত।

আইফোন ১৬ এর সম্ভাব্য এআই ফিচারসমূহ:

এআই ফিচার-সমৃদ্ধ রাইটিং টুলস

অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স-এর কল্যাণে এআই-ভিত্তিক রাইটিং টুলস পাবেন আইফোন ১৬ ব্যবহারকারীরা। লেখালেখি করার এই টুলটি অ্যাক্সেস করা যাবে আইওএস-ভিত্তিক অ্যাপস এবং অন্যান্য থার্ড পার্টি অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমেও। কোন টেক্সট রিরাইট করা, টোন পরিবর্তন করা, ভুল খুঁজে বের করা এবং বানান ও ব্যাকরণগত সংশোধনের মতো কাজগুলো কার্যকরভাবে করা যাবে রাইটিং টুলটির মাধ্যমে। এছাড়া কোন টেক্সট থেকে সামারি করা, প্যারাগ্রাফ তৈরি করা, গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট বের করা এবং টেবিল ও তালিকা তৈরি করার মতো কাজগুলোও অনায়াসেই করতে পারবেন ব্যবহারকারীরা।

মেইল অ্যাপ্লিকেশন আসছে নতুন রুপে

আইফোন ১৬-এর মেইল অ্যাপে আসছে ‘প্রায়োরিটি মেসেজ’ নামক একটি এআই ফিচার। এর মাধ্যমে ইনবক্সের উপরে প্রায়োরিটি লিস্টে প্রতিটি ই-মেইলের একটি সামারি পাওয়া যাবে। ফলে কোন মেইলগুলোর রিপ্লাই আগে দিতে হবে সেটা সহজেই নির্ধারণ করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি থাকছে ‘স্মার্ট রিপ্লাই’ এর সুবিধাও।

এআই ফিচারের নোটস অ্যাপ

অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স-এর সহায়তায় নোটস অ্যাপ ব্যবহার করে এখন থেকে অডিও রেকর্ড, ট্রান্সক্রাইব এবং সামারাইজ করা যাবে। ফলে মিটিং মিনিটস তৈরির মতো কাজগুলো করতে আর সময়ক্ষেপণ হবে না।

স্মার্ট সিরি

অ্যাপলের ভয়েজ অ্যাসিসট্যান্ট ‘সিরি’ আগের চেয়ে আরও বেশি পার্সোনালাইজড ও স্মার্ট হচ্ছে। লার্জ ল্যাংগুয়েজ প্রসেস করার সক্ষমতা সম্পন্ন সিরি এবার থেকে আরও বেশি জটিল কাজ করতে পারবে। দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন প্রম্পট বুঝতে পারবে এবং সেগুলো ভালোভাবে প্রসেসও করতে পারবে। পাশাপাশি এবার থেকে কী-বোর্ডে টাইপ করে সিরি-কে নির্দেশ দেয়া যাবে। এছাড়া সিরির ফাংশন ও ডিজাইনেও নতুনত্ব দেখতে পাবেন ব্যবহারকারীরা।

ফটোজ অ্যাপেও থাকছে এআই ফিচার

এছাড়া ফটোজ অ্যাপেও এআই-ভিত্তিক বেশ কিছু অসাধারন ফিচার যুক্ত করা হয়েছে। এই যেমন ফোনের গ্যালারিতে থাকা অসংখ্য ছবি ও ভিডিও’র মধ্য থেকে নির্দিস্ট ছবি বা ভিডিও’টি এখন সহজে এবং খুব কম সময়ে খুঁজে বের করা সম্ভব। কারণ ফটোজ অ্যাপে আছে ন্যাচারাল ল্যাংগুয়েজ প্রসেসিং বা এনএলপি সক্ষমতা। এছাড়া এআই-ভিত্তিক এডিটিং টুলসও থাকবে ফটোজ অ্যাপে। আরেকটি আকর্ষণীয় ফিচার হচ্ছে ‘মেমোরিজ’- যার মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা ছবি ও ভিডিও দিয়ে সংক্ষিপ্ত স্টোরিলাইন তৈরি করতে পারবেন।

ইমেজ প্লেগ্রাউন্ড অ্যাপ

অ্যানিমেশন, ইলাসট্রেশন ও স্কেচ- এই তিনটি মোডেই ইমেজ ক্রিয়েট করা যাবে আইফোন ১৬-এর উন্নত ইমেজ প্লেগ্রাউন্ড অ্যাপটি দিয়ে। এই ফিচারটি মেসেজ অ্যাপেও ইন্টিগ্রেট করা থাকবে।

চ্যাটজিপিটি ইন্টিগ্রেশন

এখন থেকে জনপ্রিয় চ্যাটবট চ্যাটজিপিটি-এর উন্নত ফিচারগুলো অ্যাক্সেস করা যাবে আইফোন থেকেই। কেননা আইফোন ১৬-এ ইন্টিগ্রেট করা হয়েছে চ্যাটজিপিটি। সিরি-কে ব্যবহার করে চ্যাটজিপিটি’র সাথে সহজেই যুক্ত হতে পারবেন ব্যবহারকারীরা এবংবিভিন্ন প্রম্পটের মাধ্যমে কাজের নির্দেশও দিতে পারবেন। চ্যাটজিপিটি এখন থেকে আইওএস-এর রাইটিং টুলস, ইমেজ জেনারেশন টুলস এবং প্রাইভেসি প্রোটেকশনসহ অন্যান্য টুলসেও ব্যবহার করতে পারবেন আইফোন ১৬ ব্যবহারকারীরা।