যে পোঁকা খেয়ে ফেলবে প্লাস্টিক
![যে পোঁকা খেয়ে ফেলবে প্লাস্টিক](https://citizenjournal24.com/resources/img/article/202405/citizen_photo_(2)-1140444.png?v=1.1)
বিশেষ ধরনের এনজাইমের মাধ্যমে একধরনের পোকা প্লাস্টিক ভেঙে ফেলতে পারে। ওয়াক্স মথ নামের কীট একনজরে সাধারণ কীটের মতোই। সাধারণভাবে ওয়াক্স মথের লার্ভা মৌচাকে দেখা যায়। এসব কীটের কারণে মৌচাকের ক্ষতি হয়। মৌমাছি পালনকারীরা হাজার বছর ধরে এ ধরনের কীট সম্পর্কে জানেন। ২০১৭ সালে আণবিক জীববিজ্ঞানী ফেদেরিকা বার্টোচিনি এই কীটের মাধ্যমে নতুন এক চমক তৈরি করেন। স্প্যানিশ ন্যাশনাল রিসার্চ কাউন্সিলে মেরুদণ্ডী প্রাণীর ভ্রূণ বিকাশ নিয়ে গবেষণা করার সময় ফেদেরিকা এই প্রাণীর মাধ্যমে প্লাস্টিক সমস্যার সমাধান করেন।
বিজ্ঞানী ফেদেরিকা শৌখিন মৌমাছি পালনকারী। একবার মৌচাক পরিষ্কার করার পর প্লাস্টিকের ব্যাগে কিছু ওয়াক্স মথ বা কীট ফেলে দেন। পরে দেখা যায়, কীটের কারণে প্লাস্টিকের মধ্যে ছোট ছোট ছিদ্র তৈরি হচ্ছে। কীটের মুখের স্পর্শ যেখানেই লাগছে, সেখানেই প্লাস্টিকের ক্ষয় দেখা যাচ্ছে।
ফেদেরিকা বার্টোচিনি বলেন, ‘সময়টা আমার জন্য “ইউরেকা” মুহূর্ত ছিল। সেই ঘটনা ছিল গল্পের শুরু, গবেষণা প্রকল্পের শুরু। কীটগুলো এমন কিছু করছিল, যা আমরা কঠিন বলে মনে করি। প্লাস্টিক ভেঙে ফেলা কঠিন মনে হলেও কীটেরা খুব সহজে তা করে। বিশেষ ধরনের সেই কীট প্লাস্টিককে খাদ্য হিসেবে হজম করতে পারে। আমরা সেই কীটের মুখ থেকে নির্গত তরল সংগ্রহ করতে শুরু করি। কীটের লালায় দুটি গুরুত্বপূর্ণ এনজাইম দেখা যায়—সেরেস ও ডিমিটার। এই এনজাইম প্লাস্টিকের পলিথিন যৌগকে অক্সিডাইজড করতে পারে। আর এ কারণেই প্লাস্টিক ভেঙে যায়। এই কীটের বৈজ্ঞানিক নাম গ্যালেরিয়া মেলোনেলা।
বর্তমানে বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর ৪০ কোটি টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন হয়। এর মধ্যে মাত্র ১ কোটি ৯০ লাখ থেকে ২ কোটি ৩০ লাখ টন জলজ বাস্তুতন্ত্রে প্রবেশ করে। সাধারণভাবে প্লাস্টিক সম্পূর্ণরূপে বিনষ্ট হতে বা ভেঙে যেতে কয়েক দশক থেকে শতাব্দী পর্যন্ত সময় নেয়। প্লাস্টিক-দূষিত পরিবেশে মৌচাকের কীট ছেড়ে দেওয়া হলে বাস্তুতন্ত্রে নতুন চিত্র দেখা যেতে পারে। কীটের এনজাইম ব্যবহার করে প্লাস্টিক মোকাবিলায় আমূল পরিবর্তন আনার সুযোগ আছে।
বিজ্ঞানী ফেদেরিকা এখন বায়োরিসার্চ স্টার্টআপ প্লাস্টিসেনট্রপি ফ্রান্সের প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা। এ প্রতিষ্ঠান প্লাস্টিক ক্ষয়ে এনজাইমের ব্যাপক ব্যবহারের জন্য কাজ করছে। তিনি বলেন, ‘আমরা প্লাস্টিক বর্জ্যে এই এনজাইম প্রয়োগ করে সমস্যার সমাধান করছি। কিছু ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া প্লাস্টিক হজম করতে পারে। তবে কীটের মতো জটিল প্রাণীদের মধ্যে এটি অনেক বিরল। ২০২২ সালে প্লাস্টিকভোজী আরেকটি অমেরুদণ্ডী প্রাণীর খোঁজ মেলে। সুপারওয়ার্ম জোফোবাস মোরিও পলিস্টাইরিনের খাদ্য থেকে ওজন বাড়াতে পারে।’ নানা গবেষণায় এই বিজ্ঞানী ৩০ হাজারের বেশি এনজাইমের খোঁজ পেয়েছেন, যা ১০ রকমের প্লাস্টিক ধ্বংস করতে পারে।
সূত্র: বিবিসি