বিশ্বের ৫ম দেশ হিসেবে সফলভাবে চাঁদে অবতরণ করল জাপান
বিশ্বের পঞ্চম দেশ হিসেবে চাঁদের মাটি ছুঁয়ে ইতিহাস গড়লো জাপান। দেশটির মনুষ্যহীন চন্দ্রযান ল্যান্ডার স্লিম (মুন স্নাইপার নামেও পরিচিত) চাঁদে অবতরণ করেছে। খবর বিবিসি ও রয়টার্সের।
শনিবার (২০ জানুয়ারি) চাঁদে সফল অবতরণ করে জাপানের চন্দ্রযান ‘মুন স্নাইপার’। নিজস্ব প্রযুক্তিতে বানানো মনুষ্যবিহীন এই চন্দ্রযান নির্দিষ্ট লক্ষ্যের মধ্যেই অবতরণ করেছে বলে জানিয়েছে জাপানের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘জাক্সা’।
এর আগে কেবল যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন ও ভারত এই কৃতিত্ব অর্জন করতে পেরেছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাপানের মহাকাশ সংস্থার একটি রোবট সফলভাবে চাঁদে নেমেছে। তবে মহাকাশযানটির সৌরবিদ্যুৎ ব্যবস্থায় সমস্যা দেখা দিয়েছে। এখন ব্যাটারির ওপর নির্ভর করছে যানটি। ফলে এই মিশন হুমকির মুখে পড়তে পারে। ব্যাটারির শক্তি থাকবে আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা।
পৃথিবী থেকে চাঁদের সবচেয়ে কাছের অংশে অবতরণ করেছে ল্যান্ডারটি। তবে ঠিক কোন জায়গায় ল্যান্ডারটি রয়েছে এবং সেটি সঠিকভাবে অবতরণ করতে পেরেছে কিনা তা যাচাই করতে অন্তত দুই মাস সময় লাগবে।
শুক্রবার মধ্যরাতে এক সংবাদ সম্মেলনে জাক্সার গবেষণা বিভাগের প্রধান হিতোশি কুনিনাকা বলেন, ‘এক মাস আগে চাঁদের কক্ষপথে প্রবেশ করে স্লিম। সে সময় সূর্যের অবস্থান যেখানে ছিল— এখন আর সেখানে নেই। ফলে গত বেশ কয়েক দিন ধরেই সৌরশক্তি গ্রহণ করতে পারছে না স্লিমের সোলার প্যানেলগুলো।’
বর্তমানে স্লিমের ব্যাটারিতে যে পরিমাণ শক্তি সঞ্চিত রয়েছে, তাতে আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা নভোযানটি সচল থাকবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন কুনিনাকা।
‘শিওলি কার্টার ও তার আশপাশের এলাকায় যখন পূর্ণমাত্রায় সূর্যালোক পড়া শুরু হবে, তখন স্লিমও ফের সচল হবে।’
চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণের কিছুক্ষণ পর স্লিম থেকে সিগন্যাল আসাও বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার ডিপ স্পেস নেটওয়ার্ক। তবে শক্তির অভাবে সিগন্যাল পাঠানো বন্ধ হয়ে গেছে, না কি শক্তি সঞ্চয়ের জন্য নভোযানটি সিগন্যাল পাঠানো বন্ধ রেখেছে— তা এখনও স্পষ্ট নয়।
তবে চাঁদে অবতরণ পুরোপুরি সফল হয়েছে নভোযানটির। হিতোমি কুনিনাকা জানান, শিওলি কার্টারে এলাকায় ১০০ মিটারের (৩২৮ ফুট) মধ্যে স্লিমকে নামানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল, এবং সেই অনুযায়ীই অবতরণ করেছে স্লিম।
সংবাদ সম্মেলনে কুনিনাকা বলেন,‘যানটি নামার আগে দেখে নেওয়া হয়েছিল কোথাও কোনও বাধা রয়েছে কিনা। ৫০ মিটার দূর থেকে সেটি পরীক্ষা করে দেখা হয়। সেই মতো সবুজ সংকেত পাওয়ার পরেই পালকের মতো চাঁদের বুকে নামে স্লিম।’
গত বছর ৭ সেপ্টেম্বর স্লিম এর সফল উৎক্ষেপণ করেছিল জাপান। দেশটির ফ্ল্যাগশিপ রকেট এইচ ৩ বহন করে নিয়ে গিয়েছিল স্লিমকে। তারপর গত ২৫ ডিসেম্বর চাঁদের কক্ষপথে যানটি প্রবেশের কথা জানিয়েছিল জাপানের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা।
প্রসঙ্গত এর আগে যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়ন, চীন এবং ভারত— চারটি দেশে চাঁদে সফলভাবে নভোযান পাঠাতে পেরেছিল। এই তালিকায় পঞ্চম দেশ হিসেবে ঢুকল জাপান।
এই যাত্রা অবশ্য সহজ ছিল না। গত কয়েক বছর ধরে চাঁদে নভোযান পাঠানোর চেষ্টা চালিয়ে আসছিল জাপান, কিন্তু প্রতিবারই কোনো না কোন কারণে ব্যর্থ হয়েছে সেসব চেষ্টা। সর্বশেষ গত বছর মার্চেও একবার চন্দ্রযান স্লিমকে উৎক্ষেপণের চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু বৈরী আবহাওয়ার কারণে তা ব্যর্থ হয়।
চাঁদের মেরু অঞ্চলের পাহাড়ি এলাকাগুলোতে অক্সিজেন, পানি ও ধাতব পদার্থের অনুসন্ধানই এই জাপানের চন্দ্রাভিযানের প্রধান উদ্দেশ্য। শুক্রবারের সংবাদ সম্মেলনে হিতোশি কুনিনাকা জানিয়েছেন, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে চাঁদে মানুষ পাঠানোর পরিকল্পনা নিয়েছে জাক্সা। সেই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন অনেকাংশে নির্ভর করছে এই অভিযানের সাফল্যের ওপর।
সূত্র: বিবিসি, রয়টার্স