গেল বছরে প্রযুক্তি বিপ্লব: যা পেলাম আমরা
মানব আকৃতির রোবট
চলতি বছরে মানব আকৃতির রোবট নানা কারণে সংবাদের শিরোনাম হবে বলে মন্তব্য করছেন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা। ইলন মাস্কের টেসলার প্রকৌশলীরা ‘অপ্টিমাস’ নামে মানব আকৃতির রোবট তৈরি করছেন। যে রোবট দ্রুতই বহু কারখানার কাজে যুক্ত হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন তারা। ইলন মাস্ক বলেন, প্রথমে নিজেদের উদ্ভাবনেই রোবটের সফল ব্যবহার করব। পরে তার ফলাফল বিশ্বের সামনে উপস্থাপন করব।
মানব আকৃতির রোবট তৈরিতে টেসলা ছাড়াও বহু প্রতিষ্ঠান প্রতিযোগিতায় নেমেছে। ইতোমধ্যে আমাজন নিজেদের গুদামে মানব আকৃতির রোবট পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করছে। ‘ডিজিট’ নামে ওই রোবট মানুষের মতোই নির্দিষ্ট জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পণ্য স্থানান্তর করতে সক্ষম।
আর্ট জেনারেটর
সারাবিশ্বে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সাড়া জাগিয়েছে ২০২৩ সালে। ঘটনার পর ঘটনার জন্ম দিয়েছে। কল্পনায় আঁকা ছবিকে বাস্তবে রূপ দিতে খুলেছে মিডজার্নি এআই। আর্ট জেনারেটরে এআই প্রযুক্তির এমন উদ্ভাবন চলচ্চিত্র ছাড়াও অন্যান্য সৃজনশীল শিল্পের কাজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্পাদনে নতুন যুগে প্রবেশ করেছে। মিডজার্নির পথ অনুসরণ করে স্ট্যাবল ডিফিউশন, লিওনার্দো এআই ছাড়াও কয়েকটি আর্ট জেনারেটরের যাত্রা শুরু হয়। চলতি বছরজুড়েই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকেন্দ্রিক আর্ট জেনারেটর আরও বিকশিত হবে।
অ্যাপল ‘ভিশন প্রো’
ভার্চুয়াল ও মিক্সড রিয়েলিটি বেশ কয়েক বছর ধরেই বাজারে দৃশ্যমান। অন্যদিকে ‘প্লেস্টেশন ভিআর’ এবং মেটার ‘কোয়েস্ট’ হেডসেটের মতো বহুমাত্রার সাফল্য মানব সভ্যতায় হাজির করবে। চলতি বছরে অ্যাপল উদ্ভাবিত মিক্সড রিয়েলিটি হেডসেট ‘ভিশন প্রো’র হাত ধরে এ প্রযুক্তি প্রথমবার মূলধারায় প্রবেশ করতে চলেছে।
ডিভাইসটি চালু হলে ব্যবহারকারীরা বাস্তব জগতের ওপরেই বহুমাত্রিক অ্যাপ্লিকেশন দেখতে পাবেন। হাতের অঙ্গভঙ্গির সাহায্যে সেগুলোর বিশেষ বিশেষ ব্যবহার করতে পারবেন। অ্যাপল উদ্ভাবিত এ প্রযুক্তির বেশ কিছু দিক নতুন নয়। তবে বিশেষজ্ঞরা অনুমান করছেন, অ্যাপল প্রযুক্তির পরিচিতি ও যে কোনো প্রযুক্তির ক্ষেত্রে জনসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণের ক্ষমতা ভার্চুয়াল ও মিক্সড রিয়েলিটির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠতে পারে।
ড্রোন প্রযুক্তি
ড্রোন খুব দ্রুত বিবর্তিত হচ্ছে। গ্রহণ করে নিচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, সেন্সর, ব্যাটারি ও স্বয়ংক্রিয় পরিচালন প্রক্রিয়া; যা ব্যবসায়িক চিন্তাধারায় এরই মধ্যে পরিবর্তন দৃশ্যত করেছে। ওপর থেকে ছবি ও ভিডিও ধারণের মাধ্যমে রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে শুরু করেছে। তা ছাড়া যেসব জায়গায় আগে পণ্য সরবরাহ করা কঠিন হয়ে যেত, ড্রোন সেখানে পৌঁছানো দ্রুত ও সহজ করে দিয়েছে। ফসলের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ, সেচ ব্যবস্থাপনা, রিয়েল এস্টেট পর্যবেক্ষণ যার মধ্যে অন্যতম। তা ছাড়া প্রকৌশল ও পরিবহন খাতেও ড্রোন অভূতপূর্ব পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছে।
কোয়ান্টাম প্রযুক্তি
সাইবার জগতে এখন চলছে তুমুল প্রতিযোগিতা। যেখানে কম্পিউটারের শক্তি বাড়ানো জরুরি কাজ। বর্তমানে এআই আর মেশিন লার্নিং সবাই মিলে সাইবার হুমকির বিরুদ্ধে কাজ করছে। সমস্যা হলো, কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের অগ্রগতির সঙ্গে নতুন হুমকিও তৈরি হচ্ছে; যার ডেভেলপ হলে আরএসএ আর ইসিসির মতো এনক্রিপশনের সব স্ট্যান্ডার্ড আর কাজে আসবে না।
ভবিষ্যতে ডেটা প্রাইভেসি ও নিরাপত্তার জন্য কোয়ান্টাম-রেজিস্ট্যান্ট অ্যালগরিদম অতীব জরুরি হয়ে উঠবে। চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেকনোলজি পোস্ট-কোয়ান্টাম ক্রিপ্টোগ্রাফি, অর্থাৎ এনক্রিপশন অ্যালগরিদমের স্ট্যান্ডার্ড তৈরি করবে; যা কোয়ান্টাম আক্রমণ প্রতিহতে সক্ষম। অর্থাৎ কোয়ান্টাম কম্পিউটারের কারণে বিশ্বব্যাপী সাইবার নিরাপত্তায় বড় ধরনের বিবর্তন ঘটবে।