প্রবাসীদের ওপর ৩ বছর মেয়াদী ভিসা নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলো সৌদি
মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম প্রভাবশালী দেশ সৌদি আরব। দেশটিতে জনসংখ্যার প্রায় ৪১ শতাংশই প্রবাসী। ভিসা নিষেধাজ্ঞার কড়াকড়ি থেকে প্রবাসীদের সুখবর দিয়েছে সৌদি সরকার। ভিসার (ইকামা) মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে যেসব প্রবাসী নিজ দেশে ফিরে যেতে পারেননি তাদের ওপর থেকে তিন বছরের প্রবেশ নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে রিয়াদ। সেই সঙ্গে দেশের বাইরে যাওয়া (এক্সিট) এবং পুনঃপ্রবেশ (রি-এন্ট্রি) ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে যারা ফিরে আসতে ব্যর্থ হয়েছেন সেই সব প্রবাসীদের প্রবেশের অনুমতি দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সব বিভাগ এবং স্থল, সমুদ্র ও বিমানবন্দরকে নির্দেশ দিয়েছে দেশটির পাসপোর্ট অধিদপ্তর বা জাওয়াজাত।
বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম সৌদি গেজেট এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
গত মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) থেকে ৩ বছরের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার নতুন নির্দেশটি কার্যকর হয়েছে। যারা দেশের বাইরে যাওয়ার পর ভিসার বৈধ সময়ের মধ্যে ফিরে আসেননি তাদের পুনরায় প্রবেশ ঠেকাতে ব্যবসায়ীদের দাবির প্রেক্ষিতে অধিদপ্তর আগে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ফেরত না আসতে পারা শ্রমিকদের প্রবেশাধিকার না দেয়ার ব্যাপারে মন্ত্রী পরিষদের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতেই এই দাবি জানিয়েছিলেন নিয়োগকর্তা বা ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি, কিছু সংখ্যক শ্রমিক তাদের রেসিডেন্সি পারমিট (ইকামা), ওয়ার্ক পারমিট এবং রিটার্ন টিকিটের নরায়ন ফি না দেওয়ার কারণে তারা আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হতেন।
সে সঙ্গে ব্যবসায়ীরা আরও বলেন, শ্রমিকেরা সময়মতো ফিরে আসতে ব্যর্থ হলে তাদের চুক্তি বাতিল করতে বাধ্য হন তারা। এতে তাদের স্বার্থের ক্ষতি যেমন হয় তেমনি নষ্ট হয় কর্মসংস্থান বাজারের স্থিতিশীলতা।
সৌদি ছাড়া এবং পুনঃপ্রবেশ ভিসা দেয়ার ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত শর্তগুলোর ওপর ফের জোর দিয়েছে জাওয়াজাত। সেখানে বলা হয়, কর্মীকে অবশ্যই ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনের সমস্ত বকেয়া জরিমানা হিসেবে দিতে হবে। যেসব শ্রমিকের বৈধ ভিসা নেই তাদের সৌদিতে উপস্থিতি নিশ্চিতের পর ভিসা দেয়া হবে। শ্রমিকদের ৯০ দিন বা তার বেশি মেয়াদের পাসপোর্ট দেয়া হবে এবং সেখানে তাদের আঙুলের ছাপ থাকতে হবে।
প্রসঙ্গত, মধ্যপ্রাচ্যের ধনী দেশ সৌদি আরবে ২০২২ সালে চালানো আদমশুমারিতে দেখা গেছে দেশটির মোট জনসংখ্যার ৪২ শতাংশই প্রবাসী। বর্তমানে সৌদিতে মোট জনসংখ্যা ৩ কোটি ২১ লাখ ৭৫ হাজার ২২৪। এর মধ্যে সৌদির স্থানীয় নাগরিক হলেন প্রায় এক কোটি ৮৮ লাখ। যা মোট জনসংখ্যার ৫৮ দশমিক ৪ শতাংশ। অপরদিকে প্রবাসী হলেন প্রায় ১ কোটি ৩৪ লাখ, যা মোট জনসংখ্যার ৪১ দশমিক ৬ শতাংশ।
দেশটিতে বিভিন্ন দেশের অভিবাসী শ্রমিকদের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক রয়েছেন বাংলাদেশি। এর পরই রয়েছে ভারতীয় ও পাকিস্তানিরা। সৌদি আদমশুমারির পরিসংখ্যান অনুসারে, দেশটিতে মোট বিদেশিদের ৪২ শতাংশের বেশি তিনটি এশিয় দেশের নাগরিক।
সৌদি আরবে ২১ লাখ বা মোট প্রবাসীর প্রায় ১৫ দশমিক ৮ শতাংশই বাংলাদেশি। তারপরে ভারতীয়দের সংখ্যা ১৮ লাখ ৮০ হাজার এবং পাকিস্তানিরা রয়েছে ১৮ লাখ ১০ হাজার জন।
উল্লেখ্য, বর্তমানে বিশ্বের ১৭৬টি দেশে এক কোটি ৪৯ লাখের বেশি কর্মী কর্মরত আছেন বলে গত ৫ জুলাই জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তরে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ গত বছরের সেপ্টেম্বরে জাতীয় সংসদে জানান, কাজের উদ্দেশ্যে বিদেশে যাওয়া বাংলাদেশিদের সংখ্যা ১ কোটি ৫৫ লাখ ১৩ হাজার।