আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ
আজ থেকে ৭৫ বছর আগে আজকের এই দিনে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিলো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। ঐতিহাসিক এ দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে দেশব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে দলটি। দিনটি ঘিরে রাখা হয়েছে নানা আয়োজন। সঙ্গে নবরূপে সাজিয়ে তোলা হয়েছে পুরান ঢাকার রোজ গার্ডেন প্যালেসও।
ঐতিহাসিক এ ভবনেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের গোড়াপত্তন। রাজধানীর টিকাটুলীর কেএম দাস লেনে অবস্থিত এই বাড়িটিতেই ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ (বর্তমান আওয়ামী লীগ) গঠনের পরিকল্পনা হয়। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও আবুল হাশেম এর নেতৃত্বাধীন তৎকালীন বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের একাংশের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার টিকাটুলীর কে এম দাস লেন রোডের রোজ গার্ডেন প্রাসাদে ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’ প্রতিষ্ঠিত হয়। এর সভাপতি হন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন শামসুল হক। পরে ১৯৫৫ সালে মওলানা ভাসানীর উদ্যোগে ধর্মনিরপেক্ষতার চর্চা এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংগঠনটির নাম থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দেওয়া হয় এবং নাম রাখা হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’।
গতকাল শনিবার (২২ জুন) রাজধানীর টিকাটুলীর কেএম দাস লেনে অবস্থিত বাংলাদেশের স্বাধীনতার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ঐতিহাসিক ভবনটি ঘুরে দেখা যায়, ভবনে নতুন রঙের প্রলেপ করা হয়েছে। চারপাশে চলছে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ। লাগানো হয়েছে বিভিন্ন আলোকসজ্জার বাতি, ব্যানার ও পোস্টার।
এ ছাড়া আওয়ামী লীগের প্লাটিনাম জয়ন্তী উপলক্ষে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনটি ঘিরে রাখা হয়েছে বিভিন্ন আয়োজন। লেজার শো থেকে শুরু করে শিল্পকলার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে ঐতিহাসিক রোজ গার্ডেন প্যালেসে। প্রাসাদটিকে নবরূপ দিতে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিও ইতিমধ্যে শেষ।
আলোকসজ্জা ও লেজার শোর কাজের তদারকি করা ‘মেইনস্প্রিং’য়ের সিনিয়র ম্যানেজার প্রতীক চৌধুরী বলেন, আমরা পুরো ভবনটা প্রজেকশন করছি। এখানে ভিজুয়ালি আওয়ামী লীগের ইতিহাস তুলে ধরবো। এ ছাড়া শিল্পকলার সাংস্কৃতিক আয়োজনও আছে।
স্বাধীনতা-পূর্ববর্তী সময়ে নিজেদের অবহেলিত মনে করছিলেন বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের উদারপন্থি নেতারা। তখন তারা মোঘলটুলিতে ১৫০ নম্বর বাড়িতে একটি কর্মী শিবির স্থাপন করেছিলেন। সেখানে তারা একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করার কথা ভাবছিলেন। কিন্তু সেই রাজনৈতিক দলটি গঠিত হওয়ার জন্য কোনও অডিটরিয়াম পাওয়া যাচ্ছিল না। তখন কে এম দাস লেনের কাজী হুমায়ুন রশীদ তার মালিকানাধীন রোজ গার্ডেনে সভা করার আহ্বান জানান। সেখানেই ২৩ জুন বিকালে ২৫০-৩০০ জন ব্যক্তির উপস্থিতিতে নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠনের সিদ্ধান্ত হয়।
মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর প্রস্তাব অনুযায়ী সেই দলের নামকরণ করা হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’। পরে মুসলিম শব্দটি বাদ দিয়ে শুধু ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’ রাখা হয়। দেশের স্বাধীনতা ঘোষণার পর থেকে নামকরণ করা হয় ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’।
রোজ গার্ডেনে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের পর মওলানা ভাসানীকে একটি নতুন কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করার দায়িত্ব দেওয়া হলে তিনি অন্যদের সঙ্গে পরামর্শ করে ৪০ জনের একটি কমিটি ঘোষণা করেন। সেই কমিটির সভাপতি হন মওলানা ভাসানী। সহসভাপতি করা হয় আতাউর রহমান খান, আহমেদ আলী খান, আলী আমজাদ খান, শাখাওয়াত হোসেন ও আবদুস সালাম খানকে। সাধারণ সম্পাদক হন শামসুল হক।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তখন কারাগারে আটক থাকলেও, আওয়ামী লীগের প্রথম কমিটিতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা হয় তাকে। পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ ছিল তৎকালীন পাকিস্তানে প্রথম বিরোধী দল।