‘স্বাধীন না হওয়া পর্যন্ত ফিলিস্তিনের পাশে থাকব’

নিজস্ব প্রতিবেদক
জার্নাল ডেস্ক জার্নাল ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:১৭ PM

ফিলিস্তিন ইস্যুতে সারাবিশ্বের মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, “ফিলিস্তিন মুক্ত ও স্বাধীন না হওয়া পর্যন্ত আমরা তাদের পাশে থাকব; আমাদের লড়াই ও সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে।”

শুক্রবার (০৩ অক্টোবর) জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। আয়োজকরা বলেন, গাজায় ত্রাণ বহনকারী নৌবহর আটকের পর ইসরায়েলি বাহিনী বহু কর্মীকে, যার মধ্যে সুইডিশ জলবায়ু কর্মী গ্রেটা থুনবার্গও রয়েছেন, আটক করেছে। প্রতিবাদ হিসেবে এই বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়; ওই বহরে প্রায় ৪০টি জাহাজ ছিল এবং অধিকাংশকে আটক করা হয়েছে।

রফিকুল ইসলাম খান বলেন, নিষ্ঠুর ইসরাইল বাহিনী ফিলিস্তিনের গাজায় একের পর এক গণহত্যা পরিচালনা করছে। এই গণহত্যার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে নারী এবং শিশুরা, এই গণহত্যার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে ফিলিস্তিনের সাধারণ জনগণ। কিন্তু আমরা প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমরা বিক্ষোভ মিছিল করছি। সারা দুনিয়া এই হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে, এই গণহত্যার বিরুদ্ধে, এই নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে, এই শিশু হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে। গতকাল যে ত্রাণবাহী জাহাজের নৃশংসভাবে হামলা পরিচালনা করা হয়েছে, পাঁচশ'র অধিক অধিকার কর্মী, ত্রাণবাহী জাহাজের কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, এতে বিশ্বের প্রায় অধিকাংশ দেশ ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার পক্ষে মত দিয়েছে।

তিনি বলেন, ফিলিস্তিন ও গাজাকে আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পরও বিশ্বের কিছু শক্তিধর দেশ ছোট্ট ইসরায়েলের পক্ষে অস্ত্র ও সমর্থন দিয়ে এই নৃশংস ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত হচ্ছে। এই অনৈতিক সহায়তা মানবতার বিরুদ্ধে এক ধরনের খেলায় রূপ নিয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি শহীদের রক্তের বিনিময়ে ফিলিস্তিন স্বাধীনতা অর্জন করবে ইনশাআল্লাহ। আমরা জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানাই— অবিলম্বে ইসরায়েলের হাতকে দমন করুন। দখল হওয়া অঞ্চলগুলো দ্রুত মুক্ত ঘোষণা করুন এবং ত্রাণবাহী জাহাজের কর্মীদের অবিলম্বে মুক্তি দিন। বাংলাদেশ সরকারের নিন্দা ও মুক্তির দাবিকেও আমরা স্বাগত জানাই। যতদিন ফিলিস্তিন স্বাধীনতা অর্জন করবে না, ততদিন মুসলমানদের লড়াই সহানুভূতি ও সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে।

বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগরের নেতাকর্মীরাও অংশ নেন এতে।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি ফিলিস্তিনের গাজা অভিমুখে মানবিক ত্রাণ সহায়তা নিয়ে যাত্রা করা আন্তর্জাতিক নৌবহর গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলাকে ইসরায়েলি নৌবাহিনী আটক করেছে। নৌবহরটি স্পেন থেকে যাত্রা শুরু করে এবং পরে ইতালি ও গ্রিস থেকে আরও নৌযান যোগ হয়। এতে ৪০টির বেশি বেসামরিক নৌযান ছিল, যা গাজাবাসীর জন্য খাদ্য, চিকিৎসা সামগ্রী ও অন্যান্য মানবিক সহায়তা বহন করছিল।

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের নৌ অবরোধ ভাঙা এবং গাজার ক্ষুধার্ত মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দিতে প্রায় ৪৫টি জাহাজে করে গাজার দিকে রওনা দিয়েছিলেন ৫০০ অধিকারকর্মী।

নৌবহরে বিশ্বের ৩৭টিরও বেশি দেশের ৪০০ জনের বেশি অধিকারকর্মী, পার্লামেন্ট সদস্য, চিকিৎসক ও সাংবাদিক ছিলেন। এদের মধ্যে সুইডিশ জলবায়ু কর্মী গ্রেটা থুনবার্গও ছিলেন। ইসরায়েলি নৌবাহিনী বুধবার ভূমধ্যসাগরের আন্তর্জাতিক জলসীমায়, গাজা উপকূল থেকে প্রায় ১২০-১২৯ কিলোমিটার দূরে, এই নৌবহরকে বাধা দেয়। ইসরায়েলি সেনারা বেশ কয়েকটি জাহাজ থামিয়ে তাতে উঠে পড়ে এবং নৌবহরের যাত্রীদের আটক করে।

তুরস্ক এই ঘটনাকে ইসরায়েলের জলদস্যুতা আখ্যা দিয়ে এর নিন্দা জানিয়েছে। বাংলাদেশ সরকারও এই আটকের তীব্র নিন্দা জানিয়ে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলে আখ্যা দিয়েছে এবং অবিলম্বে সকল আটককৃতদের মুক্তির দাবি জানিয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইসরায়েলের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে।