প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা প্রত্যাখ্যান, ডিসেম্বরেই অনড় বিএনপি

আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষণাকে প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। দলটি বরাবরের মতোই নির্বাচন চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই সম্পন্ন করার দাবিতে অনড় অবস্থান জানিয়েছে।
সরকারের এই সিদ্ধান্তকে বিএনপি ‘একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক গোষ্ঠীর প্রভাবে গৃহীত’ বলেও অভিযোগ করেছে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণা করার পরপরই রাতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভায় এ বিষয়ে দলের চূড়ান্ত অবস্থান নির্ধারণ করা হয়।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানিয়েছেন।
এ সময় বিএনপি প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের ‘শব্দ চয়নে রাজনৈতিক ভব্যতার সীমা অতিক্রম’ করার জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বিএনপি জানিয়েছে, পবিত্র ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে প্রদত্ত তার বক্তব্য ‘প্রসঙ্গ অতিক্রম করে জাতির উদ্দেশে ভাষণে’ পরিণত হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, এই দীর্ঘ ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা বন্দর, করিডরসহ এমন সব বিষয়ে অবতারণা করেছেন, যা তার নিজেরই ঘোষিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তিনটি ‘ম্যান্ডেটের’ মধ্যে পড়ে না।
বিএনপি এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্তে বেশ কিছু আপত্তি জানিয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে দলটি বলেছে, 'এই সময়ে একদিকে আবহাওয়ার সংকট এবং অন্যদিকে রমজানের মধ্যে নির্বাচনী প্রচারণা ও কার্যক্রম এমন এক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে, যা নির্বাচনকে পিছিয়ে দেওয়ার কারণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।'
এছাড়াও, কেন ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে না—এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা তাঁর ভাষণে কোনো স্পষ্ট বা যুক্তিসঙ্গত কারণ তুলে ধরেননি বলেও অভিযোগ করেছে বিএনপি।
বিএনপি দৃঢ়ভাবে বলেছে, প্রায় দেড় যুগ ধরে মৌলিক ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত এদেশের জনগণ ভোটের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য গুম, খুন, জেল-জুলুম, আহত ও নির্যাতিত হয়েও অব্যাহত লড়াই চালিয়ে গেছে। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার বিপুল আত্মত্যাগের মাধ্যমে তাদের বিজয় অর্জিত হলেও ‘নির্বাচন অনুষ্ঠানে অহেতুক বিলম্ব জনগণকে হতাশ ও ক্ষুব্ধ করছে’।
এই প্রেক্ষাপটে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় গৃহীত সর্বসম্মত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ‘রমজান, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বা সমমানের পরীক্ষা এবং আবহাওয়াসহ বিভিন্ন বিষয় বিবেচনায় নিয়ে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তাব পনর্ব্যক্ত করছে বিএনপি।’
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘নির্দলীয়-নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার কথা বললেও, একটি বিশেষ রাজনৈতিক গোষ্ঠীর দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে।’
দলটির অভিযোগ, 'সিংহভাগ রাজনৈতিক দলের মতামত অগ্রাহ্য করে নিজেদের নিরপেক্ষতাকেই যেভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে, তাতে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের সম্ভাবনা নিয়ে দেশের জনগণ সঙ্গতভাবেই শঙ্কিত হতে পারে।'