বাংলাদেশি পরিচয় দেওয়া নীল ছবির তরুণী সত্যিই কি বাংলাদেশি? চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস

নিজস্ব প্রতিবেদক
বিনোদন জার্নাল বিনোদন জার্নাল
প্রকাশিত: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:১১ AM

বাংলাদেশিদের নিয়ে অপপ্রচার ভারতের নতুন নয়। চাচাই-বাছাই ছাড়াই ঢালাওভাবে অপপ্রচার ও গুজব ছড়ানোতে যেনো মহরত হাসিল করেছে ভারতীয় মিডিয়াগুলো। অনেক সংবাদ গুজব বা মিথ্যা প্রমাণিত হলেও ভারতীয় মিডিয়াকে কখনও ক্ষমা চাইতে বা দুঃখ প্রকাশ করতে দেখা যায়নি। গত আগস্টে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের ওপর হত্যাকাণ্ড ও সহিংসতা নিয়ে প্রচুর গুজব ও মিথ্যা নিউজ ছড়িয়েছিলো ভারতের মেইনস্ট্রিম মিডিয়াগুলো। এর অনেকগুলো মিথ্যা ও গুজব প্রমাণিত হলেও সে সম্পর্কে টু শব্দটি করেনি মিডিয়া। বরং নতুন করে ভুয়া ও গুজব নিয়ে হাজির হয়েছে। এবার ভুয়া কাগজপত্র ব্যবহার করে ভারতে অবৈধভাবে বসবাসের অভিযোগে বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) মহারাষ্ট্রের উলহাসনগর থেকে গ্রেপ্তার করা হয় বাংলাদেশি এক তরুণীকে। যার নাম রিয়া অরবিন্দা ভার্দে এবং যিনি নীল ছবির অভিনেত্রী বলে দাবি করা হচ্ছে।

রিয়া নামের ওই নারীকে গ্রেপ্তারের পর তাকে ‘বাংলাদেশি নীল তারকা’ তকমা দেওয়ায় রীতিমতো সমালোচনা শুরু হয় নেটিজেনদের মাঝে। কেউ কেউ বলছেন, রিয়া নামের কোনো তারকাকে চেনেন না তারা। কেউ বলছেন, বাংলাদেশের কোনো নাটক, ওয়েবফিল্মেও কখনও দেখা যায়নি তাকে, তিনি কীভাবে বাংলাদেশি তারকা হন। আবার কেউ এটিকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতীয় মিডিয়ার অপপ্রচার বলেও মনে করছেন।

বাংলাদেশি নীল তারকা বলে চালিয়ে দেওয়া রিয়ার পাসপোর্ট

এমন সমালোচনার পর সংবাদটি নিয়ে বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ভারতীয় পুলিশ রিয়াকে বাংলাদেশি হিসেবে দাবি করলেও তার সঙ্গে আদতে বাংলাদেশের কোনো যোগসাজশ মেলেনি। ভারতের একাধিক গণমাধ্যমে পুলিশের বিবৃতি অনুসারে রিয়াকে বাংলাদেশি হিসেবে দাবি করা হলেও রিয়া বা তার পরিবার বাংলাদেশের কোথায় থাকতেন তার কোনো সুস্পষ্ট প্রমাণ আনতে পারেনি পুলিশ। যদিও সেটি আরও তদন্তসাপেক্ষ।

তবে পুলিশ সূত্রে ভারতের গণমাধ্যমগুলোতে রিয়ার সম্পর্কে যে তথ্য প্রকাশ করা হয়, সেখানে তাকে এক কথায় ‘বাংলাদেশি’ দাবি করা ছাড়া বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পৃক্ততার কোনো যথাযথ প্রমাণ দিতে পারেনি। তারা এও উল্লেখ করে, রিয়া ভার্দে ও তার পরিবার দীর্ঘদিন ধরে মুম্বাইয়ের অদূরে উল্লাসনগরে বসবাস শুরু করেছিলেন। তার মায়ের নাম অঞ্জলি ভার্দে, যার পূর্ব নাম রুবি শেখ, ভাইয়ের নাম রবীন্দ্র; যার পূর্ব নাম রিয়াজ শেখ এবং বোন রিতু যার পূর্ব নাম মনি শেখ বলে দাবি করা হয়।

রিয়া ছাড়াও তার পরিবারের সঙ্গে আদতে বাংলাদেশের সম্পর্ক আছে কি না, তা নিয়ে এখনও পর্যন্ত স্পষ্ট কোনো তথ্য প্রকাশ করতে পারেনি পুলিশ।

এদিকে, ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের একাধিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্রেপ্তারকৃত তরুণী বলিউড অভিনেত্রী শিল্পা শেঠির রাজ কুন্দ্রা প্রোডাকশনের নীল সিনেমার প্রজেক্টে কাজ করছিলেন। যদিও রাজ কুন্দ্রা অভিযোগগুলোকে মিথ্যা বলে দাবি করেছেন। এই অভিনেত্রীকে চেনেন না বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘আমার সম্পর্কে ছড়ানো এই ভুয়া খবরে গভীরভাবে মর্মাহত। রিপোর্টগুলোতে দাবি করা হয়েছে, একজন অবৈধ অভিবাসী আমার জন্য কাজ করেছিলেন বা আমার একটি অনুমিত প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। আমি খুব স্পষ্ট করে বলতে চাই, এই মহিলার সঙ্গে কখনও দেখা হয়নি। তাকে আমি চিনি না বা আমার মালিকানাধীন কোনো প্রতিষ্ঠানে তিনি কাজ করতেন না।’

রাজ আরও জানান, ‘এসব ভিত্তিহীন খবর কেবল আমার খ্যাতিকেই ক্ষতিগ্রস্ত করছে না, আমার নামকে ব্যবহার করা হচ্ছে লোকের নজর টানার জন্য। আমি এ ধরনের মিথ্যা অভিযোগ সহ্য করব না।’

প্রসঙ্গত, রিয়াকে গ্রেপ্তারের আগে গোপন সূত্রে পুলিশ খবর পায়, ভুয়া কাগজপত্র ব্যবহার করে উল্লাসনগরে আম্বেরনাথে বসবাস করছে এক অভিবাসী পরিবার। তাদেরকে বাংলাদেশি বলে অভিযোগে বলা হয়। এতে তল্লাশি চালায় পুলিশ। এরপর সেখান থেকে রিয়ার পাসপোর্ট উদ্ধার করা হয়। সেটিকেও ভুয়া দাবি করা হয়। যদিও সেটি ভূয়া কি না, তাও স্পষ্ট নয়। তদন্তের পর পুলিশের দাবি, স্থানীয় কিছু লোকজন রিয়া ও তার তিন সঙ্গীকে ভুয়া পাসপোর্ট বানিয়ে দিয়েছে।

গ্রেপ্তার রিয়ার বাবা একজন ভারতীয়, নাম অরভিন্দ ভার্দে। পুলিশ জানিয়েছে, এই মুহূর্তে তিনি কাতারে অবস্থান করছেন। সঙ্গে রয়েছেন রিয়ার মা অঞ্জলি ভার্দে। এ ছাড়াও বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের সকলের কোনো অবস্থানের মিল না থাকায় গ্রেপ্তার রিয়া ভার্দেকে সরাসরি বাংলাদেশি বলাটা সমীচীন নয় বলেই মনে করছেন নেটিজেনরা।