বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় গঠিত হবে বিশেষ বাহিনী

দেশের বিমানবন্দরগুলোর সীমানা প্রাচীর ও রানওয়ে সংলগ্ন আনুষঙ্গিক নিরাপত্তা কার্যক্রম জোরদারে বিশেষ বাহিনী গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। আর বিশেষ এ বাহিনীর নাম হচ্ছে বাংলাদেশ এয়ারপোর্ট সিকিউরিটি ফোর্স (বিএএসএফ)।
এতে থাকবে বিমান, পুলিশ, আনসার বাহিনীসহ অন্য সংস্থার ১০ হাজার ৬৩২ চৌকষ সদস্য। বিশাল এ জনবলের ব্যয় মেটাতে তিন ধাপে খরচ হবে ৩৯৭ কোটি টাকা।
গত সোমবার বেবিচকের তত্ত্বাবধানে নিজস্ব এই সিকিউরিটি ফোর্স গঠনের লক্ষ্যে বেবিচকের প্রশাসন বিভাগে চিঠি দিয়েছে নিরাপত্তা বিভাগ। এতে উল্লেখ করা হয়, আন্তর্জাতিক বিধি প্রতিপালনের মাধ্যমে ক্রমবর্ধমান এভিয়েশন শিল্পের সার্বিক বিকাশ নিশ্চিত করতে প্রতিটি বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে বেবিচকের এভিয়েশন সিকিউরিটি (এভসেক) সদস্যদের মাধ্যমে বিমানবন্দরের
টার্মিনালসমূহের নিরাপত্তা নিরীক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। বিমানবন্দরের সীমানা প্রাচীরসহ রানওয়ে, অ্যাপ্রোন ও আনুষঙ্গিক সংবেদনশীল অভ্যন্তরীণ এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য অস্থায়ী এসব সংস্থার সদস্য কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পুরোপুরি সফল নন। এ প্রেক্ষিতে বেবিচকের তত্ত্বাবধানে একটি নিজস্ব সিকিউরিটি ফোর্স গঠন করা হলে সীমানাপ্রাচীরসহ রানওয়ের আনুষঙ্গিক নিরাপত্তা কার্যকরভাবে নিশ্চিত করা সম্ভবপর হবে, যার মাধ্যমে ক্রমবর্ধমান এভিয়েশন খাতের আন্তর্জাতিক বিধি প্রতিপালন ও বিমানবন্দরসমূহের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা জোরদার করণের মাধ্যমে দেশি বিদেশি এয়ারলাইন্স, পর্যটক, জনশক্তি রপ্তানি ও বিনিয়োগকারীদের জন্য নির্ভরযোগ্য ও আস্থাশীল পরিবেশ গড়ে তোলা সম্ভবপর হবে। এই সিকিউরিটি ফোর্স এভিয়েশন সিকিউরিটির সাথে সাংঘর্ষিক নয় বরং পরিপূরক হিসেবে কাজ করবে। এমতাবস্থায়, বাংলাদেশ এয়ারপোর্ট সিকিউরিটি ফোর্স গঠনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হচ্ছে।
বেবিচক সূত্র জানায়, পৃথিবীর অন্যান্য সিভিল এভিয়েশনের নিজস্ব এ ধরনের ফোর্স রয়েছে। বেবিচক সেই আলোকেই এ ধরনের সিকিউরিটি ফোর্স গঠন করতে দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করে আসছিল। এবার সেটিকে পরিপূর্ণ রূপ দিতে কাজ শুরু হয়েছে। দেশের তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ অভ্যন্তরীণ সব বিমানবন্দরে বেবিচকের নিজস্ব এই সংস্থা কাজ করবে। বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অধীন এই সংস্থা সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যানের নিজস্ব তত্ত্বাবধানে থাকবে। বেবিচকের নিজস্ব এই সংস্থা অত্যাধুনিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হবে। ইন্টারন্যাশনাল সিভিল অরগানাইজেশন কর্তৃক সার্টিফায়েড হবে। দেশের সব বিমানবন্দরের গুরুত্বপূর্ণ এক্সেস পয়েন্টগুলোতে এ বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে।
বিএএসএফের জনবলের সংখ্যা হবে ১০ হাজার ৬৩২ জন। এর ৭০ শতাংশই নেওয়া হবে বিমানবাহিনী থেকে। মূলত চেয়ারম্যান থাকবেন সার্বিক তত্ত্বাবধানে। এ ছাড়া এই সংস্থার প্রধান হবেন এয়ার ভাইস মার্শাল বা এয়ার কমোডর পদমর্যাদার একজন, যিনি মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্বে থাকবেন। এই মহাপরিচালকের দপ্তরে চারজন অতিরিক্ত মহাপরিচালকও থাকবেন। তারা এয়ার কমোডর বা গ্রুপ ক্যাপ্টেন পদমর্যাদার হবেন। পরিচালক থাকবেন মোট তিনজন। তারা উইং কমান্ডার পদমর্যাদার হবেন।
এই জনবলের মধ্যে ৫ হাজার ১৬৭ জন শাহজালালে এবং ৯৫৯ জন করে ওসমানী, শাহ আমানত ও কক্সবাজার বিমানবন্দরে মোট ২ হাজার ৮৭৭ জন দায়িত্ব পালন করবেন। আর অভ্যন্তরীণ চারটি বিমানবন্দর যশোর, রাজশাহী, বরিশাল ও সৈয়দপুরে দায়িত্বে থাকবেন ৫৬০ জন করে মোট ২ হাজার ২৪০ জন। তিন ধাপে এই জনবল পূরণ করা হবে। প্রথম ধাপে নিয়োগ করা হবে ৩ হাজার ৮৯৪ জন, দ্বিতীয় ধাপে ৩ হাজার ৪০৭ জন এবং তৃতীয় ধাপে ৩ হাজার ৩৩১ জন।
বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মঞ্জুর কবীর ভুঁইয়া বলেন, উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশও। অপরাধের ধরণ বিবেচনায় দিন দিন অপরাধ নির্মূল ব্যবস্থাও হালনাগাদ হচ্ছে। সব কিছু ঠিক থাকলে চলতি বছরই বিএএসএফের যাত্রা শুরু হবে বলে আশা করছি।