চলমান বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৫৭ লাখ মানুষ; মৃত্যু ২৩
ত্রিপুরার বাঁধ খুলে দেওয়া ও ভারী বৃষ্টিপাতে উজানের ঢলে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে দেশের বিভিন্ন জেলা। এক সপ্তাহ ধরে চলা বন্যায় ১১ জেলায় ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৭ লাখ ১ হাজার ২০৪ জনে। বন্যার মধ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকায় যে ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে, তা কমে যাওয়ার আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
গত ২৪ ঘণ্টায় পূর্বাঞ্চলীয় কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ফেনী জেলার ভারতীয় ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী অঞ্চলে এবং ত্রিপুরার অববাহিকাগুলোয় উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাত হয়নি। এ অবস্থায় ফেনী ও কুমিল্লা জেলার নিম্নাঞ্চলের বিদ্যমান বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহত আছে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। নতুন নতুন এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে। নড়াইলে ঘরবাড়ি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সড়কের কোথাও কোথাও হাঁটুসমান পানি জমেছে। টানা বৃষ্টিতে খুলনায় জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে, বাগেরহাট শহরের বেশিরভাগ এলাকা ও প্রধান প্রধান সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। বৃষ্টিপাত থেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মৌলভীবাজার ও খাগড়াছড়ির বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হতে শুরু করেছে। উজানের তীব্র ঢল এবং অতিভারি বৃষ্টির কারণে গত মঙ্গলবার থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। অল্প সময়ের মধ্যে তা বিস্তৃত হয় ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, লক্ষ্মীপুর ও কক্সবাজারে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুল হাসান সোমবার (২৬ আগস্ট) সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানান, ১১ জেলায় ১২ লাখ ৩৮ হাজার ৪৮টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যায় মৃত ২৩ জনের মধ্যে কুমিল্লায় মারা গেছে ছয়জন, নোয়াখালী ও চট্টগ্রামে মারা গেছে পাঁচজন করে এবং কক্সবাজারে তিনজন মারা গেছে। আর একজন করে মারা গেছে ফেনী, খাগড়াছড়ি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও লক্ষ্মীপুরে।
কামরুল হাসান বলেন, পানিবন্দি ও ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য তিন হাজার ৮৩৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে ৪ লাখ ৬৯ হাজার ৫২৩ জন মানুষ এবং ২৮ হাজার ৯০৭টি গবাদি পশুকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। ১১ জেলার ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য মোট ৬৪৫টি মেডিকেল টিম চালু রয়েছে।
কামরুল হাসান বলেন, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সচেতন হয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার ওপর জোর দেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে সহায়তা দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে সচিব কামরুল হাসান বলেন, যারা ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত হয়ে প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে সহায়তা (চেক/পে-অর্ডার/ব্যাংক ড্রাফটের মাধ্যমে) দিতে চান তারা প্রধান উপদেষ্টার পক্ষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার কাছেও তা দিতে পারেন।