ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খানের পদত্যাগ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার গণআন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার আগে পরে অনেক মন্ত্রী, এমপিসহ দলটির নেতাকর্মীরাও অনেকে বিদেশে পালিয়েছেন, কেউবা আত্মগোপনে আছেন। এরপর থেকে সরকারিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আওয়ামী লীগ মনোনীত পদগুলোতে পদত্যাগের হিড়িক পড়ে। অনেকে আবার বাধ্য হচ্ছেন পদত্যাগ করতে। এই অবস্থায় পদত্যাগ করেছেন ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান।
গতকাল বুধবার (১৪ আগস্ট) অনলাইন মাধ্যমে তিনি এই পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ওয়াসার এক কর্মকর্তা। নাম না প্রকাশের শর্তে তিনি জানান, পদত্যাগপত্রে অসুস্থতা জনিত কারণে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করতে অপারগতার কথা জানিয়েছেন তাকসিম এ খান।
তার পদত্যাগের বিষয়ে গত মঙ্গলবার থেকেই গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল। বিষয়টির সত্যতা জানতে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। কারণ তার সঙ্গে যোগাযোগের ফোন নম্বর বারবার বন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল।
শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ দুই সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, প্যানেল মেয়র ও কাউন্সিলরাও লাপাত্তা হয়েছেন। সেই সঙ্গে ঢাকা ওয়াসাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না, তারা ইচ্ছে করেই গা ঢাকা দিয়েছে, অফিসও করছেন না। তাদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা ওয়াসা ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান। তিনি নিজেও গা ঢাকা দিয়েছেন, অফিস করছেন না। সেই সঙ্গে এই এমডির অনুসারি বেশ কিছু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও ঢাকা ওয়াসায় অফিস করতে আসেননি গত কয়েকদিন।
ঢাকা ওয়াসার একটি সূত্র বলছে, এমডি তাকসিম এ খান গত পরশু অনলাইনে ঢাকা ওয়াসার অনেকের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং তিনি পদত্যাগ করবেন বলে জানিয়েছিলেন। তবে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর থেকেই তাকসিম এ খান এক দিনও নিজের দপ্তরে আসেননি। তিনি দেশে আছেন, না কি বিদেশে চলে গেছেন, সেটিও নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। তাকসিম এ খান, তার স্ত্রী ও সন্তানরা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক।
এদিকে, গত রোববার থেকে কারওয়ান বাজারে ওয়াসা ভবনের সামনে এমডি সহ দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সমাবেশ করে আসছে ওয়াসার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পদত্যাগ করেছেন ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান- এমন গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।
ঢাকা ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালে প্রথম দফায় নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে বিভিন্ন সময় মেয়াদ বাড়িয়ে আর পদ ছাড়তে হয়নি তাকসিম এ খানকে। তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের খুবই ঘনিষ্ঠ ছিলেন যে কারণে সপ্তমবারের মতো ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) দায়িত্ব পান।
সব শেষ গত বছরের জুলাই মাসে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদে আরও তিন বছরের জন্য তাকসিম এ খানের মেয়াদ বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়। এরপর থেকে তিনি সপ্তমবারের মত মেয়াদ বাড়িয়ে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। কিন্তু ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে তিনি আর নিজ কার্যালয়ে আসেননি। গা ঢাকা দিয়ে সবার সঙ্গে যোগাযোগ করছেন না। তিনি কোথায় আছেন তা জানেন না ঢাকা ওয়াসার অন্যান্য কর্মকর্তারা।
১৯৯৬ সালের ওয়াসা অ্যাক্ট অনুযায়ী পরিচালিত হয় ঢাকা ওয়াসা। এ আইনে সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হচ্ছেন এমডি। ওয়াসা বোর্ডের প্রস্তাব বা সুপারিশ অনুযায়ী স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এমডি পদে নিয়োগ দেয় সরকার।