জলবায়ু পরিবর্তন

২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের শস্য উৎপাদন ৫০ শতাংশ কমে যেতে পারে

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৯ মে ২০২৪, ০৯:২৭ AM

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের শস্য উৎপাদন ৫০ শতাংশ কমে যেতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন পরিবেশবিদ ও বিজ্ঞানীরা। জলবায়ু গবেষক ড. ড. আইনুন নিশাত বলেছেন, পরিবেশের ক্ষতি করে মানুষ যেসব কাজ করছে তারই ভয়াবহ প্রতিশোধ নিতে চলেছে প্রকৃতি।

শনিবার (১৮ মে) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে জুম বাংলাদেশ ইয়ুথ ফাউন্ডেশন, ওশান নেটওয়ার্ক এক্সপ্রেস ও সাউথ এশিয়ান ক্লাইমেট জার্নালিস্ট ফোরামের যৌথ এক জাতীয় সেমিনারে জলবায়ু বিজ্ঞানী ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন। ‘জলবায়ুর পরিবর্তন ও তাপপ্রবাহ প্রতিরোধে করণীয়’ বিষয়ের এ সেমিনারে পরামর্শক হিসেবে ছিল বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)।

জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে যা বলছেন বিশেষজ্ঞরা (সংগৃহীত ছবি)

বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই পৃথিবীতে সামনের যে যুদ্ধ, সামনের যে লড়াই সেটা জলবায়ুকে ঘিরেই হবে। কারণ আমরা কোনকিছু দিয়ে ঢেকে রেখে এই পৃথিবীকে রক্ষা করতে পারবো না, যদিনা আমরা প্রকৃতিকে রক্ষা করতে পারি। 

সেমিনারে পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলেন, আমরা যদি ডেভেলপমেন্ট হিসেবে দূষণকে গুরুত্ব না দিই তাহলে আমাদের মানুষের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি হবে, কারণ আমাদের মানুষের ঘনত্ব অনেক বেশি। 

এ সময় পরিবেশের প্রাকৃতিক ভারসম্য আনতে শহরে সবুজায়নের সঠিক নীতিমালা বাস্তবায়নের দাবি জানান খ্যাতিমান স্থপতি ইকবাল হাবিব। তিনি বলেন, গাছ কাটার আগে প্রতিস্থাপন নিশ্চিত না করে গাছ কাটা বন্ধ করতেই হবে। তিনি আরও বলেন, একটি গাছ কাটলে ১০টি গাছ লাগাতে হবে। 

জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবেলায় এখনিই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাস্তবায়নের দাবি জানান এমিরেটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষয়ক্ষতিজনিত ঝুঁকি মোকাবেলা করতে ৫ ধরণের নতুন ফসল লাগবে, যা বন্যা, ক্ষরা, তাপ এবং লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে। তার উৎপাদনের সময়ও কম হতে হবে এমন ফসল প্রয়োজন। 

এসময় পরিবেশ বাঁচাতে জনসচেতনতা ও সামাজিক আন্দোলনের দাবি জানান বক্তারা।

প্রসঙ্গত, বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পরিবেশের এই বিপর্যয়কে ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্ট ম্যানেজমেন্ট অ্যাকশনপ্ল্যান-এ দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। কোনো দেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সত্যিই পড়ছে কি না, তা চারটি মানদন্ডে বিবেচনা করা হয়। ১. জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ২. কোথায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেশি হচ্ছে ৩. সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যা কোথায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং ৪. ক্ষতিগ্রস্ত দেশটি ক্ষতি মোকাবিলায় বা অভিযোজনের জন্য এরই মধ্যে কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে।

বাংলাদেশে একাধারে সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্ততা সমস্যা, হিমালয়ের বরফ গলার কারণে নদীর দিক পরিবর্তন, বন্যা, ক্ষরা ইত্যাদি সব দিক দিয়েই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাত্রাও অনেক বেশি। তাই উল্লিখিত চারটি মানদন্ডেই বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকায় শীর্ষে। 

আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান জার্মান ওয়াচ-এর ২০১০-এ প্রকাশিত গ্লোবাল ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্স অনুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ক্ষতির বিচারে শীর্ষ ১০টি ক্ষতিগ্রস্ত দেশের মধ্যে প্রথমেই অবস্থান করছে বাংলাদেশ। এই সমীক্ষা চালানো হয় ১৯৯০ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ১৯৩টি দেশের ওপর। উল্লেখ্য, উক্ত প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রকাশিত ২০০৭ এবং ২০০৮ সালের প্রতিবেদনেও বাংলাদেশ সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ।