জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস আজ; বাংলাদেশের প্রশংসায় ইইউ

আজ বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি উদযাপিত হচ্ছে।
এ উপলক্ষে ঢাকাস্থ ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দূতাবাস এক বার্তায় জানিয়েছে, ১৯৮৮ সাল থেকে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা বিশ্বব্যাপী সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে আসছেন, যা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। বৃহস্পতিবার (২৯ মে) জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস উপলক্ষে দেওয়া বার্তায় ইইউ এ প্রশংসা করে।
বার্তায় বলা হয়, সংঘাতের অবসান ও প্রাণ রক্ষার এই প্রচেষ্টার স্বীকৃতি জানাই আমরা। জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি ইইউ দৃঢ়ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের এই কর্মকাণ্ড আমাদের নিরাপদ রাখে এবং বাংলাদেশের সমৃদ্ধিতেও সহায়তা করে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৮৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪৩টি দেশ বা স্থানে ৬৩টি শান্তিরক্ষা মিশন বা কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন করেছে বাংলাদেশ। এসব মিশনে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর ২ লাখ ৫৫৮ জন শান্তিরক্ষী অংশ নিয়েছেন। বর্তমানে ১০টি দেশ বা স্থানে বাংলাদেশের মোট ৫ হাজার ৮১৮ জন শান্তিরক্ষী মোতায়েন রয়েছে। এদের মধ্যে ৪৪৪ জন নারী।
আর্মড ফোর্সেস ডিভিশন (এএফডির) তথ্য অনুযায়ী, বিশ্ব শান্তিতে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা (সেনা, নৌ ও বিমান) শান্তিরক্ষায় অভিযান চালাতে গিয়ে এখন পর্যন্ত ১৪৪ জন জীবন উৎসর্গ করেছেন। তাদের মধ্যে ১৪১ জনই সেনাবাহিনীর সদস্য।
চলতি বছরের শান্তিরক্ষী দিবসের প্রতিপাদ্য, ‘শান্তিরক্ষার ভবিষ্যৎ’। এটি দ্রুত পরিবর্তনশীল জটিল বিশ্বে শান্তিরক্ষা অভিযানের বিবর্তিত চরিত্রকে প্রতিফলিত করে।
ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শান্তিরক্ষা মিশনগুলো আধুনিক ও অভিযোজিত করতে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে জাতিসংঘ।
এবারের আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস উদযাপনে রাষ্ট্রীয়ভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ। সকালে শান্তিরক্ষীদের স্মরণের মাধ্যমে দিবসের কর্মসূচি শুরু হবে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী প্রধান অতিথি হিসেবে ‘শান্তিরক্ষী দৌড়/রেলি-২০২৫’ অনুষ্ঠান উদ্বোধন করবেন। পরে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলনকেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আহত শান্তিরক্ষীদের জন্য সংবর্ধনা এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের ওপর বিশেষ আয়োজন অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। অন্যদের মধ্যে উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্যরা, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার, বাংলাদেশে নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী, তিন বাহিনী প্রধানগণ, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, পুলিশের মহাপরিদর্শক, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এবং গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বসহ ঊর্ধ্বতন সামরিক ও অসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
এছাড়া, প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ‘আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস’ উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘গত জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণঅভ্যুত্থান এবং পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সশস্ত্র বাহিনী জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অভিজ্ঞ সশস্ত্র বাহিনী ও পুলিশের সদস্যগণ সংঘাত প্রতিরোধ, বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা, মানবাধিকার নিশ্চিতকরণ ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় নিরলসভাবে কাজ করবেন বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। বাংলাদেশ শান্তির সংস্কৃতি, সহনশীলতা এবং মানবিকতার চর্চায় বিশ্বাসী। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে আমাদের অব্যাহত অংশগ্রহণ বিশ্বে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় আমাদের দৃঢ় অঙ্গীকারের প্রতীক। আমি আশা করি, ভবিষ্যতেও আমাদের শান্তিরক্ষীরা তাদের পেশাগত দক্ষতা, সাহসিকতা, অনন্য সাধারণ মানবীয় গুণাবলি, আত্মত্যাগ ও নিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি শান্তি প্রতিষ্ঠাকারী দেশ হিসেবে বিশ্ব দরবারে সুপরিচিত করবেন।’