গাজায় মধ্যস্ততাকারীর ভূমিকা থেকে নিজেদের সরিয়ে নিল কাতার
গাজাবাসীর ওপর থেকে দুর্ভোগ কিছুতেই কমছে না, এর ওপর ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি চুক্তির মূল মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করার কথা জানিয়েছে কাতার। সেইসঙ্গে দেশটি ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসকে সতর্ক করে জানিয়েছে, দোহা অফিস আর তাদের উদ্দেশ্য পূরণ করবে না। একটি কূটনৈতিক সূত্রের বরাত দিয়ে স্থানীয় সময় শনিবার বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে ওই সূত্র বলেছে, ইসরায়েল ও হামাস—দুই পক্ষকেই কাতার জানিয়েছে, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে আন্তরিকভাবে যেতে রাজি না হবে, ততক্ষণ দোহা এ বিষয়ে আর মধ্যস্থতা করবে না। ফলে দোহায় হামাসের কার্যালয় থাকার দরকার নেই।
গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে কাতার মিশর ও যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ে যুদ্ধবিরতির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে তাতে কোনো লাভ হয়নি। গত অক্টোবরের মাঝামাঝিতেও হামাস একটি স্বল্পমেয়াদি যুদ্ধবিরতি চুক্তি প্রত্যাখান করে।
এর আগে গতকাল বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজায় যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি চুক্তি মেনে না নেওয়ায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের নেতাদের কাতার থেকে বের করে দিতে বলেছে যুক্তরাষ্ট্র। আমেরিকার একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার বরাত এ খবর জানায় বার্তা সংস্থাটি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, ‘জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার বিষয়ে বারবার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার পর হামাসের নেতাদের আর কোনো মার্কিন সহযোগী দেশের রাজধানীতে স্বাগত জানানো উচিত নয়। কয়েক সপ্তাহ আগে জিম্মি মুক্তির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের পর আমরা কাতারের কাছে তা স্পষ্ট করে দিয়েছি।’ হামাসের তিন কর্মকর্তা জানান, তারা কাতারের পক্ষ থেকে এমন কোনো বার্তা পাননি। কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেও এ নিয়ে কোনো মন্তব্য পায়নি রয়টার্স।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন গাজা এবং লেবাননে ইসরায়েলি হামলা বন্ধ করতে চূড়ান্ত পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এরইমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে যাওয়ায় প্রশাসনে বাইডেনের প্রভাবও কমেছে।
এক বছরের বেশি সময় ধরে চলা ইসরায়েলি আগ্রাসনে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজা। বাইডেন প্রশাসনের সামরিক সহায়তায় সেখানে প্রাণহানি ছাড়িয়েছে ৪৩ হাজার ৫০০। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ায় উদ্বেগ বেড়েছে গাজাবাসীর মধ্যে। ট্রাম্পের জয় ফিলিস্তিনি জনগণের ইতিহাসে নতুন করে বিপর্যয় আনবে বলে মনে করছেন তারা। যদিও তাদের বিপর্যয়ের কোন শেষ নেই। ক্ষুধা, হতাশা আর মৃত্যুই তাদের নিত্যসঙ্গী। যারাই গাজাবাসীর সাহায্যে এগিয়ে এসেছে ইসরায়েল তাদের ওপরই ইসরায়েলি খড়গ চলেছে। গাজায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনকে নিষিদ্ধ করাসহ মধ্যস্ততাকারী কাতারকেও বিতর্কিত করে ফেলেছে দখলদার ইসরায়েল। এর ফলে কার্যত গাজাবাসীকে সাহায্য করার আর কোন দেশ অবশিষ্ট নেই।