গাজা যুদ্ধবিরতি নিয়ে ধৈর্য ফুরিয়ে যাচ্ছে নিরাপত্তা পরিষদের
গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডে অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে দখলদার ইসরায়েল। টানা প্রায় ১১ মাস ধরে চালানো এই হামলায় এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন প্রায় ৪১ হাজার ফিলিস্তিনি। বর্বর এই আগ্রাসনের জেরে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে বাড়ছে ক্ষোভ।
যুদ্ধবিরতি আসন্ন বলে বারবার দাবি করা হলেও তেমন কিছুই এখনও পর্যন্ত ঘটেনি। এমন অবস্থায় গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য দেশগুলোর ধৈর্য ফুরিয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছে সংস্থাটির বর্তমান সভাপতি স্লোভেনিয়া।
এমনকি হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে মধ্যস্থতা না হলে নিরাপত্তা পরিষদই ব্যবস্থা নেওয়ার কথা চিন্তা করবে বলেও জানিয়েছে দেশটি। বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি সেপ্টেম্বর মাসে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে স্লোভেনিয়া। মঙ্গলবার জাতিসংঘে নিযুক্ত স্লোভেনিয়ার দূত বলেছেন, নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের মধ্যে ধৈর্যের অবসান ঘটছে এবং গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের মধ্যে শিগগিরই মধ্যস্থতা ও যুদ্ধবিরতি না হলে ১৫ সদস্যের এই কাউন্সিল সম্ভবত নিজেই ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বিবেচনা করবে।
জাতিসংঘে স্লোভেনিয়ার রাষ্ট্রদূত স্যামুয়েল জবোগার আরও বলেন, ‘নিরাপত্তা পরিষদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে যে— সংস্থাটিকে এক বা অন্য পথে হাঁটতে হবে। হয় একটি যুদ্ধবিরতি হবে, আর তা না হলে যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নে আমরা আর কী করতে পারি সে সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করবে কাউন্সিল।’
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি মোটামুটি নিশ্চিত যে— সেপ্টেম্বরেই নিরাপত্তা পরিষদকে দুটি পথের যেকোনও একটিতে হাঁটতে হবে... আমরা যে (এটি করতে) চাই তা নয়, আমাদের পদক্ষেপ নিতে হবে কারণ আমি মনে করি ধৈর্য শেষ হয়ে গেছে।’
এদিকে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস মঙ্গলবার প্রশ্ন করেছেন, গাজার ৬ লাখ ৪০ হাজার ফিলিস্তিনি শিশুকে পোলিও টিকা দেওয়ার সুযোগ দিতে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতি না করে যুদ্ধরত পক্ষগুলো কীভাবে কেবল তাদের লড়াইয়ে সামরিক বিরতিতে সম্মত হতে পারে?
তার মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেছেন, ‘যদি লড়াইরত পক্ষগুলো মারাত্মক এই ভাইরাস থেকে শিশুদের রক্ষা করার জন্য কাজ করতে পারে ... তাহলে অবশ্যই তারা শিশুদের এবং সমস্ত নিরপরাধ মানুষকে যুদ্ধের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা করার জন্য কাজ করতে পারে এবং তাদের অবশ্যই সেটি করা উচিত।’
অবশ্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত সোমবার বলেছিলেন, হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিশ্চিত করার জন্য যথেষ্ট কাজ করছেন না ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু।
এদিকে যুদ্ধবিরতি সম্পর্কিত গত জুনের রেজোলিউশন শিগগিরই বাস্তবায়িত না হলে নিরাপত্তা পরিষদ কী ব্যবস্থা নিতে পারে জানতে চাইলে জবোগার বলেন: ‘এমন অনেক উপায় ও সরঞ্জাম রয়েছে যা কাউন্সিলের নিয়ন্ত্রণ ও আয়ত্তে রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘তবে সেরকম কিছু শুরু করার জন্য আমি মনে করি, আমাদেরকে (রেজোলিউশন) ২৭৩৫ থেকে এগিয়ে যেতে হবে কারণ গত তিন মাস ধরে কাউন্সিল সেই রেজোলিউশনের বাস্তবায়নের অপেক্ষায় ছিল।’
অবশ্য গত সপ্তাহে গাজা নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক শেষে যুদ্ধ অবসানের প্রচেষ্টা নিয়ে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়েছিল।