ত্রিপুরাসহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে অতি ভারী বৃষ্টির শঙ্কা; রেড অ্যালার্ট জারি
ভারতের ত্রিপুরায় ভারী বৃষ্টিপাত ও বাঁধ খুলে দেওয়ায় উজানের ঢলে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে ফেনী, নোয়াখালীসহ দেশের ১১ জেলা। এতে ২৩ জন নিহত এবং ৫৫ লাখের অধিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কায় ভারতের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় কয়েকটি রাজ্যে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে।
আজ সোমবার (২৬ আগস্ট) দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়ার (পিটিআই) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উত্তর-পশ্চিম মধ্যপ্রদেশ ও তৎসংলগ্ন পূর্ব রাজস্থানে অবস্থানরত নিম্নচাপ গভীর নিম্নচাপে পরিণত হওয়ায় ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের বিষয়ে রেড অ্যালার্ট জারি করেছে আবহাওয়ার ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ (আইএমডি)।
রেড অ্যালার্ট জারি করা রাজ্যগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের সীমান্ত লাগোয়া ত্রিপুরাও রয়েছে। এই রাজ্যে সাম্প্রতিক রেকর্ড বর্ষণের কারণে বাংলাদেশের কয়েকটি জেলায় ব্যাপক বন্যা দেখা দেয়। যে কারণে ভারতের এসব রাজ্যে আবার নতুন করে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাত দেখা দিলে তা বাংলাদেশের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে পারে।
আইএমডির পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রাজস্থানের চিতোরগড় থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ-পূর্বে একটি গভীর নিম্নচাপ অবস্থান করছে। ২৯ আগস্টের মধ্যে এই গভীর নিম্নচাপ পশ্চিম-দক্ষিণ-পশ্চিমে অগ্রসর হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। এর ফলে দক্ষিণ রাজস্থান ও গুজরাটে ব্যাপক বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। পরে গভীর নিম্নচাপটি সৌরাষ্ট্র, কচ্ছ হয়ে পাকিস্তানের কিছু অংশে পৌঁছাতে পারে।
ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ বলেছে, বাংলাদেশ ও গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের ওপর আরেকটি নিম্নচাপ গভীর নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে; যা উত্তর ওড়িশা এবং ঝাড়খণ্ডের মতো অঞ্চলগুলোতে প্রভাব ফেলতে পারে। এ সময় তীব্র বাতাসের পাশাপাশি সমুদ্র উত্তাল হয়ে উঠতে পারে। যে কারণে সম্ভাব্য বন্যার বিষয়ে সতর্ক করে দিয়ে আইএমডি মৎস্যজীবী, কৃষক এবং ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বাসিন্দাদের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।
সোমবার আইএমডির জারি করা পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, গুজরাট, মহারাষ্ট্র এবং গোয়ায় আগামী ২ থেকে ৩ দিন ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। এছাড়া নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মিজোরাম ও ত্রিপুরাতেও একই ধরনের আবহাওয়া পরিস্থিতি বিরাজ করতে পারে। এসব এলাকায় রেড অ্যালার্ট জারি করে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিতে স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ভারতের আবহাওয়া বিভাগ।
আইএমডি বলেছে, কোঙ্কন, গোয়া, মহারাষ্ট্রের মধ্যাঞ্চল, ওড়িশা, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ এবং ঝাড়খণ্ডেও আগামী দু’দিন ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। দেশটির এই আবহাওয়া বিভাগ লোকজনকে শক্তিশালী বাতাসের বিষয়েও সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে। আইএমডি বলেছে, সোমবার মধ্যপ্রদেশে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার এবং সোম ও মঙ্গলবার দক্ষিণ রাজস্থানে ৬০ কিলোমিটারে পৌঁছাতে পারে।
এছাড়া গুজরাট ও সীমান্ত লাগোয়া পাকিস্তানের কিছু অঞ্চলের পাশাপাশি উত্তর মহারাষ্ট্র এবং উত্তর-পূর্ব আরব সাগরে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৫৫ কিলোমিটারে পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে। বৈরী এই পরিস্থিতিতে বন্যা, রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ ও জলাবদ্ধতা তৈরি হতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে আইএমডি। দেশটির এই সংস্থা বলেছে, ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে বন্যার কারণে ভূমিধস ও ফসলের ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকিও রয়েছে।
সূত্র: পিটিআই, হিন্দুস্তান টাইমস