রাজ্যের মানুষকে বঞ্চিত করে তিস্তার পানি বাংলাদেশকে দেওয়া সম্ভব নয়: মমতা

নিজস্ব প্রতিবেদক
আন্তর্জাতিক জার্নাল আন্তর্জাতিক জার্নাল
প্রকাশিত: ২৫ জুন ২০২৪, ১০:৩৬ AM

সম্প্রতি ভারত সফরে গিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তিস্তার পানি ভাগাভাগি নিয়ে চুক্তি করেছেন। তবে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ছাড়াই এ চুক্তি করায় চটেছেন তৃণমূল কংগ্রেস প্রধান। তিস্তার নদীর পানির হিস্যা বাংলাদেশকে দেওয়া সম্ভব নয় বলে  ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে জানিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান মমতা।

গতকাল সোমবার (২৪ জুন) মোদিকে লেখা এক চিঠিতে এ বিষয়টি জানান মমতা। 

চিঠিতে মমতা উল্লেখ করেছেন, রাজ্যের মানুষকে বঞ্চিত করে বাংলাদেশকে তিস্তার পানি দেওয়া সম্ভব নয়। 

গত ২২ জুন দুই দিনের ভারত সফর শেষে ঢাকায় ফেরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করার পর ভারতে কোনো সরকার প্রধানের এটিই ছিল প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর। 

প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে ঢাকা ও নয়াদিল্লির মধ্যে সাতটি নতুন ও তিনটি নবায়নকৃতসহ ১০টি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়। 

প্রধানমন্ত্রীর এ সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গেও একান্ত বৈঠক করেন। শেখ হাসিনা-‌নরেন্দ্র মো‌দির বৈঠক নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, দুই দেশের ঐতিহাসিক বন্ধন আরও গভীর করার লক্ষ্যে আলোচনা করেছেন দুই সরকারপ্রধান। এই আলোচনায় উন্নয়ন অংশীদারত্ব, জ্বালানি, পানিসম্পদ, বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা সহযোগিতাসহ আরও বেশ কয়েকটি বিষয়ে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার বিভিন্ন ক্ষেত্রকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

নরেন্দ্র মোদিকে লেখা চিঠিতে মমতা বলেছেন, ‘ধারণা করা হচ্ছে, এই সফরে গঙ্গা এবং তিস্তা নদীর পানিবণ্টনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু রাজ্য সরকারের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করেই কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্ত কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়।’ 
 
বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক তুলে ধরে মমতা লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে ভৌগলিক, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। বাংলাদেশের মানুষের প্রতি সব সময়ই আমি শ্রদ্ধাশীল এবং সব সময় তাদের সমৃদ্ধি জন্য প্রার্থনা করি। অতীতেও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বাংলাদেশের সঙ্গে অনেক ইস্যুতে সহযোগীতা করেছে। ভারত–বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময়, ইন্দো–বাংলাদেশ রেললাইন এবং বাস সার্ভিস- এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এবং এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক সম্বৃদ্ধির অজর্নের মাইলস্টোন হিসেব বিবেচিত।’ 
 
তৃণমূল কংগ্রেস প্রধান লিখেছেন, ‘পানি অত্যন্ত মূল্যবান এবং মানুষের জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। মানুষের ওপর সরাসরি এবং মারাত্মক প্রভাব ফেলতে এমন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে আমরা ছাড় দিতে পারি না। এ ধরনের চুক্তির ফলে সবচেয়ে খারাপ প্রভাব পড়বে পশ্চিমবঙ্গের মানুষের ওপর।’ 

মমতা আরও লিখেছেন, ‘আমি জানতে পেরেছি, ভারত সরকার ১৯৯৬ সালের ইন্দো বাংলাদেশ ফারাক্কা চুক্তি যেটি ২০২৬ সালে শেষ হয়ে যাওয়ার কথা, নবায়ণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এই চুক্তির ফলে বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে পানিবণ্টনের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। আপনি নিশ্চই অবগত আছেন যে, ফারাক্কা দিয়ে যাওয়া পানি কলকাতা বন্দরের নাব্যতা রক্ষায় এবং পশ্চিমবঙ্গের মানুষের জীবন জীবিকা পরিচালনায় এর ব্যাপক প্রভাব রয়েছে।’ 

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, ‘ধারণা করা হচ্ছে, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে তিস্তার পানিবণ্টন নিয়েও আলোচনা হয়েছে। সিকিমে বেশ কয়েকটি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি, বন উজার হওয়া এবং জলবায়ূ পরিবর্তনের ফলে তিস্তার অবস্থাও খুব একটা ভালো নয়। ধারণা করা হচ্ছে, বৈঠকে ভারত সরকার বাংলাদেশে তিস্তা প্রকল্পের জন্য একটি দ্বিরাষ্ট্রীয় সহযোগীতার কথা প্রস্তাব করেছে। আমি অত্যন্ত বিস্মিত হয়েছি, জল শক্তি মন্ত্রণালয় তিস্তার ভারত অংশের সংস্কারে এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। বাংলাদেশের সঙ্গে যদি পানিবণ্টন করা হয় তাহলে উত্তর বঙ্গের কয়েক লাভ মানুষ সেচের জন্য ব্যাপক পানি সংকটে ভুগবে। একই সঙ্গে পানের উৎস হিসেবেও তিস্তার পানির উপর উত্তরবঙ্গের মানুষ নির্ভরশীল। এ কারণে বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তার পানিবণ্টন সম্ভব নয়।’ 

মমতা ব্যানার্জি আরও লিখেছেন, ‘রাজ্য সরকারকে অন্তভুক্ত না করে তিস্তার পানি বণ্টন এবং ফারাক্কা চুক্তির বিষয়ে কোনো আলোচনা ফলপ্রসু হবে না। পশ্চিমবঙ্গের মানুষের স্বার্থ কোনো ভাবেই বিঘ্নিত হতে দেওয়া হবে না।’  

প্রসঙ্গত, ২০১১ সালে ভারত ও বাংলাদেশ তিস্তা চুক্তির খসড়া তৈরি করে। তবে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের বিরোধীতার কারণে সেই চুক্তি এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। খসড়া অনুযায়ী, খরার সময় ভারতের ৩৭ দশমিক ৫ আর বাংলাদেশের ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ পানি পাওয়ার কথা হয়।