কে বসবেন দিল্লির মসনদে; জানা যাবে কাল

নিজস্ব প্রতিবেদক
আন্তর্জাতিক জার্নাল আন্তর্জাতিক জার্নাল
প্রকাশিত: ০৩ জুন ২০২৪, ১১:১০ AM

বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশ বলা হয় ভারতকে। গত রবিবার শেষ হয় দেশটির সতেরো তম নির্বাচন। গণতন্ত্রের বৃহত্তম উৎসব নিয়ে ভারত তো বটেই, বিশেষ আগ্রহ আছে গোটা বিশ্বেরই।

১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে এখন পর্যন্ত ১৭টি লোকসভা নির্বাচন হয়েছে ভারতে। ২৮টি প্রদেশ ও ৮টি কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে এবার ভোটগ্রহণ হয়েছে ৭ ধাপে। ১৯৫১-৫২ সালের পর এবারই সর্বোচ্চ ৪৪ দিন ধরে, চলেছে ভোটের কর্মযজ্ঞ। ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পেয়েছেন ৯৬ কোটির বেশি ভোটার; অনেক মহাদেশের মোট জনসংখ্যার চেয়েও যে সংখ্যাটি বড়।

লোকসভার ৫৪৩ আসনের জন্য ইভিএম পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সরকার গঠনের জন্য পেতে হবে ২৭২ আসন। ভারতের দুই প্রধান রাজনৈতিক দল বিজেপি ও কংগ্রেস নির্বাচনে অংশ নিয়েছে জোট গঠন করে। ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টি- বিজেপির জোট এনডিএ বা ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক এলায়েন্স শুরু থেকেই ৪০০-র বেশি আসন পাওয়ার প্রত্যাশা করছে। অন্যদিকে কংগ্রেসের INDIA বা ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স এবার আশাবাদি, বিজেপির জয়রথ থামানোর ব্যাপারে।

নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুসারে, ৪ জুন সকালে একযোগে শুরু হবে ভোট গণনা; ঘোষিত হবে ফলাফল। মঙ্গলবার দুপুর নাগাদই স্পষ্ট হয়ে যাবে, বিজেপির নরেন্দ্র মোদি টানা তৃতীয় বারের মতো দিল্লির মসনদে বসছেন কিনা।

অবশ্য, আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণার আগেই আলোচনায় বুথফেরত জরিপ। গত কয়েক নির্বাচনেই যাতে মোটামুটি ইঙ্গিত পাওয়া গেছে মূল ফলাফলের। এবার, বুথফেরত জরিপ করেছে, এবিপি নিউজ, -সি ভোটার, ইন্ডিয়া টুডে-অ্যাক্সিস মাই ইন্ডিয়া, নিউজ, ২৪- টুডেজ এবং চাণক্য। যাদের প্রত্যেকেই আভাস দিচ্ছে মোদির বড় জয়ের। এমনকি গত লোকসভা নির্বাচনের চেয়েও এবার বিজেপি বেশি আসন পাবে বলে ইঙ্গিত দিচ্ছে কিছু জরিপ।

যদিও এই বুথফেরত জরিপ সত্য হবেই, এমনটা মানতে নারাজ অনেক বিশ্লেষক। এমনকি বুথফেরত জরিপের ফল একেবারে উল্টো হওয়ার নজিরও রয়েছে ভারতে। যে নজির টেনে ফলাফলের দিন চমকের আশায় বুক বেঁধে আছে বিরোধীরাও।

শেষ পর্যন্ত যদি বুথফেরত জরিপ সত্যি হয়, তাহলে টানা তৃতীয় মেয়াদে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হবেন, ৭৩ বছর বয়সী নরেন্দ্র মোদি। স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা ও প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর পর, ভারতে যে নজির গড়তে পারেননি আর কেউ। ফলে মোদির জন্য অপেক্ষা করছে বিরল এক ইতিহাস।

বুথফেরত জরিপ অনুসারে, নিজেদের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত রাজ্যগুলোর বাইরেও চমক দেখাতে পারে বিজেপি। দক্ষিণের রাজ্যগুলোতে একসময় যাদের বলতে গেলে অস্তিত্বই ছিলে না, সেখানে এবার বেশ কয়েকটি আসনে জয় পেতে পারে তারা। বেশ কয়েকটি জরিপের পূর্বাভাস অনুযায়ী, কেরালায় একাধিক আসন পেতে পারে বিজেপি। ভারতীয় বামদের শেষ শক্ত ঘাঁটি হিসেবে খ্যাত এই রাজ্যে মোদির দল কখনোই জয় পায়নি। বিজেপি চমক দেখাতে পারে পশ্চিমবঙ্গেও। বেশ কয়েকটি বুথফেরত জরিপ বলছে, বাংলায় এবার মমতা ব্যানার্জির দলের সাথে সমানে সমান লড়াই হবে গেরুয়া শিবিরের।

দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা বিজেপিকে এবার দুর্নীতির অভিযোগে ঘায়েল করতে চেয়েছে বিরোধী দলগুলো। ইন্ডিয়া জোটের প্রচারণার কেন্দ্রেও ছিলে বিষয়টি। বিপরীতে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষার বয়ান ও ধর্মীয় কট্টরপন্থায়ই ভরসা রেখেছে বিজেপি। ভোটার উপস্থিতি কম থাকায়, অনেকেই বলছিলেন, এবার অকার্যকর হয়ে পড়েছে ‘মোদি হাওয়া’। রাহুল গান্ধির ওপর ভর করে ঘুরে দাঁড়ানোর আশায় ছিলো ঐতিহ্যবাহী গান্ধি পরিবার। আর কয়েক ঘণ্টা পরই জানা যাবে, কোন পক্ষ হাসবে শেষ হাসি।