দক্ষিণ কোরিয়ার আদালতের তথ্য চুরি উত্তর কোরিয়ার হ্যাকারদের
উত্তর কোরিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে রেষারেষি অনেক পুরনো। ১৯৫০ সালে দুই কোরিয়ার মধ্যে যুদ্ধ বাঁধে, শেষ হয় ১৯৫৩ সালে। তবে এর আগে থেকেই দুই দেশের মধ্যে তীব্র শত্রুতা বিরাজমান। এজন্য আজও পর্যন্ত হাজার হাজার মানুষকে জীবন দিতে হয়েছে।
দুই কোরিয়ার এই রেষারেষি এখন প্রযুক্তিগত পর্যায়ে চলে গেছে। দক্ষিণ কোরিয়ার একটি আদালতের কম্পিউটার নেটওয়ার্ক থেকে স্পর্শকাতর তথ্য চুরি করেছে উত্তর কোরিয়ার হ্যাকাররা। দুই বছরের বেশি সময় ধরে চুরি হওয়া ওই তথ্যের মধ্যে রয়েছে ব্যক্তিগত বিভিন্ন নথিপত্রও।
শনিবার (১১ মে) দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলের পুলিশ এ তথ্য জানিয়েছে। খবর এএফপির।
বলা হয়, পারমাণবিক শক্তিধর উত্তর কোরিয়ার হাজার হাজার হ্যাকারকে নিয়ে তৈরি করা একটি বাহিনী রয়েছে। এই হ্যাকাররা দেশটির অভ্যন্তরে, এমনকি বিদেশ থেকেও তৎপরতা চালিয়ে থাকে। বিশ্বজুড়ে বেশ কয়েকটি বড় বড় সাইবার হামলার জন্য আগেও অভিযুক্ত করা হয়েছে তাদের।
আদালতের কম্পিউটার নেটওয়ার্ক থেকে তথ্য চুরির বিষয়টি তদন্ত করেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা ও সরকারি কৌঁসুলিরা। তাঁদের বরাতে সিউল পুলিশ জানিয়েছে, ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১ হাজার ১৪ গিগাবাইট তথ্য চুরি করেছে হ্যাকাররা।
এএফপিকে পাঠানো এক বিবৃতিতে দক্ষিণ কোরিয়া পুলিশ জানিয়েছে, ম্যালওয়্যারের মাধ্যমে তথ্যগুলো চুরি করা হয়েছে। এর মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিকদের বিয়ে ও ব্যক্তিগত ঋণের তথ্য রয়েছে। বিষয়টি ধরা পড়ার আগপর্যন্ত ওই তথ্য চারটি স্থানীয় ও চারটি বিদেশি সার্ভারে পাঠানো হয়েছে।
আগের হ্যাকিংয়ের কিছু ঘটনায় প্রাপ্ত তথ্যের সঙ্গে এবার আদালতের কম্পিউটার নেটওয়ার্কে থাকা ম্যালওয়্যার, তথ্য নেওয়া সার্ভারগুলোতে অর্থ পরিশোধের বিস্তারিত এবং আইপি অ্যাড্রেসগুলো পরীক্ষা করে দেখেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার কর্মকর্তারা। এরপরই তথ্য চুরির সঙ্গে পিয়ংইয়ং জড়িত বলে জানতে পারে সিউল। দেশটির পুলিশ বলছে, চুরি হয়ে যাওয়া তথ্যের মাত্র ৪ দশমিক ৭ গিগাবাইট উদ্ধার করা গেছে। এর মধ্য ৫ হাজার ১৭১টি নথি রয়েছে।
উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রকল্পের কারণে দেশটির ওপর একাধিক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে জাতিসংঘ। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এমন পরিস্থিতিতে বৈদেশিক মুদ্রা হাতিয়ে নিতে কয়েক বছর ধরে সাইবার হামলা বাড়িয়েছে উত্তর কোরিয়ার হ্যাকাররা।
দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, শুধু ২০২২ সালেই প্রায় ১৭০ কোটি ডলার সমমূল্যের ক্রিপ্টোকারেন্সি চুরি করেছিল উত্তর কোরিয়ার হ্যাকাররা। এ ছাড়া নিজেদের অস্ত্র প্রকল্পে কাজে লাগানোর জন্য সাইবার হামলা চালিয়ে বিভিন্ন তথ্যও জোগাড় করেছে তারা।