টাকা না পেলে ওরা হয়তো আমাদেরকে মেরে ফেলবে: ছিনতাই হওয়া জাহাজের নাবিক
সোমালি জলদস্যুদের দখল করা বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর একজন ক্রু সদস্য তার এক সহকর্মীর কাছে ভয়েস রেকর্ডিং পাঠিয়েছেন। সেখানে জলদস্যুর সংখ্যা সাত–আটজন উল্লেখ করে তিনি আশঙ্কা করেছেন, জলদস্যুরা সম্ভবত জাহাজটিকে সোমালি উপকূলে তাদের ঘাঁটিতে নিয়ে যাবে।
ভয়েস রেকর্ডিংটিতে কার কণ্ঠ শোনা যাচ্ছে তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ভয়েস ক্লিপটি পাঠানো হয়েছে আরমান হোসেন বাবু নামক একই কোম্পানির অন্য জাহাজে কর্মরত আরেক নাবিকের কাছে।
ভয়েস রেকর্ডিংয়ে ভুক্তভোগী নাবিককে বলতে শোনা যায়, 'তারা [জলদস্যু] আমাদেরকে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। আমরা সবাই [জাহাজের] ব্রিজে আটক আছি। আমি এখন ওয়াশরুমে এসে আপনাকে ভয়েস [বার্তা] দিচ্ছি [পাঠাচ্ছি]। ওরা সাত–আটজন আছে — পাইরেটস। ওরা হয়তো আমাদেরকে ওদের ওখানে নিয়ে যাবে আর কি। আমাদের জন্য দোয়া করবেন। ওদের সবার কাছে গান [বন্দুক] আছে।'
গত দুই দিন আগে ভারত মহাসাগরে সোমালি জলদস্যুরা ২৩ জন ক্রুসহ বাংলাদেশি পতাকাবাহী এ জাহাজটি ছিনতাই করে।
আরমানকে পাঠানো আরেকটি রেকর্ডিংয়ে ওই নাবিক আরও বলেন, 'তারা [জলদস্যু] দুই মাস আগে একটি ইরানি ফিশিং বোট আটক করেছিল। সেই নৌকাটি আমাদের জাহাজের সঙ্গে বাঁধা আছে। তারা মূলত সেই নৌকা থেকে আমাদের জাহাজে হামলা করেছিল। এখন ওই ফিশিং বোটটা তারা ছেড়ে দেবে। আমরা তাতে ডিজেল দিয়েছিলাম।
'তারপর আমাদেরকে নিয়ে হয়তো সোমালি উপকূলে ওদের আস্তানায় চলে যাবে। দোয়া করবেন।
ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর প্রধান কর্মকর্তা (চিফ অফিসার) মো. আতিক উল্লাহ গতকাল মঙ্গলবার রাতে স্ত্রীকে পাঠানো একটি অডিও বার্তায় বলেন, 'যদি তাদের টাকা না দেওয়া হয়, তাহলে তারা আমাদের একে একে মেরে ফেলবে'।
জলদস্যুরা তাদের কাছ থেকে ফোন কেড়ে নেওয়ার আগে আতিক উল্লাহ তার স্ত্রীকে এ বার্তা পাঠান।
আতিক উল্লাহকে আরও বলতে শোনা যায়, এই মেসেজ সবার কাছে জানিয়ে দিও। তারা আমাদের সবার কাছ থেকে মোবাইল ফোন নিয়ে নিচ্ছে। তাদের যদি টাকা দেওয়া না হয়, তাহলে তারা একজন একজন করে আমাদের মেরে ফেলবে। যত তাড়াতাড়ি টাকা দেওয়া হবে, তারা তত তাড়াতাড়ি আমাদের ছেড়ে দেবে। এই বার্তাটা সবদিকে পৌঁছে দিও।'
আরেকটি অডিও বার্তায় আতিকউল্লাহ খানকে বলতে শোনা যায়, '৫০ জন জলদস্যু আমাদের ঘিরে রেখেছে। তারা এখনও আমাদের কোনো ক্ষতি করেনি। কিন্তু আমাদের বিভিন্নভাবে ভয় দেখাচ্ছে।
তিনি বলেন, 'আমাদের জাহাজে ২০–২৫ দিনের রসদ (খাবার) আছে। ২০০ টন বিশুদ্ধ পানি আছে। আর জাহাজে রয়েছে ৫৫ হাজার টন কয়লা।' রসদ যাতে দ্রুত ফুরিয়ে না যায়, সে জন্য অপ্রয়োজনে ব্যবহার না করার জন্য সবাইকে জানানো হয়েছে।