সমুদ্রপথে গাজায় ত্রাণ পাঠানোর ঘোষণা ইউরোপীয় ইউনিয়নের
গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনের অধিকৃত গাজায় নৃশংস হামলা চালিয়ে যাচ্ছে দখলদার ইসরায়েল। তাদের বর্বর হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ৮৭৮ জনে। এছাড়া আহত হয়েছে আরও ৭২ হাজারের অধিক মানুষ। নিহতদের মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু।
দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী শুধু হামলা করেই খ্যান্ত দেয়নি, তারা গাজায় ত্রাণ সরবরাহও বন্ধ করে দিয়েছে। এর ফলে অভুক্ত হয়ে মারা যাচ্ছে বহু শিশু। গাজায় প্রায় ৬ লাখের মতো মানুষ অভুক্ত রয়েছে। এছাড়া একবেলা-আধাবেলা করে খাবার পাচ্ছে আরও কয়েক লাখ মানুষ। এমতাবস্থায় গাজায় বিমান থেকে ত্রাণ ফেলেছিলো প্রতিবেশি দেশ জর্ডান। তাদের দেখাদেখি ফ্রান্সও বিমান থেকে ত্রাণ সহায়তা ফেলে।
এদিকে তুরস্ক সমুদ্রপথে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ত্রাণবাহী জাহাজ পাঠিয়েছে গাজায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও সমুদ্রপথে গাজায় ত্রাণ পাঠানোর ঘোষণা দেয়। এবার যুদ্ধকবলিত ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় সমুদ্রপথে ত্রাণ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এ উদ্দেশ্যে একটি করিডরও খোলা হচ্ছে। চলতি সপ্তাহের শেষের দিকে এ করিডরের মাধ্যমে গাজায় ত্রাণ পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন ইইউয়ের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, গতকাল শুক্রবার সাইপ্রাসের লারনাকা বন্দর পরিদর্শন করেন উরসুলা ভন ডার লিয়েন। পরিদর্শন শেষে তিনি বলেন, ‘সংযুক্ত আরব আমিরাতের সহযোগিতায় আগামী শুক্রবার পরীক্ষামূলকভাবে একটি ত্রাণের চালান সাইপ্রাস থেকে গাজার দিকে যাবে।’
সমুদ্রে করিডর খোলা প্রসঙ্গে ইইউয়ের প্রেসিডেন্ট বলেন, আমরা সংযুক্ত আরব আমিরাত ও আমেরিকার সঙ্গে সমন্বয় করে সাইপ্রাসে সমুদ্র করিডর চালু করতে যাচ্ছি। সকল প্রস্তুতি প্রায় শেষের পথে। শিগগিরই এ করিডর খোলা হবে। আশা করছি শুক্রবার–শনিবারের মধ্যেই আমরা এই করিডোর ব্যবহার করে ত্রাণের প্রাথমিক চালান গাজায় পাঠাতে পারব।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছিলেন, ‘সমুদ্রপথে গাজায় ত্রাণ পাঠানোর জন্য গাজা উপকূলে বন্দর নির্মাণ করা হবে।’ প্রেসিডেন্টের এ ঘোষণার পর মার্কিন কর্মকর্তারা বলেন, ‘বন্দর নির্মাণ করতে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগবে।’
এ দিকে এ করিডর নির্মাণের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে ইসরায়েল। গতকাল শুক্রবার এক বিবৃতিতে ইসরায়েল বলেছে, সাইপ্রাস থেকে গাজা উপত্যকা পর্যন্ত একটি মানবিক সহায়তা করিডোরকে আমরা স্বাগত জানাই। এই উদ্যোগে অন্যান্য দেশকে অংশ নিতে আহ্বান জানাচ্ছি।
তবে সমুদ্রপথে আসা ত্রাণসামগ্রী নিরাপত্তা পরীক্ষা করার পরই গাজায় প্রবেশ করতে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিওর হায়াত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেন, ‘সাইপ্রাস থেকে পাঠানো ত্রাণের জাহাজগুলো ইসরায়েলি মান অনুযায়ী নিরপত্তা পরীক্ষা করার পরই কেবল গাজায় প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে।’
উল্লেখ্য, ফিলিস্তিনের গাজায় হত্যাকাণ্ডে ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় সহযোগি হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। গত ৭ অক্টোবর থেকে দেশগুলো ইসরায়েলের কাছে কয়েক বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র সহায়তা পাঠিয়েছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র অন্তত ৫ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা পাঠিয়েছে ইসরায়েলে। এছাড়াও জাতিসংঘে গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে বরাবরই ভেটো দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র।