বিশ্বের সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত যে দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক
আন্তর্জাতিক জার্নাল আন্তর্জাতিক জার্নাল
প্রকাশিত: ৩০ জানুয়ারি ২০২৪, ০১:৫৪ PM

বিশ্বের ১৮০টি দেশের মধ্যে সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকার শীর্ষে রয়েছে ডেনমার্ক। দুর্নীতির ধারণা সূচকের (সিপিআই) ১০০ স্কোরের মধ্যে ইউরোপের দেশটি পেয়েছে ৯০ স্কোর।

২০২৩ সালের পরিস্থিতি বিবেচনায় বার্লিনভিত্তিক দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) প্রকাশ করা ‘দুর্নীতির ধারণা সূচক (সিপিআই)’-এ এই তথ্য উঠে এসেছে।

মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) বেলা ১২টায় ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এ তথ্য উপস্থাপন করেন।

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, করাপশন পারসেপশনস ইনডেক্স বা সিপিআই ২০২৩ অনুযায়ী বাংলাদেশের স্কোর ২৪ যা গত ১২ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন দুই ধরনের স্কোরের হিসাবেই ২০২২ এর তুলনায় এ বছর বাংলাদেশের অবস্থান দুই ধাপ অবনমন হয়েছে। স্কোর প্রাপ্তির সর্বোচ্চ ক্রম অনুসারে বাংলাদেশের অবস্থান ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৪৯তম। নিম্নক্রম অনুসারে ১০ম স্থানে রয়েছে। নিম্নক্রম অনুযায়ী বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথভাবে ১০ম অবস্থানে রয়েছে সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, ইরান, লেবানন ও জিম্বাবুয়ে। বাংলাদেশ এবারও আফগানিস্তানের পর দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয় সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে।

তিনি বলেন, সিপিআই অন্তর্ভুক্ত ১৮০টি দেশের মধ্যে এ বছর ৫৫টি দেশের স্কোর গত বছরের তুলনায় বৃদ্ধি পেলেও ৬৩টি দেশের স্কোর কমেছে এবং ৬২টি দেশের স্কোর অপরিবর্তিত রয়েছে। সূচকের ১০০ স্কেলে কোনো দেশই শতভাগ স্কোর অর্জন করেনি। এ বছরও বিশ্বের দুই তৃতীয়াংশ দেশের স্কোর ৫০ এর নিচে। আর বিশ্বের ৮০ শতাংশ জনগোষ্ঠীই গড় স্কোর ৪৩-এর চেয়ে কম স্কোর প্রাপ্ত দেশসমূহে বসবাস করে। সূচকে ৯০ স্কোর পেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসাবে তালিকার শীর্ষে অবস্থান করছে ডেনমার্ক। ৮৭ স্কোর নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে ফিনল্যান্ড এবং ৮৫ স্কোর পেয়ে তৃতীয় স্থানে নিউজিল্যান্ড। ১১ স্কোর পেয়ে ২০২৩ সালে তালিকার সর্বনিম্নে অবস্থান করছে সোমালিয়া। ১৩ স্কোর পেয়ে নিম্নক্রম অনুযায়ী যৌথভাবে তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে দক্ষিণ সুদান, সিরিয়া ও ভেনিজুয়েলা এবং ১৬ স্কোর পেয়ে তৃতীয় সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে ইয়েমেন।

তিনি আরও বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় নেপাল ও পাকিস্তানের স্কোর যথাক্রমে ১ ও ২ পয়েন্ট উন্নতি হয়েছে এবং অবশিষ্ট পাঁচটি দেশের স্কোরই ১ থেকে ৪ পয়েন্ট অবনমন হয়েছে। এরমধ্যে আফগানিস্তানের স্কোর কমেছে ৪ পয়েন্ট, শ্রীলঙ্কার ২ পয়েন্ট এবং মালদ্বীপ, ভারত ও বাংলাদেশের স্কোর কমেছে ১ পয়েন্ট করে।

ঊর্ধ্বক্রম অনুযায়ী এ বছর দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শুধু পাকিস্তান ও নেপালের অবস্থানের যথাক্রমে ৭ ধাপ ও ২ ধাপ উন্নতি হয়েছে। অবশিষ্ট ৬টি দেশের অবস্থানের ১ থেকে ১৪ ধাপ পর্যন্ত অবনতি হয়েছে। এরমধ্যে শ্রীলঙ্কার ১৪ ধাপ, আফগানিস্তানের ১২ ধাপ, ভারত ও মালদ্বীপের ৮ ধাপ, বাংলাদেশের ২ ধাপ এবং ভুটানের অবস্থানের ১ ধাপ অবনমন হয়েছে।

দক্ষিণ এশিয়ায় একমাত্র ভুটান ছাড়া বাকি সাতটি দেশই সূচকের গড় স্কোর ৪৩-এর কম পয়েন্ট পেয়েছে। অর্থাৎ সার্বিকভাবে দক্ষিণ এশিয়ায় দুর্নীতির ব্যাপকতা ও গভীরতা উদ্বেগজনক।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন টিআইবির চেয়ারপারসন সুলতানা কামাল, টিআইবির উপদেষ্টা (নির্বাহী ব্যবস্থাপনা) অধ্যাপক সুমাইয়া খায়ের, পরিচালক (আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন) শেখ মনজুর-ই-আলম, সমন্বয়ক (আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন) মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১২তম। ২০২১ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৩তম। ২০২০ সালের পরিস্থিতি বিবেচনায়) এই তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১২তম। ২০১৯ সালে নিম্নক্রম অনুযায়ী বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৪তম। ২০১৮ সালে প্রকাশিত তালিকায় অবস্থান ছিল ১৭তম।

টিআইবির প্রতিবেদন অনুসারে, সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় ১৭ স্কোর নিয়ে চতুর্থ অবস্থানে গিনি, হাইতি, উত্তর কোরিয়া ও নিকারাগুয়া। পঞ্চম স্থানে ১৮ স্কোর নিয়ে  লিবিয়া ও তুর্কমেনিস্তান।

১৯৯৫ সাল থেকে বেসরকারি সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল প্রতি বছর এই সূচক প্রকাশ করে। ২০০১ সালে বাংলাদেশ প্রথম তালিকাভুক্ত হয়। তখন এ তালিকায় মোট ৯১টি দেশ স্থান পায়।