আন্তর্জাতিক আদালতের নির্দেশ মানছে না ইসরায়েল

নিজস্ব প্রতিবেদক
আন্তর্জাতিক জার্নাল আন্তর্জাতিক জার্নাল
প্রকাশিত: ২৮ জানুয়ারি ২০২৪, ০৯:২৩ AM

ফিলিস্তিনের গাজায় গণহত্যা ঠেকাতে পদক্ষেপ নিতে ইসলায়েলকে পদক্ষেপ নিতে আদেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে)। কিন্তু আইসিজের সেই নির্দেশের পরও বেসামরিক লোকজনের ওপর হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল।

শনিবার (২৭ জানুয়ারি) ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান একের পর এক বোমা ফেলেছে গাজার খান ইউনিস এলাকায়।

আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার করা গণহত্যা মামলার প্রেক্ষিতে গাজায় গণহত্যা ঠেকাতে শুক্রবার আদেশ দেন আইসিজে। তবে আদেশে গাজায় ইসরায়েলি অভিযান বন্ধের কথা বলা হয়নি। এরপরও গণহত্যা ঠেকাতে যেসব ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তার নৈতিক গুরুত্ব রয়েছে।

বিশ্লেষকরা আরও বলছেন, আইসিজের নির্দেশনাগুলো মানতে হলে গাজায় যুদ্ধবিরতিতে রাজি হতে হবে ইসরায়েলকে।

এদিকে আইসিজের আদেশের পরও গাজায় হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া আজকের হিসাব অনুযায়ী, ৭ অক্টোবর সংঘাত শুরুর পর থেকে ইসরায়েলের হামলায় গাজায় ২৬ হাজার ২৫৭ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ২৪ ঘণ্টায় নিহত হয়েছেন ১৭৪ জন। হতাহত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু।

শনিবার ইসরায়েল সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা চালায় দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে। বোমা ফেলে ও ট্যাংকের গোলা ছুড়ে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়। এ এলাকার আল-আমাল ও নাসের হাসপাতালের কাছে হামলা চালানো হয়েছে।

ইসরায়েলি হামলায় হতাহতের খবর পাওয়া গেছে দক্ষিণের রাফা এলাকা থেকেও। গাজার বাসিন্দা ৫৭ বছর বয়সি জয়নব খলিল বলছেন, আইসিজের আদেশ গুরুত্বপূর্ণ, তবে যথেষ্ট নয়। আমরা যুদ্ধবিরতি চাই।

এদিকে ইসরায়েলি বাহিনী শনিবার জানিয়েছে, খান ইউনিসে ১১ বন্দুকধারীকে হত্যা করেছে তারা।

গাজায় এই হত্যাযজ্ঞের পর নতুন করে ফিলিস্তিনিদের উপর মরার উপড় খড়ার ঘা হয়ে আসছে খাদ্য সহায়তা বন্ধ করা। চলমান ইসরায়েলি বর্বর হামলার মধ্যে দুর্ভিক্ষের কবলে পড়েছে গাজার ২২ লাখ মানুষ। এরই মাঝে ফিলিস্তিনিদের জন্য অনুদান বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে ছয় পশ্চিমা দেশ। জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ- এর কয়েক জন কর্মীর বিরুদ্ধে ইসরায়েল ৭ অক্টোবর হামলায় সম্পৃক্তার অভিযোগ তোলার পর এ ঘোষণা দিয়েছে পশ্চিমা দেশগুলো।

গতকাল শনিবার (২৭ জানুয়ারি) ছয় দেশের মধ্যে সর্বশেষ যুক্তরাজ্য ও ফিনল্যান্ড অনুদান বন্ধের ঘোষণা দেয়। এর আগে শুক্রবার ইতালি, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র অনুদান বন্ধের ঘোষণা দিয়েছিল।

শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভিযোগ করে, ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলার সঙ্গে ইউএনআরডব্লিউএর অন্তত ১২ জন কর্মীর বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, অভিযোগের যথাযথ তদন্ত না হলে ইউএনআরডব্লিউএ-এর তহবিলে যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক সহায়তা বরাদ্দ বন্ধ থাকবে।

শনিবার ইউএনআরডব্লিউএর কমিশনার জেনারেলফিলিপ লাজারিনি সাংবাদিকদের কাছে এই অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, সংস্থাটি অভিযুক্ত কর্মীদের চাকরিচ্যুত করেছে এবং এ বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে।

প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও) সেক্রেটারি-জেনারেল হুসেইন আল-শেখ পশ্চিমাদের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, এই সময়ে এবং ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ক্রমাগত আগ্রাসনের আলোকে, আন্তর্জাতিক সংস্থার সর্বাধিক সমর্থন প্রয়োজন। একে সমর্থন ও সহায়তা বন্ধ করা উচিত নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।