ইসরায়েলি আগ্রাসনে গাজায় বেড়েই চলেছে মৃত্যুর মিছিল; নিহত ছাড়াল ২৫ হাজার
কোন কিছুতেই থামছে না অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন। সেখানে প্রতিদিনেই বেড়ে চলেছে লাশের সারি। হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ২৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
গাজার হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৭৮ জন নিহত হয়েছেন। গাজায় ইসরায়েল-হামাসের মধ্যে যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই এটাই একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর ঘটনা।
সেখানে লড়াই থামার কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। এদিকে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের বিরোধিতায় কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। তিনি বারবার জোর দিয়ে বলেছেন, যুদ্ধ শেষ হলেও স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হবে না। তার এমন মন্তব্যের পরই গাজা এবং পশ্চিমতীরে নতুন করে হামলা বেড়ে গেছে। এদিকে হোয়াইট হাউজ বলছে, দ্বি-রাষ্ট্রিক সমাধানের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েল স্পষ্টভাবেই ভিন্ন চিন্তা করছে।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের সীমান্তে আকস্মিক হামলা চালায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এর পাল্টা জবাব হিসেবে গাজায় আক্রমণ চালায় ইসরায়েল। হামাসকে নির্মূলের অজুহাতে এখন পর্যন্ত গাজার বিভিন্ন স্থানে অভিযানের নামে হামলা চালিয়ে নিরীহ ফিলিস্তিনিদের হত্যা করছে ইসরায়েলি বাহিনী।
গাজার দক্ষিণাঞ্চলে হামলা জোরদার করেছে ইসরায়েল। সেখানে প্রতিদিনই বিমান হামলা ও স্থল অভিযান চালানো হচ্ছে। গাজায় এখন পর্যন্ত ২৫ হাজার ১০৫ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এছাড়া আহত হয়েছে ৬২ হাজারের অধিক মানুষ।
গাজায় ইসরায়েলের অব্যাহত বিমান হামলার জেরে খাবার, পানি, চিকিৎসাসামগ্রীসহ অন্যান্য জরুরি প্রয়োজনীয় সামগ্রীর তীব্র সংকটে থাকা গাজাবাসী এখন দুর্ভিক্ষ আর মহামারির হুমকির মুখে রয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা।
গতকাল রোববার (২১ জানুয়ারি) জরুরি মানবিক সহায়তা হিসেবে গাজায় ২৬০টি ট্রাক প্রবেশ করেছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া গত শুক্রবার সেখানে ২৮৮টি ট্রক জরুরি পণ্য নিয়ে প্রবেশ করে। তবে এসব সাহায্য সামগ্রী প্রয়োজনের তুলনায় নগন্য বলে জানানো হয়েছে।
অবরুদ্ধ এই উপত্যকায় তিন মাসের বেশি সময় ধরে স্থল অভিযান পরিচালনা করছে ইসরায়েল। বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালানো হচ্ছে। এই যুদ্ধে ইসরায়েলের নিয়মিত সেনা ছাড়াও রিজার্ভ সেনারা অংশ নিয়েছে। বাদ পড়েনি নারীরাও। সংবাদমাধ্যম এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজা যুদ্ধে ইসরায়েলি নারীরা বড় ভূমিকা পালন করছে।
ইসরায়েলের একটি ব্যাটালিয়নের কমান্ডার জানিয়েছেন, গাজায় যুদ্ধ করার জন্য নারীদের আমরা নিয়ে আসতে পেরেছি, যা অত্যন্ত গর্বের। তিনি বলেছেন, নারীরা পুরুষ সেনাদের মতোই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।
এই যুদ্ধের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে মধ্যপ্রাচ্যজুড়েও। হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটছে লেবানন সীমান্তে। হামলা হচ্ছে সিরিয়া ও ইরাকেও। তাছাড়া ফিলিস্তিনিদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা। লোহিত সাগরে ইসরায়েলগামী জাহাজ লক্ষ্য হামলা চালানো হচ্ছে। মার্কিন পদক্ষেপেও বন্ধ হচ্ছে না হুথিদের হামলা।
ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস আবারও ৭ অক্টোবরের হামলার পক্ষে অবস্থান নিয়ে বলেছে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের অবসান ঘটাতে হবে। তবে সংগঠনটি কিছু ভুল স্বীকার করে নিয়েছে। গাজার হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে ইসরায়েলের অব্যাহত আগ্রাসনে মৃতের সংখ্যা ২৫ হাজার ছাড়িয়েছে। গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চল এখন ইসরায়েলি হামলার অন্যতম লক্ষ্যবস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছে। খবর এএফপির।
ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর যে যুদ্ধ শুরু হয় সে সম্পর্কে প্রকাশিত এক খোলা প্রতিবেদনে সংগঠনটি বলেছে, তারা ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলের দখলদারিত্ব অবসানে ও ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তির জন্য বেশ কিছু ‘প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ’ নিয়েছে।
হামাসের ১৬ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে যে, ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর বিভিন্ন নিয়মের কারণে তাদের কিছু ভুল হয়েছে। ইসরায়েলি সামরিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়া ও সীমান্তে বিশৃঙ্খলার কারণে এসব ভুল হয়েছে।
তবে এ বিষয়ে এক প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ‘পরিপূর্ণ বিজয়ের’ শপথ নিয়ে বলেছেন তার সরকার গাজায় এখনও আটকে রাখা ইসরায়েলি বন্দিদের মুক্তির বিষয়ে হামাসের কোনো শর্তকে গ্রহণ করবে না।
যুক্তরাষ্ট্র, আরব দেশগুলো এবং অন্যান্য দেশের সরকার ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সংকট সমাধানের জোর তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে এই ধারণা বাতিল করে দিয়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, গাজার নিরাপত্তার ভার অবশ্যই ইসরায়েলের হাতে থাকবে। অন্যদিকে, হামাসের প্রকাশিত প্রতিবেদনে যুদ্ধপরবর্তী অবস্থার জন্য ইসরায়েলি দাবিকে বাতিল করে দেওয়া হয়েছে।
সূত্র: বিবিসি, আল জাজিরা