ইসরায়েলকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ঘোষণা করতে বলিভিয়া সরকারের প্রতি আহ্বান জানাল মোরালেস

নিজস্ব প্রতিবেদক
আন্তর্জাতিক জার্নাল আন্তর্জাতিক জার্নাল
প্রকাশিত: ১০ নভেম্বর ২০২৩, ১২:৪০ PM

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় বর্বর গণহত্যা চালানোর দায়ে ইসরায়েলকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ঘোষণার জন্য বলিভিয়া সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ইভো মোরালেস। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত বা আইসিসিতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের পরামর্শও দিয়েছেন তিনি।

মোরালেস বলেন, “বলিভিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে ২০০৯ সালে আমি গাজায় ইসরায়েলের হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে তেল আবিবের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছিলাম। কিন্তু ২০১৯ সালে জেনিন আনেজ আবার সম্পর্ক পুনর্বহাল করেন। সৌভাগ্যের কথা, বর্তমান প্রেসিডেন্ট লুইস আর্স সেই সম্পর্ক আবার ছিন্ন করেছেন। আমি বর্তমান প্রশাসনকে আহ্বান জানাবো তারা যেন ইসরায়েলকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ঘোষণা এবং গাজায় গণহত্যা চালানোর জন্য আইসিসিতে মামলা দায়ের করে।”

ইরানের স্প্যানিশ ভাষার টেলিভিশন চ্যানেল হিস্পান টিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন ইভো মোরালেস।

সাক্ষাৎকারে বলিভিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট আরো বলেন, ইসরায়েল ভয়ঙ্কর অপরাধযজ্ঞ চালাচ্ছে যা নিয়ে কোনো ব্যক্তি চোখ বন্ধ করে বসে থাকতে পারে না।

ইভো মোরালেস সুস্পষ্ট করে বলেন, “ইসরায়েল যে হস্তক্ষেপকামী শত্রুতামূলক সম্প্রসারণ এবং গণহত্যার নীতি অনুসরণ করছে তাতে অবশ্যই তাকে আন্তর্জাতিকভাবে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র বলে স্বীকৃতি দেওয়া উচিত। ইসরায়েল গাজার হাসপাতালে হামলা চালাচ্ছে এবং কয়েক দিনের হামলায় হাজার হাজার বেসামরিক মানুষ মারা গেছে। ইসরায়েল গাজায় যা করছে তা যুদ্ধাপরাধ ছাড়া আর কিছু নয়।

এর আগে গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার বোমা হামলাকে অমানবিক আখ্যা দিয়ে দেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানায় বেলজিয়াম। গত বুধবার (৮ নভেম্বর) বেলজিয়ামের উপপ্রধানমন্ত্রী পেত্রা দে সাতার এই আহ্বান জানান। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) শেয়ার করা এক টুইটে তিনি এই আহ্বান জানান।

এক্সে শেয়ার করা টুইটে পেত্রা দে সাতার বলেন, ‘ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের এখনই উপযুক্ত সময়। তাঁরা যে বোমাবাজি করছে, তা অমানবিক।’ তিনি আরও বলেন, ‘গাজায় যুদ্ধাপরাধের পাশাপাশি ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির জন্য আন্তর্জাতিক আহ্বানকেও উপেক্ষা করছে।’

এছাড়া, ইসরাইলি বাহিনী গাজায় ‘পরিকল্পিত গণহত্যা’ চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করে স্পেন। এজন্য ইসরাইলের ওপর বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানায় স্পেনের সামাজিক অধিকারবিষয়ক মন্ত্রী ইয়ন বেলারা।

ইয়ন বেলারা ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিশ্বনেতাদের দ্বিমুখী নীতির নিন্দা জানিয়ে বলেন, বিশ্বনেতারা ইউক্রেনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের নিন্দা জানালেও, ইসরাইলের বোমাবর্ষণের ব্যাপারে নীরবতা পালন করছে।

অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আইন লঙ্ঘন করার অপরাধে ইসরায়েলকে শাস্তির আওতায় আনার আহ্বান জানায় আফ্রিকা মহাদেশের অন্যতম সমৃদ্ধ দেশ দক্ষিণ আফ্রিকা। 

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বর্বরতার প্রতিবাদে তেল আবিব থেকে প্রিটোরিয়া নিজের কূটনৈতিক মিশন প্রত্যাহার করে নেওয়ার একদিন পর এ আহ্বান জানায় দেশটি।

দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী নালেদি প্যান্ডোর এ আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের হত্যা করা যুদ্ধাপরাধ এবং এই জঘন্য কর্মের দায়ে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুসহ ইসরায়েলের সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করতে হবে।

প্রসঙ্গত, ৭ অক্টোবর হামাস যোদ্ধারা সীমান্ত পেরিয়ে ইসরাইলে হামলা চালালে এক হাজার ৪০০ জনেরও বেশি লোক নিহত হয়। সেই সঙ্গে তারা প্রায় ২৪০ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যায়। এরপর ইসরাইল যুদ্ধ ঘোষণা করে। হামাসকে ধ্বংস করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ইসরাইল বিমান হামলা ও স্থল অভিযান চালিয়ে প্রতিশোধ নিচ্ছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, যুদ্ধে এখন পর্যন্ত প্রায় ১১ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক মানুষ। এদের মধ্যে প্রায় ৫ হাজার জনই শিশু।

সূত্র: প্রেসটিভি, আল জাজিরা