গাজা ধ্বংসে নতুন কৌশল নিয়েছে ইসরায়েল
-1191020.jpg?v=1.1)
যুদ্ধবিরতি চুক্তি থেকে সরে এসে নতুন কৌশল ও পদ্ধতিতে গাজায় ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। দখলদার সেনারা গাজা উপত্যকায় হাজার হাজার ভবন মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিচ্ছে। গত কয়েক সপ্তাহে উপত্যকার বিভিন্ন শহর ও শহরতলির বিস্তীর্ণ অঞ্চল একেবারে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে—যেখানে একসময় বিপুলসংখ্যক মানুষের বসবাস ছিল।
স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ইসরায়েলি সামরিক কমান্ডের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে গাজার একাধিক এলাকায় ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে।
শুক্রবার (১৮ জুলাই) বিবিসির এক বিশেষ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে।
এতে বলা হয়, গাজায় যেসব ভবন ধ্বংস করা হচ্ছে, তার একটি বড় অংশই পরিকল্পিত ধ্বংসযজ্ঞ। এর মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত ভবন তো আছেই, সেই সঙ্গে অক্ষত ভবনও রয়েছে।
ফুটেজ যাচাই করে দেখা যায়, ইসরাইলের বাহিনী টাওয়ার ব্লক, স্কুল ও অন্যান্য অবকাঠামোতে নিয়ন্ত্রিত ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে।
এটাকে সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। একাধিক আইন বিশেষজ্ঞ বিবিসি ভেরিফাইকে বলেন, জেনেভা কনভেনশনের অধীনে ইসরাইল সম্ভবত যুদ্ধাপরাধ করেছে। ওই নীতিমালা দখলদার শক্তিকে অবকাঠামো ধ্বংসের অনুমোদন দেয় না। তবে ইসরাইল প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) এক মুখপাত্র বলেন, তারা আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে কাজ করছেন। হামাস বেসামরিক এলাকায় ‘সামরিক জিনিসপত্র’ লুকিয়ে রেখেছে।
চলতি জুলাইয়ে ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাৎজ গাজার রাফাহ শহরের ধ্বংসাবশেষে একটি ‘মানবিক শহর’ প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনার রূপরেখা তুলে ধরেন। কথিত ওই মানবিক শহরে প্রাথমিকভাবে ছয় লাখ ফিলিস্তিনিকে আটকে রাখা হবে। বিশ্বব্যাপী এ পরিকল্পনার নিন্দা করা হয়েছে।
ইসরাইলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এহুদ ওলমার্ট বিবিসিকে বলেন, এটি কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের মতোই হবে।
মিসরের সীমান্তবর্তী রাফাহ শহরের অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন এলাকা ছিল তেল আল-সুলতান। এর ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় গাজার একমাত্র বিশেষায়িত প্রসূতি হাসপাতালের অবস্থান। ওই এলাকায় ছিল অনাথ শিশুদের যত্ন নেওয়ার একটি জায়গাও।
স্যাটেলাইট ছবিতে দেখা যায়, ইসরাইলের বোমা হামলা ও কামানের গোলায় ইতোমধ্যে এলাকার বেশির ভাগ অংশ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত কয়েক দিনে ধ্বংসযজ্ঞ আরও বেড়ে যায়। নির্বিচারে ভবনগুলোতে গোলাবর্ষণ শুরু হয়। এক পর্যায়ে পুরো ব্লকটিকে মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া হয়।
বর্তমানে হাসপাতালসহ হাতেগোনা কয়েকটি ভবন টিকে আছে।
রাফাহর তেল আল-সুলতানের পার্শ্ববর্তী সৌদি পাড়ারও একই অবস্থা। সেখানে চলছে ব্যাপক ভাঙন। ওই এলাকায় একসময় শহরের বৃহত্তম মসজিদ ও বেশ কয়েকটি স্কুল ছিল। একটি যাচাই করা ভিডিও ক্লিপে রাফাহর একটি সড়ক ধরে ট্যাঙ্ক চলাচল করতে দেখা গেছে। পাশেই ভেকু দিয়ে ভবনকে গুঁড়িয়ে মাটিতে মিশিয়ে দেওয়ার কাজ চলছিল। উপত্যকার অন্যান্য অংশেও ইসরায়েলের ধ্বংসযজ্ঞ দৃশ্যমান।
কৃষি শহর খুজা’আ ইসরাইলের সীমান্ত থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে। যুদ্ধের আগে এ শহরের জনসংখ্যা ছিল ১১ হাজার। সেখানে ছিল উর্বর কৃষিজমি। টমেটো, গম ও জলপাইয়ের মতো ফসলের জন্য পরিচিত ছিল এলাকাটি। আইডিএফ জানিয়েছে, তারা খুজা’আর এক হাজার ২০০টি ভবন গুঁড়িয়ে দিয়েছে।
পার্শ্ববর্তী শহর আবাসান আল-কাবিরাতের গল্প একই রকম। যুদ্ধের আগে সেখানে প্রায় ২৭ হাজার মানুষ থাকতেন। গত ৩১ মে ও ৮ জুলাই তোলা ছবিতে তুলনা করে দেখা গেছে, মাত্র ৩৮ দিনে বিস্তীর্ণ এলাকা মাটিতে মিশে গেছে।
বিবিসি ভেরিফাইয়ের সঙ্গে কথা বলা বেশ কয়েকজন মানবাধিকার আইনজীবী বলেছেন, ইসরাইলের এ অভিযান যুদ্ধাপরাধের পর্যায়ে পড়তে পারে। জেরুজালেমের ডায়াকোনিয়া আন্তর্জাতিক মানবিক আইন কেন্দ্রের জ্যেষ্ঠ আইন বিশেষজ্ঞ আইটান ডায়মন্ড বলেন, আন্তর্জাতিক মানবিক আইন সশস্ত্র সংঘাতের সময় বেসামরিক সম্পত্তির এ ধরনের নিয়ন্ত্রিত ধ্বংস নিষিদ্ধ করেছে।