ইসরায়েলি হামলায় ইরানের কারাবন্দি ৪ মানবাধিকারকর্মীর খোলা চিঠি

ইরানে কারাবন্দি চার নারী অধিকারকর্মী সম্প্রতি ইসরায়েলের সামরিক হামলার কড়া সমালোচনা করে একটি খোলা চিঠি প্রকাশ করেছেন। একইসঙ্গে তারা সতর্ক করে বলেছেন, বিদেশি শক্তির সহায়তায় সরকার পরিবর্তনের চেষ্টা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
তেহরানের এভিন কারাগার থেকে পাঠানো এই চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন গোলরুখ ইব্রাহিমি ইরায়ী, ভারিশেহ মোরাদি, সাকিনেহ পারভানে এবং রেহানেহ আনসারিনেজাদ। কুর্দি-সমর্থিত সংবাদমাধ্যম ফিরাত নিউজ এজেন্সি এই চিঠিটি প্রকাশ করে।
চিঠিতে তারা অভিযোগ করেন, গাজায় ইসরাইল ‘গণহত্যা’ চালাচ্ছে এবং তাদের লক্ষ্য একটি ‘দুর্বল ও বাধ্যতামূলক’ মধ্যপ্রাচ্য গড়ে তোলা। তারা লেখেন, ‘এই দেশের একনায়কতান্ত্রিক শাসন থেকে আমাদের মুক্তি সম্ভব হবে জনগণের সংগ্রামের মাধ্যমে এবং সামাজিক শক্তিকে কাজে লাগিয়ে। এজন্য আমরা না কোনো বিদেশি শক্তির ওপর ভরসা করবো বা তাদের ওপর আশা রাখবো।’
তারা আরও বলেন, ‘যেসব শক্তি যুগে যুগে শোষণ ও ঔপনিবেশিকতার মাধ্যমে, যুদ্ধ লাগিয়ে ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য এই অঞ্চলের দেশগুলোর ওপর ধ্বংস নামিয়ে এনেছে—তারা আমাদের জন্য মুক্তির পথ নয়, বরং নতুন ধ্বংস ও শোষণের কারণ হবে।’
চার অধিকারকর্মীর মধ্যে ভারিশেহ মোরাদি কুর্দি নারী সংগঠন কেজেএআর-এর সদস্য এবং তিনি সিরিয়ায় আইএসবিরোধী যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। ২০২২ সালে মাহশা আমিনির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ছড়িয়ে পড়া ‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা’ আন্দোলনের সমর্থক ছিলেন তিনি। বর্তমানে তিনি ‘সশস্ত্র বিদ্রোহে’ জড়িত থাকার অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত।
বাকি তিনজন চার থেকে ছয় বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছেন। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে শ্রমিক ইউনিয়ন গঠন ও কুর্দি অধিকারের পক্ষে আন্দোলন।
চিঠিতে তারা ইসরাইলের হামলার পক্ষে অবস্থান নেওয়া ব্যক্তিদের ‘দেশদ্রোহী’ বলে অভিহিত করেছেন। মূলত তারা ইঙ্গিত করেন, ইরানের প্রাক্তন শাসক শাহের পুত্র রেজা পাহলভির মতো বিরোধীদের দিকে, যিনি এই হামলাকে ‘সুযোগ’ হিসেবে দেখছেন।
চিঠিতে লেখা হয়, ‘ইরান, মধ্যপ্রাচ্য এবং জনগণের স্বাধীনতার দীর্ঘ সংগ্রামের সঙ্গে যারা বিশ্বাসঘাতকতা করছেন, তারা জেনে রাখুন—এই বিশ্বাসঘাতকতা ইরানি জনগণের স্মৃতিতে এবং ইতিহাসের পাতায় চিরদিন লিপিবদ্ধ থাকবে।’
তারা আরও বলেন, ‘ভবিষ্যৎ প্রজন্ম লজ্জার সঙ্গে স্মরণ করবে সেইসব লোককে যারা নিরস্ত্র মানুষের লাশের ওপর দাঁড়িয়ে বিজয় উদযাপন করেন।’
সূত্র: মিডল ইস্ট আই