আরও ভয়ংকর ইসরায়েল; জিম্মিদের মুক্তি দিলেও বন্ধ করবে না হামলা

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় হামাস উৎখাত আর তাদের কবল থেকে জিম্মি উদ্ধারের নামে নির্বিচারে গণহত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে দখলদার ইসরায়েল। প্রতিদিনই তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা। ফলে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে লাশের মিছিল। নিরাপদ বলে কোনো স্থান বাকি নেই গাজাবাসীর জন্য। একদিকে আকাশ ও স্থল অভিযান, অন্যদিকে ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ; গাজা যেন সাক্ষাৎ নরক হয়ে উঠেছে তার বাসিন্দাদের জন্য। 

এরই মধ্যে গাজায় চলমান ইসরায়েলের এই আগ্রাসন বন্ধ হবে না স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তার ভাষ্য, হামাস এখন তাদের জিম্মিদের মুক্ত করে দিলেও গাজায় হামলা বন্ধ হবে না। বরং, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ ভূখণ্ডটিতে পূর্ণশক্তি নিয়ে অভিযান চালাবে ইসরায়েলি বাহিনী। 

স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (১৩ মে) রাতে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, গাজায় চলমান যুদ্ধ পুরোপুরি বন্ধ হবে না, তবে একটি অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির কথা বিবেচনা করা যেতে পারে।

মঙ্গলবার আহত সেনাদের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় নেতানিয়াহু বলেন, হামাসকে নির্মূল করা এবং আমাদের সব জিম্মিকে মুক্ত করা—এই দুই কাজ একসঙ্গে চলবে। হামাস যদি বলে আমরা আরও ১০ জন মুক্তি দিতে চাই, তাও আমরা যুদ্ধ বন্ধ করব না।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েলের বরাতে জানা গেছে, নেতানিয়াহু তার জোটসঙ্গীদের বলেছেন, যদি হামাস অস্ত্র ত্যাগ না করে, তবে ইসরায়েল কেবল অস্থায়ী যুদ্ধবিরতিতেই সম্মত হবে, তাও কিছু বন্দি মুক্তির বিনিময়ে।

একইসঙ্গে তিনি বলেন, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে আমরা গাজায় পূর্ণ শক্তি নিয়ে অভিযান চালাব। আমাদের সেনারা ইতোমধ্যে সেখানে মোতায়েন আছে।

এর আগে, সোমবার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর জানায়, ইসরায়েলের পক্ষ থেকে আলোচক দলকে কাতারে পাঠানো হয়েছে সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময় চুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপসাগরীয় দেশগুলোতে সফরের সময় ওই প্রতিনিধি দল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দোহায় অবস্থান করবে বলে জানা গেছে।

ওইদিন ইসরায়েলি-আমেরিকান বন্দি ইদান আলেক্সান্ডারকে মুক্তি দেয় হামাস। গোষ্ঠীটি জানায়, ওয়াশিংটনের সঙ্গে যোগাযোগের ভিত্তিতে এই মুক্তি দেওয়া হয়েছে, যা চলমান যুদ্ধবিরতির প্রচেষ্টার অংশ।

এদিকে, নেতানিয়াহুর ঘোষণার পরপরই ইসরায়েলের হামলায় সবশেষ আরও ৮১ জন ফিলিস্তিনির প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে উত্তর গাজায় মধ্যরাতের পর থেকে প্রাণ হারিয়েছেন কমপক্ষে ৫১ জন। আর দক্ষিণ গাজায় হাসপাতালে চালানো হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন আরও ৩০ জন। মূলত, হাসপাতালে হামলার কয়েক ঘণ্টা পরই উত্তর গাজায় ওই হামলা চালায় ইসরায়েল। বুধবার (১৪ মে) এ তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। 

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের গণহত্যামূলক যুদ্ধে নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা বেড়ে কমপক্ষে ৫২ হাজার ৯৮৯ জনে পৌঁছেছে। এছাড়া এ সময়ের মধ্যে আহত হয়েছেন আরও ১ লাখ ১৯ হাজার ৭২১ জন।