যুদ্ধবিরতি হলেও সিন্ধু চুক্তি স্থগিত সিদ্ধানে অনড় ভারত

জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলাকে কেন্দ্র করে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উদ্ভূত যুদ্ধাবস্থায় মধ্যস্থতা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। উভয় দেশই একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। তবে, সিন্ধু পানিচুক্তিসহ কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এখনো কোনো অগ্রগতি হয়নি। ফলে, ভারত-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এখনও কার্যত স্থবির। শিগগিরই দুই দেশ এসব বিষয় নিয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনায় বসবে বলে জানা গেছে।
তবে, উদ্ভূত উত্তেজনার শুরুতে সিন্ধুর পানিচুক্তি স্থগিতের ব্যাপারে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ভারত, তা থেকে সরে আসার কোনও পরিকল্পনা নেই দেশটির। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্ততায় যুদ্ধবিরতি আলোচনা চলাকালেই মিলেছে এমন ইঙ্গিত। ফলে, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও পেহেলগাম হামলার জেরে দুই দেশের মধ্যে যে কূটনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে, তার সমাধান সহজে হবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। খবর রয়টার্সের।
ব্রিটিশ বার্তাসংস্থাটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, শনিবার (১০ মে) ভারত ও পাকিস্তান সামরিক দপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তারা এক আলোচনায় সমুদ্র, আকাশ ও স্থলপথে সব ধরনের সামরিক তৎপরতা বন্ধে সম্মত হলেও ৬৫ বছর আগের সিন্ধু পানিচুক্তি পুনর্বহাল হচ্ছে না বলে স্পষ্ট করা হয়েছে।
মূলত, ১৯৬০ সালে বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় সিন্ধু নদী ও এর শাখানদীগুলোর (সিন্ধু, চন্দ্রভাগা, শতদ্রু, ঝিলাম, ইরাবতী ও বিপাশা) পানিবণ্টন নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সিন্ধু চুক্তি হয়। এই চুক্তির সুবিধাভোগী ছিল পাকিস্তানের প্রায় কয়েক কোটি মানুষ। কিন্তু, পেহেলগাম হামলার জেরে ঐতিহাসিক ওই চুক্তি স্থগিত করেছে ভারত। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এর ফলে পাকিস্তানে পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাবে, যা দেশটির কোটি কোটি মানুষের জীবনে সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে।
চুক্তি স্থগিতের ফলে ইতোমধ্যে চেনাব নদীর পাকিস্তান অংশ শুকিয়ে গেছে। পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গেল রোববার (৪ মে) চেনাবের পানিপ্রবাহ ছিল ৩৫ হাজার কিউসেক। কিন্তু, সোমবার (৫ মে) সকালে তা কমে মাত্র ৩ হাজার ১০০ কিউসেক হয়ে গেছে।
পাঞ্জাব সেচ বিভাগের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেছেন, রোববার ভারতীয় কর্তৃপক্ষ একতরফাভাবে চেনাব নদী থেকে পানি প্রত্যাহার শুরু করে। এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর তারা ভাটির দিকে (পাকিস্তান অংশ) প্রায় পুরো চেনাব নদীর প্রবাহ বন্ধ করে দিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বর্তমানে ভারত আমাদের পানি ব্যবহার করছে। তারা তাদের বাঁধ ও জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো ভরাট করছে, যা চেনাব অববাহিকায় অবস্থিত।
তিনি আরও বলেন, সিন্ধু পানিচুক্তি বাতিল একটি গুরুতর লঙ্ঘন। তারা এমন কাজ করতে পারে না।