পাকিস্তান ও বাংলাদেশ সীমান্তে ভারতের নতুন পরিকল্পনা

এবার পাকিস্তান ও বাংলাদেশ সীমান্ত নিয়ে নতুন পরিকল্পনা করেছে ভারত। এই দুই দেশের সীমান্তে নজরদারি এবং নিরাপত্তা আরও জোরদার করতে বিএসএফের জন্য ১৬টি নতুন ব্যাটালিয়ন গঠনের চূড়ান্ত অনুমোদনের পথে রয়েছে ভারত সরকার। এছাড়া, পূর্ব ও পশ্চিম সীমান্তে দুটি ‘ফরোয়ার্ড হেডকোয়ার্টার’ বা ফিল্ড কমান্ড ঘাঁটি স্থাপনেরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সরকারি সূত্রের বরাতে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় বার্তা সংস্থা পিটিআই।

এতে বলা হয়েছে, 'প্রতিটি ব্যাটালিয়নে এক হাজারের বেশি সেনা নিয়ে গঠিত এই নতুন ইউনিটগুলোতে মোট ১৭ হাজার সদস্য যুক্ত হবেন। বর্তমানে বিএসএফের ব্যাটালিয়নের সংখ্যা ১৯৩। নতুন ইউনিটগুলো গঠিত হলে মোট সদস্য সংখ্যা আরও বাড়বে। এই পরিকল্পনাটি এরইমধ্যে নীতিগত অনুমোদন পেয়েছে। এখন শুধু কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়সহ কিছু চূড়ান্ত প্রশাসনিক অনুমোদনের অপেক্ষা। অনুমোদন পেলে আগামী পাঁচ থেকে ছয় বছরের মধ্যেই ধাপে ধাপে এই ইউনিটগুলো গঠন করা হবে।'

নতুন ফরোয়ার্ড হেডকোয়ার্টারগুলোর মধ্যে একটি স্থাপন করা হবে জম্মুতে, যার উদ্দেশ্য বিশেষ করে জম্মু ও পাঞ্জাব সীমান্তে ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার করা। অন্যটি গড়ে তোলা হবে মিজোরামে, যা ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে নজরদারি ও গোয়েন্দা কার্যক্রম আরও দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনায় সহায়তা করবে। এই দুই হেডকোয়ার্টার সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে বাহিনীর কর্মকৌশল, সমন্বয় এবং জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত প্রতিক্রিয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

বিশ্লেষকদের মতে, 'শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ সীমান্তে এবং কাশ্মীরের পেহেলগামে সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডের পর পাকিস্তান সীমান্তে নিরাপত্তা পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠেছে। এ প্রেক্ষাপটেই বিএসএফের সক্ষমতা বাড়াতে কেন্দ্রীয় সরকার নতুন এই পরিকল্পনায় এগোচ্ছে।'

বর্তমানে বিএসএফের পূর্ব ফ্রন্টিয়ারে আসামভিত্তিক মিজোরাম-কাছার হেডকোয়ার্টারের অধীনে শিলচর, আইজল ও মণিপুরে তিনটি সেক্টর রয়েছে। অন্যদিকে, পশ্চিম ফ্রন্টিয়ারে জম্মু সীমান্তে রাজৌরি, সুন্দরবনি, জম্মু ও ইন্দ্রেশ্বর নগরে চারটি সেক্টরের দায়িত্বে রয়েছেন ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল (ডিআইজি) পদমর্যাদার কর্মকর্তারা। নতুন হেডকোয়ার্টার স্থাপনের ফলে এই সেক্টরগুলোতে সমন্বয় ও কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এছাড়া বিএসএফ ইতোমধ্যে নতুন পুরুষ ও নারী সদস্য নিয়োগের প্রস্তুতি নিচ্ছে। নিয়োগ সম্পন্ন হওয়ার পর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নতুন ইউনিটগুলো কার্যক্রম শুরু করবে।

উল্লেখ্য, বিএসএফ বর্তমানে প্রায় ২ লাখ ৭০ হাজার সদস্য নিয়ে গঠিত একটি বৃহৎ বাহিনী, যারা মোট ৬ হাজার ৭২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রক্ষা করে। এর মধ্যে ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত ২ হাজার ২৯০ কিলোমিটার এবং ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত ৪ হাজার ৯৭ কিলোমিটার দীর্ঘ। তবে এখনো প্রায় ১ হাজার ৪৭ কিলোমিটার সীমান্তে কোনো সুরক্ষাবেষ্টনী নেই। এগুলো মূলত নদীবাহিত অঞ্চল ও দুর্গম বনাঞ্চল দিয়ে গিয়েছে। এই বিশাল সীমান্তজুড়ে বর্তমানে ১ হাজার ৭৬০টি বিএসএফ চৌকি রয়েছে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, সীমান্ত এলাকার দ্রুত পরিবর্তনশীল ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং প্রাকৃতিক প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলায় নতুন ইউনিট ও ফরোয়ার্ড হেডকোয়ার্টার স্থাপন বিএসএফের কৌশলগত সক্ষমতা ও প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি আরও জোরদার করবে।