কাশ্মিরে পর্যটকদের ওপর হামলা; নিহত ২০

নিজস্ব প্রতিবেদক
আন্তর্জাতিক জার্নাল আন্তর্জাতিক জার্নাল
প্রকাশিত: ২২ এপ্রিল ২০২৫, ১১:০১ PM

ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মিরে পর্যটকদের ওপর ভয়াবহ হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে কমপক্ষে ২০ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও অনেকে।

আজ মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) সেখানকার অনন্তনাগ বিভাগের পাহালগামে এ হামলা হয় বলে জানিয়েছে স্থানীয় সূত্র।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, ‘যেখানে হামলা হয়েছে সেটি একটি বিস্তৃত তৃণভূমি। ওই স্থানটিতে শুধুমাত্র ঘোড়া অথবা পায়ে হেটে যাওয়া যায়। মঙ্গলবার সকালে সেখানে পর্যটকদের একটি দল গিয়েছিল। ওই সময় তাদের ওপর হামলা হয়।’

এদিকে জম্মু-কাশ্মিরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আব্দুল্লাহ জানিয়েছেন, নিহতের সংখ্যা এখনো নিরূপণ করা হচ্ছে। তিনি বলেছেন, “বেসামরিকদের ওপর এখন পর্যন্ত আমরা যেসব হামলা দেখেছি সেগুলোর তুলনায় এটি অনেক বড়।”

এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্ট দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেখানে তিনি বলেন, “আমি পহেলগাম, জম্মু ও কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। যারা তাদের প্রিয়জনদের হারিয়েছেন, তাদের প্রতি সমবেদনা জানাই। আমি প্রার্থনা করি যে আহতরা শীঘ্রই সুস্থ হয়ে উঠুন। যারা প্রভাবিত হয়েছে, তাদের জন্য সকল প্রকার সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন, “এই নৃশংস ঘটনার পেছনে যারা রয়েছেন, তাদের বিচার করা হবে...তারা ক্ষমা পাবে না! তাদের পৈশাচিক উদ্দেশ্য কখনই সফল হবে না। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আমাদের দৃঢ় সংকল্প অটুট এবং এটি আরও শক্তিশালী হবে।”

এছাড়াও নরেন্দ্র মোদি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন এবং তাকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। এরপর অমিত শাহ ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের রাজধানী শ্রীনগরের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। সেখানে তিনি একটি জরুরি বৈঠকে বসবেন।

ভারতের বার্তাসংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, ‘হামলাস্থল ছিল পাহালগামের বৈসারান তৃণভূমিতে। সেখানে একটি রিসোর্টের কাছে হামলার পর অনেকের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা গেছে।’

পিটিআই আরও জানিয়েছে, ‘ভারী অস্ত্রেসস্ত্রে সজ্জিত অস্ত্রধারীরা পাহাড়ের ওপরের তৃণভূমির গাছপালা আড়াল থেকে বেরিয়ে আসে। তারা ৪০ জনের একটি পর্যটক দলকে ঘিরে ফেলে। এরপর এলোপাতাড়ি গুলি শুরু করে।’

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ‘অস্ত্রধারীরা যখন গুলি চালানো শুরু করে, তখন স্থানীয়রা, যারা পর্যটকদের কাছে মালামাল বিক্রি করেন, তারা নিরাপদস্থানে সরে যান। এতে করে শুধুমাত্র পর্যটকরা গোলাগুলির মাঝে পড়েন। তখন তাদের ওপর নির্বিচার গুলি ছোড়া হয়।’

এক নারী টেলিফোনে পিটিআইকে বলেছেন, “আমার স্বামীর মাথায় গুলি লেগেছে। এছাড়া আরও সাতজন আহত হয়েছেন।” তিনি সাংবাদিকের কাছে অনুরোধ করে বলেন, “ভাই, দয়া করে আমার স্বামীকে বাঁচান।”

জনপ্রিয় ওই জায়গাটিতে যেহেতু শুধুমাত্র পায়ে হেঁটে বা ঘোড়ায় চড়ে যাওয়া সম্ভব, তাই আহতদের উদ্ধার করতে ঘটনাস্থলে হেলিকপ্টার পাঠানোর অনুরোধ জানিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।

নিহতদের মধ্যে কর্ণাটকের শিভমগ্গার এক ব্যবসায়ী রয়েছেন। নিহত ব্যক্তির পরিবার জানিয়েছে, তার নাম মুঞ্জুনাথ রাও (৪৭)। তিনি স্ত্রী পল্লবী ও ছেলে অভিজয়কে নিয়ে জম্মু-কাশ্মিরে ঘুরতে গিয়েছিলেন।

স্ত্রী পল্লবী ফোনে কর্ণাটকের স্থানীয় একটি সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, “আমাদের চোখের সামনে আমার স্বামীকে সন্ত্রাসীরা হত্যা করেছে। আমি তাদের আমাকেও হত্যা করতে বলেছিলাম। কিন্তু তারা আমাকে জানায়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে বার্তা পৌঁছে দেওয়ার জন্য আমাকে বাঁচিয়ে রাখা হবে।”

সূত্র: এনডিটিভি, পিটিআই