চলতি বছর বাংলাদেশের জিডিপি কমে দাঁড়াবে ৪.১ শতাংশে
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৪.১ শতাংশে নেমে আসবে বলে ধারণা করেছে বিশ্বব্যাংক।
শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের ‘গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টাস’ প্রতিবেদনে নতুন এই পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে অর্থনৈতিক কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমে গেছে। নীতি অনিশ্চয়তা এবং এই পরিস্থিতির কারণে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস হ্রাস করা হয়েছে।
বিশ্বব্যাংক আরও জানায়, দেশের জ্বালানি ঘাটতি, সরবরাহ সংক্রান্ত সীমাবদ্ধতা এবং আমদানির ওপর বিধিনিষেধ শিল্প খাতকে দুর্বল করেছে। এছাড়া উচ্চ মূল্যস্ফীতি মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমিয়ে সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি মন্থর করেছে। যদিও দক্ষিণ এশিয়ার বেশিরভাগ দেশে মূল্যস্ফীতি কমেছে, বাংলাদেশে তা এখনও উচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য মুদ্রানীতি আরও কঠোর করা হয়েছে, তবে চলতি বছরেও মূল্যস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি থাকতে পারে।
গত বছর দক্ষিণ এশিয়ার কিছু দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি পেলেও বাংলাদেশ ও মালদ্বীপে তা কমেছে, যা মুদ্রাবাজারে চাপের ফলস্বরূপ।
বিশ্বব্যাংক আরও উল্লেখ করেছে, বাংলাদেশের প্রধান বাণিজ্য অংশীদার যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং অভ্যন্তরীণ চাহিদা কমে গেলে বাংলাদেশের রপ্তানিতে প্রভাব পড়বে। বর্তমানে বাংলাদেশের মোট পণ্য রপ্তানির প্রায় অর্ধেকই হয় ইউরোপে এবং যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানি সবচেয়ে বেশি হয়।
আগামী মাসে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। আইএমএফ বলেছে, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৩.৮ শতাংশে নেমে আসতে পারে, যা পূর্বে ছিল ৪.৫ শতাংশ। এদিকে, সরকারও চলতি অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৫.২৫ শতাংশ করেছে, যা আগে ছিল ৬.৮ শতাংশ।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের কারণে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কিছুটা কমানো হয়েছে, কারণ অন্যান্য দেশগুলোর পূর্বাভাস বাড়ানো হলেও শুধু বাংলাদেশের জন্য এটি কমানো হয়েছে। বাংলাদেশে নীতি অনিশ্চয়তা এর প্রধান কারণ।
বিশ্বব্যাংক আরও বলেছে, রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়ায় বাংলাদেশের বিনিয়োগ এবং শিল্প কার্যক্রম নিকট ভবিষ্যতে মন্থর থাকতে পারে। তবে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরলে, আর্থিক খাতের সংস্কার সফল হলে, ব্যবসা পরিবেশ উন্নত হলে এবং বাণিজ্য বাড়লে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫.৪ শতাংশে পৌঁছাতে পারে। মূল্যস্ফীতি কমে গেলে বেসরকারি ভোগ্যব্যয়ও বাড়তে পারে, যা এই প্রবৃদ্ধিকে সহায়তা করবে।
বিশ্বব্যাংক আশঙ্কা করছে, আগামী অর্থবছরে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার কিছু দেশে মাথাপিছু আয়ের প্রবৃদ্ধি দুর্বল থাকবে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে বেকারত্ব এখনও উচ্চ রয়েছে এবং বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও ভুটানসহ অনেক দেশে এটি বৃদ্ধি পেয়েছে।