খুলেছে দেশের সব পোশাক কারখানা; কাজে ফিরছেন শ্রমিকরা
গত কয়েকদিন ধরেই পোশাক শিল্প খাতে চলছিলো অস্থিরতা। গত দুদিন ধরে আবার ১৮টি দাবি নিয়ে আন্দোলন করে শ্রমিকরা। তবে আলোচনা শেষে শ্রমিকদের সব দাবি মেনে নেয় মালিকপক্ষ। ফলে আজ বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) থেকে খুলছে দেশের সব কারখানা। শান্তিপূর্ণ ভাবে সকাল থেকে দলে দলে কারখানায় যোগ দিয়েছেন শ্রমিকেরা। এতে সাভার, গাজীপুরে বেশিরভাগ তৈরি পোশাক কারখানায় চালু রয়েছে উৎপাদন কার্যক্রম। কারখানা এলাকায় নিরাপত্তায় পুলিশ মোতায়েন ছাড়াও রয়েছে সেনাবাহিনী ও বিজিবির টহল।
কর্মস্থলে যোগ দিয়ে শ্রমিকেরা বলছেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় তারা বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলনে নেমেছিলেন। এখন দাবি মানায় খুশি তারা। আশা করছেন, শান্তিপূর্ণভাবে এখন সবাই কাজ করতে পারবেন।
গতকাল মঙ্গলবার দুপক্ষের বৈঠক হয় শ্রম মন্ত্রণালয়ে। এরপরও অস্থিরতা তৈরি হলে কঠোর ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শ্রম উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর, আগস্টের শেষ দিকে সাভার, আশুলিয়া ও গাজীপুরের কারখানায় শ্রমিক বিক্ষোভ শুরু হয়। ন্যূনতম মজুরি পুনর্নির্ধারণ, শ্রম আইন সংশোধনসহ ১৮ দফা দাবি তাদের। তবে এই বিক্ষোভে বিদেশি ইন্ধনের কথাই বারবার বলে এসেছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি শ্রমিকদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাসও ছিল।
মঙ্গলবার শ্রম মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে গার্মেন্ট মালিক-শ্রমিকদের বৈঠক হয়। পরে এ নিয়ে কথা বলেন নেতারা।
শ্রমিক নেতা কুতুব উদ্দিন আহমেদ বলেন, সুযোগ পেলেই যেন অস্থিরতা তৈরি না করা হয়। যে যার কাজে ফিরে যাওয়ার আহ্বান।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, কষ্ট হলেও সব কিছু বিবেচনা করে দাবি মেনে নিতে সম্মত হয়েছেন মালিকেরা। শ্রমিকদের কোনো দাবি থাকলে, রাস্তায় না নেমে মালিকদের সঙ্গে আলোচনার আহ্বান।
শ্রম সচিব এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান বলেন, ‘কারখানায় স্থিতিশীল পরিবেশ ফেরাতে ১৮ দফা মেনে নিয়েছেন মালিকেরা। বিগত সরকারের সময়ে শ্রমিকদের দমিয়ে রাখা হয়েছিল। বুধবার থেকে সব পোশাক কারখানা খুলছে। দৈনিক হাজিরা বিলের সাথে আরও ২২৫ টাকা করে পাবেন শ্রমিকেরা। ন্যূনতম মজুরি কার্যকারিতা নিয়ে বিজিএমইএ কাজ করবে। রেশনিং হিসাবে শ্রমঘন এলাকায় ন্যায্য দামে নিত্যপণ্য বিক্রি হবে। স্থায়ী রেশনিংয়ের ব্যবস্থা হবে। নিম্নতম মজুরিকে কেন্দ্র করে ২০২৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত শ্রমিকদের বিরুদ্ধে মামলাগুলো প্রত্যাহার হবে। হতাহতদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।’
এই সিদ্ধান্তের পরও বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করা হলে, সহ্য করা হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শ্রম উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে সমস্যা সমাধান হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য সমস্যাগুলোও সমাধান করা হবে। বুধবার থেকে কাজে ফিরতে শ্রমিকদের প্রতি আহ্বান জানাই। মালিক-শ্রমিক কোনো পক্ষ থেকে অসহযোগিতা থাকলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
শুধু দাবি মেনে নেওয়া নয়, ন্যূনতম মজুরিকে কেন্দ্র করে শ্রমিকদের বিরুদ্ধে সব মামলা প্রত্যাহার করার কথাও জানিয়েছেন উপদেষ্টা।