সরকারের বেধে দেওয়া দাম খাতা-কলমে; প্রয়োগ নেই বাস্তবে
পবিত্র রমজান মাস শুরুর আগে থেকেই নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি করতে থাকে ব্যবসায়ীরা। পরে বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার মাছ, মাংসসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় ২৯টি পণ্যের দাম বেধে দিলেও তার বাস্তব প্রয়োগ নেই বাজারে। রাজধানীসহ আশপাশের বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তর গত শুক্রবার দাম বেঁধে দিলেও সোমবার (১৮ মার্চ) বাজারে গিয়ে দেখা গেছে আগের দামেই বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। বেশির ভাগই সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে অনেক বেশি দামে খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে।
খুচরা ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, পাইকারি পর্যায়ে পণ্যের দাম না কমলে তাঁদের কমিয়ে বিক্রি করার সুযোগ নেই। এদিকে দাম কমার খবর শুনে বাজারে গিয়ে নির্ধারিত দামে না পেয়ে হতাশ হচ্ছে ভোক্তারা।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্রয়লার মুরগির দাম ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি কেজি ১৭৫ টাকা ৩০ পয়সা নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার, কিন্তু বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২১০ থেকে ২২০ টাকা দরে। সোনালি মুরগি ২৬২ টাকা দর বেধে দিলেও কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩২০ টাকায়।
সবজির বাজারেও একই অবস্থা। সরকার নির্ধারিত ৪৯ টাকা ৭৫ পয়সা দরে বেগুন বিক্রি হওয়ার কথা, কিন্তু খুচরায় ৬০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাঁচা মরিচের দর ৬০ টাকা ২০ পয়সা বেঁধে দেওয়া হয়েছে, বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকায়।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তর জানিয়েছে, তারা উৎপাদন খরচ হিসাব করে তার ভিত্তিতে উৎপাদক, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে পণ্যগুলোর দাম নির্ধারণ করেছে। প্রতিটি পর্যায়ে নির্ধারিত হারে মুনাফা ধরা হয়েছে। আইনটির বিধিমালায় কোন পণ্যে কোন পর্যায়ে কত মুনাফা করা যাবে, তা নির্ধারণ করে দেওয়া আছে।
আমদানিকারক ও পাইকারি শ্যামবাজার পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মাজেদ রবিবার গণমাধ্যমকে জানান, বাজারে সরবরাহ বাড়ানো গেলে সরকারের বেঁধে দেওয়া দরে পণ্য কিনতে পারবে ভোক্তারা। কারণ বাজারে পণ্যের সরবরাহ বাড়লে দাম কমে, আবার সরবরাহ কমলে দাম বেড়ে যায়। এখন বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ার কারণে পাইকারিতে দাম এক সপ্তাহে কেজিতে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা পর্যন্ত কমে গেছে।
ভোক্তাদের অভিযোগ, সরকার ২৯ পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিয়েই দায় সারছে। সরকারের নির্দেশনা বিক্রেতারা যে কেন মানছেন না, সেই বিষয়টি তদারকি করা হচ্ছে না। বরং ঠকে যাচ্ছে ভোক্তারা।
কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, সরকার ২৯ পণ্যের দর নির্ধারণ করে দিয়েছে এটি খুবই ভালো দিক। এই দরে ভোক্তারা পণ্য কিনতে পারলে ভোক্তাদের মধ্যে স্বস্তি নেমে আসবে। তবে এটি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে বাজারে পণ্য সরবরাহ পরিস্থিতির ওপর। সরবরাহ বাড়ানো না গেলে এই নির্ধারিত দরের সুফল ভোক্তারা পাবে না।
তবে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটুর মতে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম যৌক্তিক পর্যায়ে চলে আসবে। এর জন্য সমন্বিতভাবে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, ভোক্তা অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা—সবাই মিলে সমন্বয় করবেন।