৭ লাখ ২৭ হাজার টন পেঁয়াজ কিনে আমদানিতে বিশ্বের ১ নম্বরে বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক
জার্নাল ডেস্ক জার্নাল ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৫:০৭ PM

গত কয়েকদিন ধরে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দামে অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড এক বিজ্ঞপ্তিতে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে— ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার পেঁয়াজ রপ্তানির নীতিতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছে। ২০২৪ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত ভারত থেকে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ থাকবে।

এর পর থেকেই দেশে পেঁয়াজের দাম হু হু করে বাড়তে থাকে। তবে বাংলাদেশের পেঁয়াজ নিয়ে আফসোস আছে ইউরোপীয় দেশ নেদারল্যান্ডসের। তাদের আফসোসের কারণ কয়েকদিন আগে প্রকাশ পেয়েছে তাদের জার্নালে। হল্যান্ড পেঁয়াজ সমিতির জার্নালে কয়েক দিন আগেও লেখা হয়েছে—ভারতীয় পেঁয়াজের কারণে বাংলাদেশের মতো বড় বাজারে ডাচ পেঁয়াজের পুরোনো হিস্যা পুনরুদ্ধার করা যাচ্ছে না।

এদিকে পেঁয়াজ আমদানিতে বিশ্বে ১ নম্বরে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। দেশভিত্তিক পেঁয়াজ আমদানির তথ্য তুলনা করে এই চিত্র পাওয়া গেছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) হিসাবে, ২০২২ সালে বাংলাদেশ ৭ লাখ ২৭ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি করে। ওই বছর আর কোনো দেশ বাংলাদেশের চেয়ে বেশি পেঁয়াজ আমদানি করেনি। 

জাতিসংঘের পণ্যবাণিজ্য পরিসংখ্যানের তথ্যভান্ডার (ইউএন কমট্রেড) অনুযায়ী, ২০২২ সালে বাংলাদেশের পর যে দেশটি সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ আমদানি করেছে, সেটি যুক্তরাষ্ট্র। তাদের আমদানির পরিমাণ ছিল ৬ লাখ ৬০ হাজার টন। এর পরের অবস্থানে ছিল মালয়েশিয়া। তাদের আমদানি সোয়া ৫ লাখ টন।

আমদানিতে ১ নম্বরে থাকলেও পেঁয়াজ উৎপাদনের তালিকায় বিশ্বের শীর্ষ ১০ নম্বরে আছে বাংলাদেশ।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) হিসাবে, পেঁয়াজ উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম, তবে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন দিয়ে চাহিদা মেটানো যাচ্ছে না। ফলে রান্নায় অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের আমদানি বাড়ছে, তবে এই আমদানির পরিমাণ এতটাই যে তা বিশ্বতালিকায় বাংলাদেশকে শীর্ষে নিয়ে গেছে।

পেঁয়াজ আমদানিতে শীর্ষতালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ভবিষ্যতে নড়চড় হবে, এমন কোনো শঙ্কা অবশ্য নেই। কারণ, ২০২৩ সাল শেষ হতে এক মাস বাকি থাকতেই আগের বছরের আমদানির রেকর্ডও ভেঙে গেছে। এনবিআরের তথ্যে দেখা যায়, চলতি বছরের ১১ মাসে পেঁয়াজের আমদানি ৮ লাখ ৬৪ হাজার টন ছাড়িয়ে গেছে। অর্থাৎ ২০২৩ সাল শেষেও আমদানির শীর্ষতালিকায় থাকবে বাংলাদেশের নাম, এমনটা ধরে নেওয়া যায়।

এবার নেদারল্যান্ডসের আফসোসের কারণে ফেরা যাক। ২০১৯ সালের অক্টোবরে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করার পর বাংলাদেশের বাজারে প্রথম আমদানি হয় ডাচ পেঁয়াজ। ২০২০ সালের প্রথমার্ধে হল্যান্ড পেঁয়াজ সমিতি জানিয়েছিল, ওই সময় নেদারল্যান্ডসের পেঁয়াজ রপ্তানিতে শীর্ষ ১২ গন্তব্যের একটি ছিল বাংলাদেশ।

অবশ্য ওই বছরের মার্চে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে দেওয়া নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে। ফলে নেদারল্যান্ডস থেকে মুখ ফিরিয়ে আবার ভারত থেকে আমদানি শুরু করেন এ দেশের পেঁয়াজের ব্যবসায়ীরা। কারণ, সবচেয়ে সহজ ও কম দামে পেঁয়াজ আনা যায় প্রতিবেশী এই দেশ থেকে, যেটি আবার বিশ্বের সবচেয়ে বড় পেঁয়াজ রপ্তানিকারক দেশ। তখন থেকেই ইউরোপের দেশটির আফসোস গাঁথা লেখা হতে থাকে জার্নালের ভার্চ্যুয়াল পাতায়।

তবে ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি নিষেধাজ্ঞায় নেদারল্যান্ডসের পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের আফসোস দীর্ঘস্থায়ী না–ও থাকতে পারে।